হ্যালোউইন উৎসবে হরর সিনেমা দেখার চল আছে। প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর পালন করা হয় হ্যালোউইন উৎসব। এ উপলক্ষে জেনে নেওয়া যাক ১০টি নানা স্বাদের বাংলা হরর সিনেমা ও সিরিজের খবর।
‘আধুনিক বাংলা হোটেল’, চরকি
চরকি অরিজিনাল সিরিজ ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’ মুক্তি পেয়েছে হ্যালোউইন উপলক্ষে। এতে অভিনয় করছেন জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। সিরিজটি নির্মাণ করেছেন তরুণ নির্মাতা কাজী আসাদ। বাংলা সাহিত্যে নানা কিসিমের ভূতের অভাব নেই। নানা স্বাদের তেমনই কিছু বাংলা ভূতের স্বাদ নিয়ে আসছেন মোশাররফ করিম। শরীফুল হাসানের ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মাতা আসাদ নিজেই করেছেন ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’-এর চিত্রনাট্য। লেখকের ‘খাসির পায়া’ ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘খাসির পায়া’, ‘হাঁসের সালুন’ তৈরি হয়েছে ‘নো এক্সিট’ গল্প থেকে। আরেকটি পর্ব ‘বোয়াল মাছের ঝোল’ নির্মিত হয়েছে ‘খাবার’ গল্প থেকে।
তিনটি গল্পে তিনভাবে হাজির হবেন মোশাররফ করিম। অভিনেতা জানান, খাবারের নাম দিয়ে যে এমন সব গল্প হতে পারে, এটা তাঁর ভাবনায়ই ছিল না। তাঁর দাবি, দর্শক সিরিজটি দেখে বিস্মিত হবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নামগুলো দেখে গল্পের ভেতর কী খেলা আছে, বোঝার উপায় নেই। খুবই স্বাভাবিকভাবে শুরু হওয়া একটা গল্প, কীভাবে যে অন্য একটা পর্যায়ে চলে যায়, দেখার পর টের পাবেন দর্শক।
‘পেটকাটা ষ’, চরকি
২০২২ সালের এপ্রিলে চরকিতে মুক্তির পর ব্যাপক আলোচিত হয় নুহাশ হুমায়ূনের ‘পেটকাটা ষ’। ‘এই বিল্ডিংয়ে মেয়ে নিষেধ’, ‘মিষ্টি কিছু’, ‘লোকে বলে’ ও ‘নিশির ডাক’ নামের পর্বগুলো দেশে-বিদেশে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়। ভূতের সিরিজের নাম ‘পেটকাটা ষ’ কেন? এমন প্রশ্নে নির্মাতা নুহাশ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘মূর্ধণ্য ষ-কে আমরা সবাই ছোটবেলা থেকে পেটকাটা ষ বলি। কেউ বাংলা ভাষা শিখলেই এই অক্ষরকে পেটকাটা ষ বলেও চেনে। কিন্তু কেন? কোনো বাংলা বই বা কোথাও পেটকাটা ষ লেখা নেই। আমার কাছে এটা খুবই ভৌতিক ও অদ্ভুত নাম মনে হয়েছে। কেমন করে যেন লোকমুখে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জিনিসটা খুব পরিচিত হয়ে গেছে।’
এই নির্মাতা আরও বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছিল, ভূতের গল্পগুলোও একই রকম। কোথাও লেখা নেই। পুরোটাই লোককথা। কিন্তু মুখে মুখে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে গেছে। তাই ফাইনালি, পেটকাটা ষ-কে পেটকাটা ষ-ই বলতে চাই; লিখতে চাই। আর ভূতের গল্পগুলো আমার মতো করে আধুনিকভাবে একত্র করতে চাই।’
আলোচিত এই সিরিজে অভিনয় করেছিলেন আফজাল হোসেন, চঞ্চল চৌধুরী, কাজী নওশাবা আহমেদ, সোহেল মন্ডল, শিরিন শিলা, একরাম খান ইমু প্রমুখ।
‘ভূতের ভবিষ্যৎ’, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও
২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া অনীক দত্তের এই সিনেমা শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, বাংলাদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সিনেমাটির গল্প ছিল একটি পুরোনো ভগ্নদশা বাড়ি নিয়ে, যেখানে থাকে বেশ কিছু ভূত। সারা শহরের সব পুরোনো বাড়ি ভেঙে তৈরি হচ্ছে শপিং মল। ভাঙা পড়েনি এই একটাই।
আর তাতেই আস্তানা গেড়েছে ভূতের দল। তবে সুখ ছিল না বেশি দিনের। বাড়িটি নজরে পড়ে এক প্রোমোটারের। উদ্দেশ্য ছিল, বাড়িটি ভেঙে বহুতল মাল্টিপ্লেক্স তৈরি করা। সেই ভূতেরা কি বাড়িটা বাঁচাতে পারবে? এ নিয়েই গল্প। সিনেমাটিতে মীর আফসার আলী, পরমব্রত চ্যাটার্জি, সব্যসাচী চক্রবর্তী, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বস্তিকা মুখার্জির অভিনয় মন ছুঁয়ে যায় দর্শকদের।
‘গয়নার বাক্স’, হইচই
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে অপর্ণা সেন তৈরি করেন ‘গয়নার বাক্স’। এতে অভিনয় করেছেন কঙ্কণা সেন শর্মা, মৌসুমি চ্যাটার্জি, শাশ্বত চ্যাটার্জি প্রমুখ। এই হরর-কমেডি সিনেমা সে সময় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। সিনেমার গল্প দুই নারীকে নিয়ে। কঙ্কণা সেন শর্মার নতুন বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়িতে আসতেই শাশুড়ি তাকে দেয় একটি গয়নার বাক্স। তবে এই গয়নার বাক্স একেবারেই তাকে মন থেকে দেয়নি তার শাশুড়ি। মৃত্যুর পরই বিষয়টি সামনে আসে। মারা যাওয়ার পর শাশুড়ির ভূত এসে বিভিন্নভাবে কঙ্কনাকে অতিষ্ট করতে থাকে। তার দাবি, সে ওই গয়নার বাক্স ফেরত চায়। সে কি শেষে বাক্সটি পায়?
‘মণিহারা’, ইউটিউব
সত্যজিৎ রায়ের ‘তিনকন্যা’র মধ্যে একটি গল্প ‘মণিহারা’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয় সিনেমাটি। একজন স্কুলশিক্ষক শুরু করেন গল্পটি বলা। গল্পটি ছিল এক জমিদারকে নিয়ে। তার স্ত্রী মণিমালিকার সোনার গয়নার প্রতি ছিল প্রবল আকর্ষণ। একসময় স্বামীর টাকাপয়সার সমস্যা হতেই সে তার সেই শখের গয়না দিয়ে দেয় স্বামীকে। তার পর থেকে আর মণিহারাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। সেই জমিদার স্ত্রীর কষ্টে তার জন্য কিনে আনে নতুন এক গয়নার বাক্স, যাতে সে ফিরে আসে। কিন্তু ঠিক সে সময়ই শোনা যায় মণিমালিকার কণ্ঠে এক সাংঘাতিক হাড় হিম করা হাসি। শেষে দেখা যায়, যে গল্প বলছে সে আর কেউ নয়, সেই জমিদারই। কেন বা কীভাবে তার স্ত্রী হারিয়ে গিয়েছিল, তা নিয়েই এই গল্প। ভূত ও থ্রিলারের সংমিশ্রণে তৈরি সিনেমাটি।
‘কঙ্কাল’, ইউটিউব
১৯৫০ সালে নরেন্দ্র মিত্রর পরিচালনায় এই সাদাকালো সিনেমা বেশ সাড়া ফেলেছিল। অভিনয়ে ছিলেন পরেশ ব্যানার্জি, মলয়া সরকারর মতো অভিনয়শিল্পীরা। গল্পটি শুরু হয় তরলা ও বড়লোক বাড়ির ছেলে রতনের বিয়ে নিয়ে। কিন্তু বিয়ের পর তরলার জীবনে ফিরে আসে পুরোনো প্রেমিক অভয়। তরলা অভয়কে বিয়ে করেনি, কারণ ছেলেটির টাকাপয়সার অভাব ছিল। তাই তরলার বিয়ের পর অভয় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তরলাকে ধর্ষণ করতে যায়। কিন্তু এতেই ঘটে বিপদ, মৃত্যু হয় তরলার। অভয় তরলাকে ফেলে দেয় নদীর জলে। এরপরই মৃত্যুর পর ফিরে আসে তরলা এবং ঘটতে থাকে নানা ধরনের অলৌকিক ঘটনা।
‘বল্লভপুরের রূপকথা’, ডিজনি প্লাস হটস্টার
ভূপতি রায় তাঁর ৪০০ বছরের পুরোনো ভুতুড়ে বাড়ি বিক্রি করে দিতে চায়। এমন কিছু খদ্দেরও পায়, যারা ভুতুড়ে বাড়ি পছন্দ করে। কিন্তু তখনই এসে হাজির হয় বেশ কিছু ভূত, যারা এই বাড়ি বিক্রি করতে দেয় না। অনির্বাণ ভট্টাচার্য পরিচালিত এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন সত্যম ভট্টাচার্য, সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। ছবিটি রেনে ক্লেয়ারের লেখা ‘দ্য ঘোস্ট গোজ ওয়েস্ট’ গল্প থেকে অনুপ্রাণিত।
‘কুহেলি’, হইচই
তরুণ মজুমদারের সিনেমাটিতে অভিনয় করেন শুভেন্দু চ্যাটার্জি, সন্ধ্যা রায়, বিশ্বজিৎ প্রমুখ। গল্পটি এগোয় একটি গ্রাম নিয়ে। নিঝুমগড় নামক এক গ্রামে এক বড় বাড়িতে কাজ করতে যায় সেবা। সেখানে গিয়ে জানতে পারে, এই বাড়িতে সাত বছর আগে হয়েছিল দুটো খুন। সেই খুনের চিহ্ন এখনো এ বাড়ি ও বাড়ির লোকেদের মনে গেঁথে আছে। সেই মৃত্যু নিয়েই শুরু হয় নানা অদ্ভুত ঘটনা। সিনেমার মিউজিকও ছবির গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হয়েছে, যা শুনলেই শিহরণ জাগে।
‘যেখানে ভূতের ভয়’, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও
সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায়ের তৈরি এই সিনেমা নির্মিত হয়েছে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সত্যজিতের ছোটগল্প অবলম্বনে। বেশ অন্য ধরনের ভয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী প্রমুখ।
‘ড্রাকুলা স্যার’, হইচই
দেবালয় ভট্টাচার্যের পরিচালনায় অনির্বাণ ভট্টাচার্য অভিনীত এই সিনেমা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ঘরানার। তবে গল্পের প্রেক্ষাপট আর নির্মাণের কারণে সিনেমাটি হ্যালোউইনের আবহের সঙ্গে ভালোই যায়। গল্পটি স্কুলের বাংলার শিক্ষক অনির্বাণকে ঘিরে। হাসলেই দুপাশে দুটো গজ দাঁত বেরিয়ে আসে তার। ভ্যাম্পায়ারের চেয়ে কম ভয়ের কিছু লাগে না তাকে দেখতে। তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টায় ধীরে ধীরে সে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে ওঠে। সে এই যুগ আর সত্তরের দশকের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে ফেলতে থাকে। সত্যি-মিথ্যে, ভূত-ভবিষ্যৎ সব তার গুলিয়ে যায়। সে কি শেষে নিজেকে খুঁজে পায়? এ–ই নিয়েই গল্প।