বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিকের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৫০ জন শিল্পীর মধ্যে ১৩ জনই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া। বিএফডিসি থেকে প্রকাশিত শিল্পীদের তালিকা ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এ তথ্য।
ছবির নাম ‘বঙ্গবন্ধু’, পরিচালনা করছেন শ্যাম বেনেগাল। ‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিকে নামভূমিকায় অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করবেন অভিনেতা আরিফিন শুভ। এ অভিনেতা ২০১৯ সালে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কার পান।
গাজী রাকায়েত ‘অনিল বাগচীর একদিন’ ছবিতে অভিনয় করে সেরা পার্শ্বচরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ২০১৫ সালে। এর আগে ২০১৩ সালে ‘মৃত্তিকা মায়া’ ছবি নির্মাণ করে পেয়েছেন সেরা নির্মাতাসহ পাঁচটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এই অভিনেতা ও নির্মাতা ‘বঙ্গবন্ধু’ ছবিতে রেনুর দাদার ভূমিকায় অভিনয় করবেন। তাঁর চরিত্রের নাম আবদুল হামিদ। রেনু হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
এই ছবিতে প্রবীণ অভিনেত্রী দিলারা জামানকে দেখা যাবে সায়েরা খাতুন চরিত্রে। দিলারা জামান ২০০৮ সালে ‘চন্দ্রগ্রহণ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্বচরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০০১ সালে ‘মেঘলা আকাশ’ ছবিতে খল চরিত্রে এবং ‘বৃত্তের বাইরে’ ছবিতে সেরা পার্শ্বচরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শহীদুল আলম সাচ্চু। ‘বঙ্গবন্ধু’ চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করবেন এ কে ফজলুল হকের চরিত্রে।
চারবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান রাইসুল ইসলাম আসাদ। এই অভিনয়শিল্পী প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ১৯৯৩ সালে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য। দুই বছর পর ‘অন্য জীবন’ এবং ১৯৯৭ সালে ‘দুখাই’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য আবার একই পুরস্কার অর্জন করেন। ২০০১ সালে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ‘লালসালু’ ছবির জন্য চতুর্থবারের মতো ঘরে তোলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার। ‘বঙ্গবন্ধু’ ছবিতে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর চরিত্রে অভিনয় করবেন রাইসুল ইসলাম আসাদ।
‘বাবা জানো? আমাদের একটা ময়না পাখি আছে না, সে আজকে আমার নাম ধরে ডেকেছে’—এই সংলাপ শোনেনি এমন মানুষ পাওয়া ভার। সংলাপটি দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন শিশুশিল্পী প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। পরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনবার শিশুতোষ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে রেনু অর্থাৎ বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের শৈশবের অংশে দেখা যাবে দীঘিকে।
ছোট পর্দা ও বড় পর্দা—দুই মাধ্যমেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। ‘বঙ্গবন্ধু’ ছবিতে শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী রেনুর ভূমিকায় অভিনয় করবেন এই অভিনেত্রী। ‘অস্তিত্ব’ ও ‘হালদা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পরপর দুবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিশা। খোন্দকার মোশতাক আহমেদের চরিত্রে অভিনয় করবেন অভিনয়শিল্পী ফজলুর রহমান বাবু। তিনিও তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।
তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে অভিনয় করবেন নায়ক ফেরদৌস আহমেদ। তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবি দিয়ে । তাঁর অভিনয়জীবনে আরও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আছে। মোট চারটি ছবিতে সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ফেরদৌস।
‘গেরিলা’ ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য দেশের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শতাব্দী ওয়াদুদ। তাঁকে এই ছবিতেও পাকিস্তানি আর্মির চরিত্রে দেখা যাবে। বয়স্ক এক নারীর ভূমিকায় অভিনয় করবেন রোকেয়া প্রাচী। এ অভিনেত্রী ‘দুখাই’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য ১৯৯৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চরিত্রে অভিনয় করবেন তৌকীর আহমেদ। এ অভিনেতা ও নির্মাতা ‘জয়যাত্রা’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ ২০০৪ সালে দুটি পুরস্কার পান। খল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জনপ্রিয় মিশা সওদাগর। তিন দশকের ক্যারিয়ারে দুবার এ অভিনেতা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। মিশা সওদাগরকে দেখা যাবে আইয়ুব খানের চরিত্রে অভিনয় করতে।
১৮ মার্চ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিকের শুটিং শুরু হবে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন। বায়োপিক–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণাধীন এই চলচ্চিত্রের জন্য প্রাথমিকভাবে ৩৫ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। এই বাজেটের ৬০ ভাগ দিচ্ছে বাংলাদেশ ও ৪০ ভাগ ভারত সরকার। বায়োপিকটি নির্মাণে শ্যাম বেনেগালের সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন দয়াল নিহালানি। বায়োপিকের চিত্রনাট্য করেছেন অতুল তিওয়ারি ও শামা জায়েদি। শিল্প নির্দেশনার দায়িত্ব পেয়েছেন নীতিশ রায়। কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে আছেন শ্যাম রাওয়াত।