ঘড়ির কাঁটা তখন রাত নয়টার ঘরে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চলছিল বাংলাদেশ ও ভারতের ক্রিকেট খেলা। ঢাকার রাস্তা তাই অনেকটাই ফাঁকা। অনেকেই টিভি সেটের সামনে, কেউবা মাঠে বসে মনোযোগ দিয়েছেন খেলায়। এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তখন চলছিল বাংলাদেশের নির্মাতা হাসিবুর রেজা কল্লোল পরিচালিত ‘সত্তা’ ছবির শুটিং। এই শুটিংয়ে অংশ নেন ভারতের আলোচিত অভিনেত্রী পাওলি দাম। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে পাওলি জানালেন, ‘সত্তা’ ছবির জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অংশ নেওয়া শুটিং-মুহূর্ত তাঁর অনেক দিন মনে থাকবে।
‘সত্তা’ ছবির এবারের শুটিংয়ে অংশ নিতে গতকাল বুধবার ঢাকায় আসেন পাওলি। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে গাড়িতে চড়ে হোটেলে যাওয়ার পথে কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
পাওলি বলেন, ‘শুটিংয়ে অংশ নিতেই আবারও ঢাকায় এলাম। কয়েক দিন থাকব। অবশ্য এ যাত্রায় পুরো কাজটি শেষ হবে না।’
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সে রাতেই শুটিংয়ে অংশ নেন পাওলি। পাওলি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অংশ নেওয়া শুটিং-মুহূর্তগুলো তাঁর মধ্যে বাড়তি ভালো লাগার জন্ম দিয়েছে।
শুটিং শেষে প্রথম আলোকে পাওলি দাম বলেন, ‘“সত্তা” ছবির শুটিংয়ের জন্য এর আগেও দুইবার বাংলাদেশে এসেছিলাম। প্রতিবারই শুটিংয়ের বাইরে কোনো না-কোনো জায়গায় যাওয়ার একটা ইচ্ছে মনের মধ্যে ছিল। বিশেষ করে ফরিদপুর, যশোর, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার। কিন্তু কোনোটিতে আমার যাওয়া হয়নি। গতকাল কল্লোল যখন আমাকে বলেছিল যে শহীদ মিনারে শুটিং হবে, তখন মনটা আনন্দে ভরে উঠেছিল।’ তিনি বলেন, ‘তবে এই শুটিং যদি একুশে ফেব্রুয়ারি হতো, তাহলে আরও বেশি ভালো লাগত।’
একুশে ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতো, ছোটবেলা থেকেই এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন বলেও জানান পাওলি। তিনি বলেন, ‘আমার মা একটি এনজিওর সঙ্গে যুক্ত, পাশাপাশি বাংলা গানের একটি দলের সঙ্গেও আছেন। নিজেও গান করেন। আমার দাদুরও কিন্তু একটা মিউজিক্যাল গ্রুপ ছিল। ছোটবেলা থেকে একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের ওখানে নানা অনুষ্ঠান হতো। আমি নিজেও অংশ নেয়েছি। সেভাবে একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে কী হয়, তা জানতে পেরেছি।’ পাওলি বলেন, ‘আর তাই কোনো একবার সুযোগ পেলে সরাসরি অংশ নেওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। হলো না। তবে সবকিছুর পরও তো যেতে পারলাম। শহীদ মিনারের মূল বেদিতে ওঠার আগে যখন একেকটা সিঁড়ি পার করছি, তখন কেন জানি আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। সত্যি এ এক অদ্ভুত অনুভূতি।’
পাওলি দাম বলেন, ‘আমরা যে স্বাধীন দেশে বাস করছি—এর পেছনে অনেক মানুষের কষ্ট আর ত্যাগ জড়িয়ে আছে। আমাদের স্বাধীন দেশে বাস করার আনন্দ দেওয়ার জন্য অনেক মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছেন। বিষয়গুলো ভাবলেই অন্য রকম লাগে। বাংলাদেশের মানুষকে বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের জন্যও অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে; যা পৃথিবীর ইতিহাসে খুব বিরল। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে তাই তো বাংলাদেশের লাখো লাখো মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।’
বাংলাদেশের আরেকটি বড় উৎসবে অংশ নেওয়ার ইচ্ছের কথাও জানান পাওলি দাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ছবির আরেকটা লটের শুটিং বাকি আছে। আমি কল্লোলকে বলেছি, সেটা যেন সে পয়লা বৈশাখে করে। আমি নিজে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখের আনন্দটা উপভোগ করতে চাই। দেখা যাক কী হয়।’