সাক্ষাৎকার

'মাটির ময়না' থেকে 'শিকলবাহা', 'অন্যদিন'-এ...

কয়েক বছর আগে ফ্রান্সের ফেস্টিভ্যাল অব থ্রি কন্টিনেন্টসে ফরাসি প্রযোজক দমিনিকের সঙ্গে বসেছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন। তাঁদের কথা হয় তারেক মাসুদ, মাটির ময়না প্রসঙ্গে। ফরাসি প্রযোজনা সংস্থা এমকেটু-র ডেলিগেট প্রডিউসার ছিলেন দমিনিক। অন্যদিকে কাগজের ফুল-এ তারেকের প্রধান সহকারী ছিলেন কামার। কানে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটের ওপেনিং প্রোগ্রাম ফ্যাক্টরির মূল পরিকল্পনাকারী দমিনিক। কান মার্কেট, লোকার্নো ওপেন ডোরসের উপদেষ্টা, ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন মাইকেল হানেকে, আব্বাস কিয়েরোস্তামির মতো নির্মাতাদের সঙ্গে। সেই দমিনিক এখন বাংলাদেশে। চষে বেড়াচ্ছেন মানিকগঞ্জ থেকে মোরেলগঞ্জ, লোকেশন থেকে লোকেশনে। উদ্দেশ্য সারা আফরীনের প্রযোজনায় কামার আহমাদের নির্মিতব্য দুই ছবি শিকলবাহা, অন্যদিন। দুটি ছবিরই প্রযোজক দমিনিক। তাঁর মুখোমুখি হয়েছিলেন পরিচালক কামার আহমাদ সাইমন

দমিনিক
দমিনিক

কামার: প্যারিসে আপনি ‘মাটির ময়না’ ও তারেক মাসুদ নিয়ে বেশ কিছু কথা বলেছিলেন।

দমিনিক: প্রথম যখন মাটির ময়নারচিত্রনাট্য পড়ি, তখন বাংলাদেশ বা তারেক সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। চিত্রনাট্যটি আমার পছন্দ হয়েছিল। আরও বেশি জানতে মন চাইছিল। ঠিক করলাম মাটির ময়নায়কাজ করব। তারপর যখন তারেক ও ক্যাথরিনের সঙ্গে দেখা হলো, ওরা এমকেটু-র অফিসে এসেছিল, আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম তারেকের ভাবনা, জেদ আর ধৈর্য দেখে। তারেককে দেখে মনে হচ্ছিল, আমি যেন তাকে চিনি। সে যেন আমার আপন ভাই।

কামার: আর ‘মাটির ময়না’ দেখার পর?

দমিনিক: প্যারিসের এক ভারতীয় রেস্তোরাঁয় প্রথম আমরা একসঙ্গে ডিনারে বসেছিলাম। সেটা সম্পাদনার সময়ের কথা, কানে ছবির প্রথম প্রদর্শনী। এখনো মনে আছে আমার। স্ক্রিপ্টটা পড়ার সময়ই আমি অনেক কিছু ভেবে রেখেছিলাম। পরে কানের ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে যখন ছবিটি দেখানো হচ্ছিল, পুরো সময়টা আমি কেঁদেছি।

কামার: ‘শিকলবাহা’র সঙ্গে যোগ হওয়ার গল্পটা বলেন।

দমিনিক: কয়েক বছর আগের কথা। আমি তখন নন্তে ফেস্টিভ্যাল অব থ্রি কন্টিনেন্টসের একজন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছি। আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকা, এই তিন মহাদেশের শ্রেষ্ঠ ছবি আর নির্মাতাদের নিয়ে প্রায় চার দশক ধরে ফ্রান্সের পশ্চিম সৈকতের বন্দর শহর নন্তে বসছে এই বৈঠকি উৎসব। সেখানে একটা স্ক্রিপ্ট পেলাম। শিকলবাহার তখন নাম ছিল শঙ্খধ্বনিমাটির ময়নারপ্রায় ১৫ বছর পর, আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল, আমি আবার বাংলাদেশকে দেখতে পাচ্ছি। সেখানেই প্রথম পরিচয় হয় তোমার আর সারার সঙ্গে। তারেকের কথা বলতে সবার চোখ ঝাপসা হয়ে উঠল। কেঁদেছিলাম অনেকক্ষণ। এরপর কানে লা ফ্যাব্রিক সিনেমা দ্যু মুন্দ যখন ১০টা চিত্রনাট্যের মধ্যে শিকলবাহাকে নির্বাচন করল, আমি তখন শিকলবাহায় কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

আমার কাছে একটা ব্যাপার অদ্ভুত মনে হয়। এখানে নির্মাতাদের কাছে একটার পর একটা ছবি আশা করা হয়। বাণিজ্যিক ছবির ধারাটা আলাদা। কিন্তু সারা পৃথিবীতে ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকাররা এভাবে ছবি বানান না। তাঁরা ছবি বানান সময় নিয়ে। এ বছর আমার প্রযোজিত একটি ছবি ছিল ভেনিসে, আলিরেজা খাতামির অবলিভিয়ন ভার্সেস। সেখানে দুটো পুরস্কারও পেয়েছে ছবিটি। ছবিটা বানাতে প্রায় সাত বছর লেগে গিয়েছিল।

কামার: ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটের ফ্যাক্টরি প্রসঙ্গে কিছু বলবেন?

দমিনিক: পাঁচ বছর ধরে কানের ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট উদ্বোধন হচ্ছে ফ্যাক্টরির ছবিগুলো দিয়ে। প্রত্যেক বছর একটি নতুন দেশের চারজন নবীন পরিচালকের সঙ্গে চার ভিনদেশি পরিচালক মিলে তৈরি করে চারটি ১৫ মিনিটের শর্ট ফিল্ম। আমি দেখতে চাইছিলাম সিনেমার ভাষা আসলেই সর্বজনীন কি না। দুটি ভিনদেশি পরিচালক যদি একসঙ্গে একটি স্ক্রিপ্টে কাজ করেন, তাহলে সেটা চলচ্চিত্রে নতুন কোনো বোঝাপড়া তৈরি করে কি না। এখন পর্যন্ত তাইওয়ান, দক্ষিণ আফ্রিকা, চিলি, নর্ডিক আর লেবানিজ ফ্যাক্টরি। আগামী বছর হচ্ছে তিউনিসিয়ায়।

কামার: কানে বাংলাদেশের ফ্যাক্টরি কবে হবে?

দমিনিক: এটা তাঁরা ভালো বলতে পারবেন। বাংলাদেশে ফ্যাক্টরি তাঁরা প্রডিউস করবেন।

কামার: বাংলাদেশের কোন জিনিস ভালো লেগেছে?

দমিনিক: বাংলাদেশের নদীর রূপ দেখেছিলাম মাটির ময়নার নৌকাবাইচে, আর এবার দেখলাম সামনাসামনি। শিকলবাহা বা অন্যদিন-এর জন্য। এ ছাড়া মাটির ময়না থেকে শিকলবাহা এই শিরোনামে দুটি টক দিয়েছি এখানে। তোমাদের দেশটা খুব সুন্দর, মানুষও খুব সুন্দর।