গুণী অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হলেন আরেক আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান মূকাভিনেতা পার্থপ্রতিম মজুমদার। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতা শৈবাল মিত্র। বাংলাদেশ থেকে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ভারত থেকে শৈবাল মিত্র ও ফ্রান্স থেকে পার্থপ্রতিম মজুমদার অনলাইনে মুখোমুখি হন। ২৯ জুলাই বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাচ্ছে ‘আ হোলি কন্সপাইরেসি’ সিনেমা। সেই সিনেমা নিয়ে আলাপচারিতায় অতিথি হন পার্থপ্রতিম মজুমদার। সিনেমাটির প্রচারণায় উঠে এল সহ–অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, নাসিরুদ্দীন শাহদের সঙ্গে শুটিংয়ে নানা মজার অভিজ্ঞতা ও পার্থপ্রতিমের ব্যক্তিগত জীবন।
পার্থপ্রতিম মজুমদার বলেন, ‘এভাবে আমি আগে কখনো কারও মুখোমুখি হইনি। এবার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ছিল উপস্থাপকের ভূমিকায়, হোস্ট, আমি গেস্ট। তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় দেশের দর্শক আমার অজানা অনেক কিছু জানতে পারবে। বিভিন্ন সময় যে প্রশ্নগুলো তারা জানতে চায়। এই আলোচনায় স্থান পেয়েছে আমার সারা জীবন। যা করেছি সবই। ছোটবেলায় গান করা, পরে মাইম করেছি, ফ্রান্সে এসে কীভাবে মাইমের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে যাই—সবই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। আমার একুশে পদক, ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় পুরস্কার জয়, হলিউডে অভিনয়, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দাপটের সঙ্গে মূকাভিনেতা হিসেবে কাজ করার নানান অভিজ্ঞতা।’
পশ্চিমবঙ্গের হিল্লোল গঞ্জের একটি চার্চের পাদরি প্যাস্টর হেড়ম্বচন্দ্র। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন পার্থপ্রতিম মজুমদার। যিনি আদিবাসী এলাকার মানুষের মধ্যে ধর্মের বাণী ছড়িয়ে দেন। ঘটনাক্রমে সিনেমায় প্রকৃতির নানা প্রসঙ্গ আসে। গল্পে নতুন মোড় নেয়। সাম্প্রদায়িকতা, অসহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতিবাদ নিয়ে সিনেমাটিতে যোগ হয় নতুন চরিত্র সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও নাসিরুদ্দিন শাহ। পার্থপ্রতিম মজুমদার বলেন, ‘নাসিরুদ্দীন শাহ, সৌমিত্র ভারতবর্ষের দুই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেতা। উচ্চ মানের ক্ল্যাসিক ফিল্মে তাঁদের সঙ্গে স্ক্রিন ভাগ করে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, এটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের। সিনেমাটি নিয়ে মুক্তির পর দর্শকদের কী প্রতিক্রিয়া হয়, জানার জন্য অপেক্ষায় রয়েছি।’
২৯ জুলাই ভারতসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে ছবিটি মুক্তির কথা রয়েছে। জানা গেল, সিনেমাটির সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিবিউটর। শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে পার্থপ্রতিম মজুমদার এর আগে বলেছিলেন, ‘একদিন সন্ধ্যায় হাওড়ার পাশের একটি চার্চে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি দৃশ্যের শুটিং ছিল। শুটিংয়ে সেদিন তিনি আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন, আমার বাড়িতে এসো। আমি কিন্তু আর বাঁচব না। দিনটি ছিল ২০১৯ সালের ২১ মে। বিদায় নেওয়ার সময় তিনি আবার বলেছিলেন, আর দেখা না হলে এটাই আমাদের শেষ দেখা, ভালো থেকো। পরে দ্রুত কাজ শেষে করেও সময়ের অভাবে আমাদের আর দেখা হয়নি। ঘটনাটা এখনো আমাকে কষ্ট দেয়।’
বিখ্যাত মার্কিন নাটক ‘ইনহেরিট দ্য উইন্ড’ অবলম্বনে সিনেমাটির গল্প। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই মূকাভিনয়শিল্পী ২০১১ সালে ফরাসি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সেরা সম্মান ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন। মূকাভিনয়ের পাশাপাশি তিনি মঞ্চ ও বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রেও অভিনয় করছেন। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশে পরিচিত হয়ে ওঠে মূকাভিনয়। তাদের আলাপচারিতা ‘আ হোলি কন্সপাইরেসি’, শৈবাল মিত্রের ফেসবুক পেজ থেকে আজ রাত ৮টায় প্রচার হয়েছে।