শৈশব থেকেই টেলিভিশনে অভিনয় করতেন। শুরুটা ১৯৮২ সাল। তখন গানও গেয়েছেন। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘ছোটদের অনুষ্ঠান’। এই আয়োজনে অভিনয়, গান করা। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনার সময়েই মডেলিং শুরু করেন জনপ্রিয় প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ। পরবর্তী সময়ে অডিশনে পাস করেই তিনি নাটকে অভিনয় করেছেন। এই প্রসঙ্গে সালমান শাহর দুর্লভ একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। কৃতাঞ্জলীর ফেসবুকে পেজে থেকে প্রকাশিত ভিডিওটিতে সালমান বলেন, ‘আমিরের “কেয়ামত সে কেয়ামত তক” সিনেমা দেখে যা কল্পনা করেছিলেন, পরে তা-ই হয়েছিল।’
নাটকে তখন প্রায়ই দেখা গেলেও সিনেমায় অভিনয় করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। তখন পর্যন্ত ভাবেননি সিনেমার নায়ক হবেন। হঠাৎ করেই তাঁর সিনেমায় আসা। সিনেমার নাম ছিল ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। কিন্তু এই সিনেমায় কীভাবে অভিনয় শুরু হলো, সেটা সালমানের ভক্তদের অনেকেরই অজানা।
সালমান শাহকে নাটকের পর্দা থেকেই চিনতেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। তাঁর কিছু ছবিও সংগ্রহ করেছিলেন এই পরিচালক। পরে একদিন সোহান ফোন দেন সালমান শাহদের বাসায়। সেদিন কী কথা হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গে এই চিত্রনায়ক ভিডিওতে বলেন, ‘আমার তখন নিয়মিত একটা বিজ্ঞাপন টিভিতে প্রচার হচ্ছিল। তখন সোহান ভাই আমার ছবি দেখে, কোথায় থেকে খবর নিয়ে আমার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। আমি কাজ করব কি না, সেগুলোই জানার চেষ্টা করেন। পরে একদিন বিকেলে ফোন করেন।’
‘পরিচালক আমাকে ফোন দিলেন। তিনি জানালেন, সিনেমা নিয়ে কথা বলতে চান। পরে আমরা দুজন একসঙ্গে বসলাম। তিনি আমাকে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দিলেন। “কেয়ামত সে কেয়ামত তক” হিন্দি সিনেমার বাংলা করবেন। আমি সিনেমাটি করলে তিনি খুশি হবেন।’সালমান শাহ
ফোন দিয়ে পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান নিজের পরিচয় দেন। তিনি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করতে চান, সেটা সালমান শাহকে জানান। সেই ছবির ব্যাপারেই সরাসরি কথা বলতে চান। সেই প্রসঙ্গে সালমান বলেন, ‘পরিচালক আমাকে ফোন দিলেন। তিনি জানালেন, সিনেমা নিয়ে কথা বলতে চান। পরে আমরা দুজন একসঙ্গে বসলাম। তিনি আমাকে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দিলেন। “কেয়ামত সে কেয়ামত তক” হিন্দি সিনেমার বাংলা করবেন। আমি সিনেমাটি করলে তিনি খুশি হবেন।’ হঠাৎ করে প্রস্তাবের কথা শুনেই হেসেছিলেন এই দর্শকপ্রিয় অকালপ্রয়াত নায়ক। সেই সময় কি করা উচিত, তা বুঝতে পারছিলেন না।
সালমান জানান, সেই সময়ে সিনেমা নিয়ে তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আমির খান ও জুহি চাওলা অভিনীত হিন্দি সিনেমাটি তাঁর আগেই দেখা ছিল। সিনেমাটি সালমান শাহর মন ছুঁয়েছিল। অভিনয় গল্প যেন মাথার মধ্যে ঘুরছিল। সিনেমাটি দেখার সময় আমির খানের জায়গায় নিজেকে কল্পনাও করেন। পরে সেটা সত্য হবে, এমনটা হয়তো তিনি আগে ভাবেননি। যে কারণ প্রস্তাবের কথায় খুশি হয়ে হেসেছিলেন সালমান শাহ।
কিন্তু আমির খানের অভিনয় দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছিল। মনে হয়েছিল, এমন চরিত্র যদি করতে পারতাম বা এমন কোনো গল্প আমাকে কেউ দিত। অথবা এই ছবিটাও বাংলাদেশে যদি হতো, আমি যদি সেটাতে অভিনয় করতে পারতাম, তাহলে খুব খুশি হতাম। অভিনয় করে আনন্দ পেতাম।’সালমান শাহ
সালমান শাহ বলেন, ‘প্রস্তাবের পর ভালোই লাগছি। আমি তো ভাবিনি সিনেমা লাইনে আসব, ফিল্মে অ্যাক্টিং করব। টেলিভিশন অভিনয় বা মডেলিং করব, এটাই ভেবেছিলাম। এটা ছিল শুধুই শখ। পেশা হিসেবে সিনেমার কথা ভাবিনি। কিন্তু আমির খানের অভিনয় দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছিল। মনে হয়েছিল, এমন চরিত্র যদি করতে পারতাম বা এমন কোনো গল্প আমাকে কেউ দিত। অথবা এই ছবিটাও বাংলাদেশে যদি হতো, আমি যদি সেটাতে অভিনয় করতে পারতাম, তাহলে খুব খুশি হতাম। অভিনয় করে আনন্দ পেতাম।’
মনের সেই কল্পনার কথা মনেই ছিল। আমির খানের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করার স্বপ্নটা যে এভাবে পূরণ হবে, সেটা কখনোই ভাবেননি এই নায়ক। এটা যেন তাঁর কাছে দৈব ঘটনা। হেসে এই নায়ক বলেন, ‘সেই স্বপ্ন যখন সোহান ভাইয়ের মুখ থেকে শুনি এবং স্বপ্নটা সফল হতে যাচ্ছে দেখে একদিক দিয়ে প্রস্তাব শুনে আনন্দও লাগছিল। আবার সিদ্ধান্ত কী নেব, সেটাও ভাবছিলাম।’
পরে কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যান এই নায়ক। সিনেমাটি করবেন, নাকি ছেড়ে দেবেন। তার আগে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু সিনেমার কথা শুনে শুরুতে তাঁরা রাজি হননি। পরে সালমান শাহর উৎসাহ দেখে আর ছেলেকে না করতে পারেননি। তারপরের গল্প যেন ইতিহাস হয়ে রবে ঢালিউড সিনেমায়। ১৯৯৩ সালে মুক্তির পর তিনি ভক্তদের কাছে হয়ে ওঠেন প্রিয় নায়ক। হয়ে ওঠেন নায়কদের নায়ক। তাঁকে দেখে সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন অনেক তরুণ। এখনো জনপ্রিয় নায়কদের প্রসঙ্গে নিমেষেই চলে আসেন সালমান শাহ। ভক্তদের কাছে তিনি অমর নায়ক। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় তাঁর নায়িকা ছিলেন মৌসুমী।