আলোচনায় ছিলেন একাধিক তরুণ, ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নকে আরও কয়েক ধাপে এগিয়ে নিয়েছেন তাঁরা
আলোচনায় ছিলেন একাধিক তরুণ, ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নকে আরও কয়েক ধাপে এগিয়ে নিয়েছেন তাঁরা

একঝাঁক তরুণের দেখা মিলেছে

বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন একাধিক তরুণ, ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নকে আরও কয়েক ধাপে এগিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম সফল হয়েছে। বাড়ছে ব্যস্ততা। বছরটা তাঁদের জন্য শুভ হয়ে এসেছিল। চোখেমুখে এখন স্বপ্ন ক্যারিয়ার এগিয়ে নেওয়ার। তাঁদের ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েই লিখেছেন মনজুরুল আলম

শৈশবে স্কুল ছুটি থাকলে মা-বাবার সঙ্গে শুটিংয়ে যেতেন দুই ভাই। তখন অভিনয়ের কিছুই বুঝতেন না। শুটিংয়ে তাঁদের নিয়মিত যাওয়া-আসা দেখে দুজন পরিচালক প্রস্তাব দেন, তাঁদের দিয়ে অভিনয় করাবেন। কিন্তু এ কী? দুই ভাইকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে বললেই লজ্জায় জড়সড়। মেকআপ রুমে বসে থাকতেন। লাজুক সেই দুই ভাইয়ের এখন অভিনয়ই ধ্যানজ্ঞান। তাঁরা হলেন দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতি
অভিনয়ে তাঁদের দীর্ঘদিনের পথচলা হলেও করোনার মধ্যে ছুটির সময়টা কাটানোর জন্য হ্যাপি ফ্যামিলি নাটকে অভিনয় করেন। চঞ্চল চৌধুরীর শ্যালকের চরিত্রে প্রশংসিত হন। বলা যায়, সেই প্রশংসা তাঁদের অভিনয়ে নিয়ে আসে। তারপর নাটক, সিনেমা, সিরিজ, বিজ্ঞাপনে নাম লেখাতে শুরু করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ডাবিংয়ের বিরতিতে দিব্যকে পাওয়া গেল। জানা গেল, কাজের চাপ দিন দিন বাড়ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু সেই অর্থে অনেক কাজ করিনি। হয়তো আমরা যমজ ভাই বলে কিছুটা সুবিধা পেয়েছি। একজন কাজ করলে দুজনের প্রচার হচ্ছে। আবার আমাদের মা-বাবার কারণেও হতে পারে। তবে এ বছর যে দর্শকেরা আমাদের ভালোবাসছেন, এটা বুঝতে পারছি।’

মা শাহনাজ খুশি– বাবা বৃন্দাবন দাসে সঙ্গে সৌম্য জ্যোতি ও দিব্য জ্যোতি

দিব্য ও সৌম্যর মা অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। বাবা নাট্যকার বৃন্দাবন দাস। এই দুই তরুণ জানান, বছরটা ক্যারিয়ারের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। দর্শকদের কাছে তাঁরা প্রত্যাশার বেশি প্রশংসা পেয়েছেন। দিব্য জ্যোতি বলেন, ‘আমি মহানগর-২ দিয়ে এ বছর সবচেয়ে বেশি প্রশংসা পেয়েছি। একশ্রেণির দর্শক প্রশংসা করেছেন, যে কারণে অনেক বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। আমার ক্যারিয়ারের জন্য অন্য রকম একটি বছর, হয়তো আর পেছনে তাকাতে হবে না। আগামী বছর আমার অনার্স শেষ হবে। পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকতে হবে। আবার দর্শক যেহেতু চাইছেন, সে জন্য দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে হলেও তাঁদের হতাশ করব না।’
‘আমার কাছে গত বছরও মনে হয়েছিল টার্নিং পয়েন্ট। তখন ইচ্ছা ছিল চলতি বছরকে ছাড়িয়ে যাব। এ বছর সেই পাওয়া আরও অনেক বেশি। প্রথম সিনেমা দুঃসাহসী খোকা এ বছর মুক্তি পেল। প্রথম লিড কাস্টিংয়ে ইন্টার্নশিপ ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছি। দুটো কাজই আমার এ বছরের টার্নিং পয়েন্ট। দর্শকের এত ভালোবাসা কল্পনাও করিনি। মনে হচ্ছে, বছরটা ক্যারিয়ারের অন্য রকম একটি বছর হয়ে থাকবে। আমি প্রতিবছর নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চাই।’ গতকাল ব্যায়ামাগার থেকেই কথাগুলো বলেন সৌম্য জ্যোতি।

তিনি জানান, কাজের জন্য শরীরটাকে নিয়মিত ঠিক রাখতে হয়। আগামী বছর পড়াশোনার চাপ থাকলেও একাধিক সিনেমা ও সিরিজে ইতিমধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। নতুন বছর আরও বেশি ব্যস্ততায় কাটানোর আভাস দিলেন এই তরুণ অভিনেতা।

ঈশান মজুমদার। ছবি: গায়কের সৌজন্যে

ঈশানের বদলে দেওয়া বছর
ঢাকায় বেড়ে ওঠা তরুণ গায়ক ঈশান মজুমদারের পছন্দ গ্রাম। পছন্দ লোকগান। এ বছর শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘নিঠুর মনোহর’ তেমনই একটি গান। এ ছাড়া কোক স্টুডিওর ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’ গানটি তাঁকে শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় করেছে। তিনি জানান, নিজের ইচ্ছায় গানকে ভালোবেসেছেন। পরিবার থেকে সায় ছিল। বড় বোন গান করতেন। তখন থেকেই গুন গুন করে বোনের সঙ্গে গান করা শুরু। পরে ছায়ানটে গান শেখেন। ২০২০ সাল থেকে একটি লোকগানের দলের সঙ্গেও ছিলেন। ঈশানের এখন গান নিয়েই ভাবনা। তিনি জানান, সংগীতের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক সমৃদ্ধ, বাংলাদেশের গানের অনেক ধারা রয়েছে। পুরো পৃথিবী এখন হাতের নাগালে, চাইলেই নিজেদের গান তুলে ধরা যায়। বিশ্বের দরবারে বাংলা সংগীতকে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন ঈশান। তিনি বলেন, ‘আমার গানের জগৎটাকে বদলে দেওয়া একটি বছর। দুটি গান করেছি। দুটি গানই দর্শক গ্রহণ করেছেন। আমার এখন মনে হচ্ছে, সম্ভাবনা দেখছি। গানের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। আমাকে গান নিয়ে আরও বেশি অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। এখন নতুন গানের পরিকল্পনা করছি। সেগুলো এগিয়ে নিতে চাই।’

অনিশ্চিত পথে পা
২০১০ সালে বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে নাম লেখান শাশ্বত দত্ত। শুরুটা ছিল ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্ট হিসেবে। তখন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী। কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করলেও পরে আর সুযোগ হয়নি। ভেবেছিলেন, অডিশন দিয়ে কাজ পাবেন। সেখানেও অর্ধযুগ ধরে ব্যর্থ হতে হয়। তারপরও মনের কোণে জিইয়ে রেখেছিলেন অভিনয়ের বাসনা। আশা নিয়ে ক্যারিয়ার শুরুর ছয় বছর পর সিনেমায় নাম লেখান। সেই সিনেমাও আলোর মুখ দেখেনি। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। বন্ধুরা যখন ক্যারিয়ারে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন, একটু একটু করে সব গোছাচ্ছেন, তখন দিশাহারা এই তরুণ। শুধু তিনিই নন, এই অভিনেতার মা–বাবার চোখেও শঙ্কার ছাপ। তাঁদের একটাই প্রশ্ন, ছেলের ভবিষ্যৎ কী হবে। কিন্তু ছেলেকে কখনোই আটকাননি তাঁরা।

তিন বছর আগে বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে কিছুটা চলার পথ তৈরি হয়। কিন্তু তখনো অভিনয়কে কীভাবে পেশা হিসেবে নেবেন, সেই ভাবনা কাজ করছিল। কারণ, ভবিষ্যৎ অনেকটাই অনিশ্চিত। পরে নাটকে অভিনয় শুরু করেন। এর মধ্যে হঠাৎ করেই এ বছর ক্লোজআপ ওয়ানের একটি নাটকে প্রশংসিত হন। শাশ্বত দত্ত বলেন, ‘নাটকটি প্রচারের পর মনে হলো, অভিনয়টা আমাকে দিয়ে হবে। দর্শকের কাছ থেকেও প্রশংসা পাচ্ছিলাম। এ বছর প্রথম মনে হলো যে অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়া যায়। একটু স্বস্তি পেলাম। এ জন্য আমি পরিচালক সাকিব ফাহাদ ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।’
সেই থেকে একের পর এক কাজে যুক্ত হয়েছেন। সেপ্টেম্বরে তাঁকে দেখা যায় চরকির ওয়েব সিনেমা পুনর্মিলনেতে তাসনিয়া ফারিণের স্বামীর চরিত্রে। মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত এই সিরিজ তাঁর ক্যারিয়ারকে আরও এগিয়ে দেয়। দর্শকের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ান। তাঁর অভিনয় নিয়ে আলোচনা হয়। তারপর ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া অনন্যা নাটকে মেহজাবীন চৌধুরীর বিপরীতে অভিনয় করে আবার

নাটকে শাশ্বত দত্ত ও সাদিয়া আয়মান

আলোচনায় আসেন। এখন সময়টা যেন তাঁর হয়ে উঠছে। একটু সময় নিয়ে সামনের পথে হাঁটতে চান এই তরুণ। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক রোমান্টিক নাটকে কাজ করেছি। সেগুলো থেকে একদমই বের হয়ে অনন্যায় অভিনয় করেছি। দর্শক আমার চরিত্র নিয়ে ভুল বুঝছেন। কেউ কেউ নেতিবাচক মনে করে গালি দিচ্ছেন। এগুলো বেশ উপভোগ করছি। সত্যি বলতে, বছরটা আমাকে শক্তি দিয়েছে যে অভিনয়ে আমার ক্যারিয়ার হতে পারে। তার আগে শুধু স্বপ্নই দেখেছি। এখন আমি ভালো ভালো গল্পে কাজ করে যেতে চাই।’

আরও ভালোবাসা চান আইশা

ক্লোজআপ ওয়ানের ভালোবাসা দিবসের নাটক দিয়েই এ বছর ভক্তদের কাছে সবচেয়ে পরিচিতি পেয়েছেন আরেক তরুণ অভিনেত্রী আইশা খান। কয়েক বছরের ক্যারিয়ারে চলতি বছর এই অভিনেত্রীর কথাই ঘুরেফিরে এল। এবার কাজের প্রশংসা আর দর্শকের ভালোবাসা তাঁকে বিমোহিত করেছে। ক্যারিয়ারে পথচলায় সাহস জুগিয়েছে বছরটা। আইশা বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের দারুণ একটি বছর ছিল এটি। বুঝতে পারছি যে আমার পরিশ্রম সফলতার দিকে যাচ্ছে। আমি অনেক কিছু পেয়েছি। নিজেকে এগিয়ে নিতে পেরেছি। এখন দর্শকেরা আমার কাজ নিয়ে কথা বলছেন, আলোচনা-সমালোচনা করছেন। এই প্রাপ্তি দারুণভাবে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।’

অভিনেত্রী আইশা খান

ক্যারিয়ারে কোনো তাড়াহুড়া নেই আইশার। এমনকি নেই কোনো পরিকল্পনাও। তবে তিনি ভক্তদের ভালোবাসা থেকে বুঝতে পারছেন, তাঁকে আরও বেশি শিখতে হবে। সেই পথেই হাঁটতে চান। আইশা বলেন, ‘পরিকল্পনা করে তেমন কিছু করার ইচ্ছা নেই। তবে আমি প্রতিনিয়ত নিজেকে ভাঙছি। আমি শুধু এটাই চাই, পরিচালকেরা যেসব চরিত্রের প্রস্তাব দেন, সেগুলো যেন ঠিকমতো ফুটিয়ে তুলতে পারি। আমার ওপর যেন পরিচালকেরা চরিত্র দিয়ে ভরসা পান, সেই জায়গায় নিজেকে নিয়ে যেতে চাই। আর এ বছর ভক্তদের অনেক বেশি ভালোবাসা পেয়েছি, আগামী বছরও যেন এই ভালোবাসা পাই। ভালোবাসা পেতে কার না ভালো লাগে!’

‘ধীরে চলো’ নীতিতে বিশ্বাসী বর্ণ
হইচইয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত ইয়াসির আল হকের ওয়েব সিরিজ সাড়ে ষোলো-তে ‘নাতাশা’ চরিত্রে অভিনয় করে এ বছর আলোচনায় আসেন আফিয়া তাবাসসুম। তিনি বর্ণ নামেই পরিচিত। সহকারী ফটোগ্রাফার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরে হঠাৎ করেই নাম লেখান মডেলিংয়ে।

আফিয়া তাবাসসুম

ক্যারিয়ার শুরুর অল্প সময়ের মধ্যে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের পরিচালনায় রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমায় নাম লেখান। কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার মনোনয়ন পাওয়া সেই সিনেমায় ‘অ্যানি’ চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পান বর্ণ। ইতিমধ্যে তিনি মারকিউলিসসহ বেশ কিছু ওয়েব সিরিজ, সিনেমা, নাটক ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। অভিনয়ই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। জানালেন, তিনি ‘ধীরে চলো’ নীতিতে বিশ্বাসী। বর্ণ বলেন, ‘এখন কাজ করার অনেক সুযোগ পাচ্ছি। দেখা যায়, যেসব কাজ দর্শক পছন্দ করেছেন, সেই একই রকম চরিত্রের প্রস্তাব বেশি আসে। তবে পছন্দের চিত্রনাট্যের জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। পছন্দ না হলে যাচ্ছেতাই কাজ করব না। এর মধ্যে ভালো চিত্রনাট্যের কিছু কাজ করছি। আমার অভিনয় করতে ভালো লাগে। সুযোগ পেলে ক্যারিয়ারটা অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই, যে কারণে অনেক সময় নিয়ে অল্প কাজ করছি।’