জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে উৎসবের শুরুটা হয় নাচে-গানে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অন্য এক বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয় বিদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও উৎসব বিচারকদের সামনে। এভাবেই পর্দা ওঠে ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের।
গানের পর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তব্য দিয়ে। তাঁরা চলচ্চিত্র উৎসবের গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন। তাঁদের মতে, একটি দেশ ও সংস্কৃতি বেড়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন দেশ ও ভাষার সিনেমার অবদান অনেক। সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ছাড়া কোনো দেশই এগোতে পারে না। দেশের দর্শক–নির্মাতাদের বিভিন্ন দেশের সিনেমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠা এ উৎসবে এবার ৭১টি দেশের ১২৯টি ফিচার ফিল্ম, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম ১২৩ প্রদর্শিত হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সিনেমা ৮১টি।
উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল তাঁর সূচনা বক্তব্যে বললেন, ‘কোভিডের মাঝেও আমরা এই উৎসব করেছি। এই আয়োজন করতে আমাদের অনেক বাধা পার করতে হয়েছে। তারপরও নিয়মিত এই আয়োজন করে যাচ্ছি। এবার আন্তর্জাতিক সিনেমার পাশাপাশি বাংলাদেশের নির্মাতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ৯ দিনের এই আয়োজনে এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, শিশুতোষ চলচ্চিত্র, স্পিরিচুয়াল, ওমেন ফিল্মমেকার ও অন্যান্য শাখায় সিনেমা যেমন প্রদর্শিত হবে, তেমনি স্ক্রিন প্লে ল্যাব হবে, সিনেমা নিয়ে কর্মশালা হবে। সব মিলিয়ে বিশাল আয়োজন। থাকবে নানামাত্রিক সিনেমা।’
উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র হচ্ছে প্রবহমান নদীর মতো, যার মাধ্যমে সমাজের দুঃখ-দুর্দশা, পারিবারিক বন্ধন, যুদ্ধ, শান্তি, বিপ্লব, নায়ক-খলনায়ক তথা সংস্কৃতিকে পর্দায় তুলে ধরা হয়। চলচ্চিত্র শুধু চিত্তবিনোদনের মাধ্যম নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইতিহাস ঐতিহ্যের দলিল। সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে মানুষের চিত্তবিনোদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মানুষকে সচেতন ও শিক্ষিত করার অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম চলচ্চিত্র।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বিকাশে রয়েছে আরও এক বর্ণিল ইতিহাস। ৫০–এর দশকে ঢাকায় চলচ্চিত্র নির্মাণের কোনো সুযোগ ছিল না। কোনো বাঙালিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হলে তাকে সিনেমার নেগেটিভ নিয়ে যেতে হতো পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রাদেশিক সরকারের শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা ৩৭ বছরের তরুণ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে ইস্ট পাকিস্তান ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বিল সংসদে উত্থাপন করেন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাস হয়। স্বাধীনতার পরে সেটাই এখন বিএফডিসি নামে পরিচিত।’
অতিথিদের বক্তব্য শেষে উদ্বোধনী সিনেমা হিসেবে দেখানো হয় ফাখরুল আরেফীন খানের জেকে-১৯৭১। এ সময় পরিচালকসহ কলাকুশলীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর একই মিলনায়তনে দেখানো হয় মার্টিন ডুপ্লাকুইট পরিচালিত চিলির সিনেমা ক্যাজাডোরা। ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং বেসামরিক বিমান, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, অভিনয়শিল্পী রোজিনা, সব্যসাচী চক্রবর্তী, নাদের চৌধুরী, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রমুখ।
জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন এবং শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজসহ পাঁচটি স্থানে প্রতিদিন সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে এসব সিনেমা প্রদর্শিত হবে। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করেছে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ।