দেশের বিনোদন অঙ্গনের জন্য ১৯৯৯ সালটি ছিল বিশেষ। সেবারই প্রথম বছরজুড়ে প্রচারিত টেলিভিশন নাটক, মুক্তি পাওয়া সিনেমার কলাকুশলীদের মূল্যায়ন করতে যাত্রা শুরু করে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার। এই আয়োজনে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় উপস্থাপনা। এমনকি এই আয়োজনে নজর কাড়েন সঞ্চালকের সহকারীও। এই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী বছরগুলোতেও আয়োজকদের পক্ষ থেকে সঞ্চালকের সহকারীদের গুরুত্ব দিয়ে আয়োজনে যুক্ত করা হতো। এসব তরুণ অভিনয়শিল্পী পরবর্তী সময়ে মিডিয়া অঙ্গনে ডানা মেলেছেন।
১৯৯৯ সালে প্রথম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের দিকে চোখ ছিল দেশের বিনোদন অঙ্গনের মানুষদের। কে হচ্ছেন কান্ডারি, এটা নিয়ে কৌতূহল ছিল সবার মনে। চমক হিসেবে উপস্থাপনার দায়িত্ব নিয়ে সামনে আসেন ছোট পর্দার নন্দিত জুটি আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফা। সেই আসরে এই জুটির সহকারী ছিলেন অভিনেত্রী রুমানা রশিদ ঈশিতা। তিনি সে সময় তরুণ অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় ছিলেন।
সেই আয়োজনে উপস্থাপকের সহযোগী হিসেবে দিনটি ছিল অভিনেত্রী ঈশিতার কাছে মনে রাখার মতো। দীর্ঘদিন পরও বিশেষ সেই দিনের কথা এখনো স্মরণে রয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘দেখতে দেখতে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের ২৫ বছর হয়ে গেল। প্রথম সেই আয়োজন আমাদের জন্য একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। সবার কাছেই এমন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ দারুণ প্রশংসনীয় হয়েছিল। প্রথমবার উপস্থাপনায় ছিলেন আফজাল আঙ্কেল ও সুবর্ণা মুস্তাফা। আমি তাঁদের সহকারী হিসেবে মঞ্চে ছিলাম। আমি কিন্তু কোনো পারফর্ম করিনি। জনপ্রিয় দুই মুখ আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে মঞ্চে হাঁটছি, ভাগাভাগি করে নিচ্ছি, এটা নিয়েই দারুণ উচ্ছ্বসিত ছিলাম।’
পরের বছর সঞ্চালকের সহকারী ছিলেন তিরু। তৃতীয় আসর বসে ২০০০ সালে। আড়ম্বরপূর্ণ এই পুরস্কার আয়োজন অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের সহকারী ছিলেন মেহের আফরোজ শাওন ও ইভা। মেরিল–প্রথম আলোর এই আয়োজনে কখনো সঞ্চালকের সহকারী একজন, কখনো দুজন থাকতেন। তৃতীয় আয়োজন থেকে এটি শুরু হয়। চতুর্থ আয়োজনে সঞ্চালকের পাশে ছিলেন সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি। পরবর্তী বছর সুমাইয়া শিমু আলোচনায় আসেন সহকারী সঞ্চালক হিসেবে পাশে থেকে।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি আয়োজনে গুরুত্ব দিয়ে খোঁজা হতো উপস্থাপকের সহকারীকে। এ জন্য একটি আয়োজন শেষ হলেই তরুণ মেধাবী অভিনয়শিল্পীদের দিকে চোখ থাকত। বেছে নেওয়া হতো উঠতি ও নতুন করে আলোচনায় আসা সম্ভাবনাময় শিল্পীদের। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে এসব তরুণ পরবর্তীকালে নিজেকে আরও বেশি করে অভিনয় অঙ্গনে প্রকাশ করার সুযোগ পেতেন।
এই আয়োজনে পরবর্তী পাঁচ বছর সহকারী হিসেব মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মঞ্চে ছিলেন অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ও সুজানা জাফর, অভিনেত্রী শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি ও গায়িকা তিশমা। দ্বিতীয়বারের মতো তিশা সহকারী সঞ্চালক হয়ে মঞ্চে ওঠেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মোনালিসা, এরপর সাদিয়া জাহান প্রভা ও সোহানা সাবা এবং দশম আয়োজনে ছিলেন আফসানা আরা বিন্দু ও আজমেরী হক বাঁধন।
২০০৮ সালে মেরিল–প্রথম আলোর দশম আয়োজনে উপস্থাপকের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালে মিডিয়ায় কাজ শুরু করি। তার দুই বছর পর আমি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। উপস্থাপকের সঙ্গে তাঁদের সাহায্য করার জন্য ছিলাম আমি আর বিন্দু। সেবারই আমি জীবনের প্রথম সামনে থেকে আনিসুল হককে দেখি। তিনি অনেক পছন্দের মানুষ ছিলেন। সেবার আমি তাঁর সঙ্গেই শুধু ছবি তুলেছিলাম। পরবর্তীকালে তিনি আমাদের মেয়র হয়েছিলেন। এই আয়োজনে অনেক তারকাকে কাছ থেকে প্রথমবার দেখি। এটা আমার জন্য অনেক স্মরণীয় স্মৃতি। তখনো আমি সেভাবে কাজ শুরু করিনি। পরে তো ব্যস্ততা বাড়ল। তার পর থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেতাম। মিডিয়ার একটা অংশ হয়ে গেলাম।’
পরবর্তী সময়ে নওশীন নাহরীন মৌ, নাজিয়া হক অর্ষা, মৌনিতা খান ইশানাসহ আরও অনেকেই উপস্থাপকের সহকারী হিসেবে অংশ নেন। শেষ মেরিল–প্রথম আলো উপস্থাপনা করেন চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ এবং অভিনেতা ও গায়ক প্রীতম হাসান। তাঁদের সঙ্গে মঞ্চে সহকারী হিসেবে ছিলেন অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনী ও প্রিয়ন্তী উর্বী।