'দেবী' দেখে কী বললেন হুমায়ূন আহমেদের পরিবার?

জয়া আহসান ও নুহাশ হ‌ুমায়ূন
জয়া আহসান ও নুহাশ হ‌ুমায়ূন

জনপ্রিয় সাহিত্যিক হ‌ুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে নির্মিত ‘দেবী’ ছবিটি দেখেছেন হ‌ুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্যরা। রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে গত বৃহস্পতিবার হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন তাঁর দুই সন্তান নিষাদ আর নিনিতকে নিয়ে এবং গতকাল শুক্রবার প্রথম সংসারের দুই সন্তান শীলা আহমেদ ও নুহাশ হ‌ুমায়ূন ছবিটি দেখেছেন।


ছবি দেখে শীলা আহমেদ তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি জয়া আহসানের সিনেমা হিসেবেই দেখেছি। খুব ভালো লেগেছে। তিনি খুব চেষ্টা করেছেন। এই দলের সবাই পরিশ্রম করেছেন। আমি এটাও বলতে পারি, আমার বাবা যে সিনেমাগুলো বানিয়েছেন, “দেবী”র মতো এতটা গোছানো মনে হয়নি।’

শীলা আহমেদ জানান, ছবির গল্পটা বাণিজ্যিক ঘরানার না। স্লো এবং একটু ভিন্নধর্মী। সবার অভিনয় তাঁর পছন্দ হয়েছে। বললেন, ‘প্রত্যেকের অভিনয় ভালো হয়েছে। সেই ছোটবেলা থেকেই আমি জয়া আহসানের বড় ভক্ত। নীলু চরিত্র খুব ভালো লেগেছে। অনিমেষ আইচকেও ভালো লেগেছে। বেশি ভালো লেগেছে কারণ, জয়া আহসান ছবিটি দেখার জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাবার সৃষ্টি নিয়ে যে যা-ই বানাক না কেন, কখনোই আমাদের যুক্ত করেন না। প্রথমবারের মতো বাবার সৃষ্টি নিয়ে কাজ করেছেন জয়া আহসান, আমাদের ডেকেছেন, আমরা সম্মানিত বোধ করেছি।’

জয়া আহসান ও শীলা আহমেদ

নুহাশ হ‌ুমায়ূন বলেন, ‘আমার মনে হয়, অনেক ভালোবাসা থেকে ছবিটি বানানো হয়েছে। অনেক প্যাশনেট একটা দল কাজ করেছে। আমি বলব, চলচ্চিত্রে রূপান্তরের ক্ষেত্রে “দেবী” উপন্যাস থেকে অনেক কিছু বদল করা হয়েছে, কিন্তু চলচ্চিত্রে তা খুব সুন্দর মনে হয়েছে। উপন্যাস নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে গল্পের মেজাজ তুলে ধরতে পারা খুব কষ্টসাধ্য, কিন্তু এই ছবিতে তা যথাযথ ছিল।’

নুহাশ হ‌ুমায়ূন জানান, অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতাই আছেন শ্রদ্ধা কিংবা অশ্রদ্ধা নিয়ে বিভিন্নভাবে বাবার সৃষ্টি নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু দেখেই বোঝা যায়, কোন কাজগুলো ভালোবাসা নিয়ে করা হচ্ছে, আর কোনগুলো ভালোবাসা ছাড়াই হচ্ছে। আমি বলব, “দেবী” একটা উদাহরণ হতে পারে, খুব ভালোভাবে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। শুধু হুমায়ূন আহমেদের নামের জন্য কিংবা প্রচারণার জন্য ছবিটি করা হয়নি। গল্পটা ভালোবেসে ছবিটি বানানো হয়েছে। এটা প্রশংসার দাবি রাখে। জয়া আহসানের অভিনয় খুব ভালো লেগেছে। পুরো কাস্টিং ভালোভাবেই হয়েছে। সবাই সুন্দর পারফরম্যান্স দিয়েছেন।’

‘মিসির আলী’কে নিয়ে নুহাশ তাঁর পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মিসির আলী নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। কারণ ছোটবেলা থেকে পড়েই মিসির আলী হিসেবে আমার বাবাকে দেখি। তারপরও সব মিলিয়ে এটা খুবই চমৎকার কাস্টিং। আমার মনে হয়, অনিমেষ আইচ অসাধারণ অভিনয় করেছেন। আমার বলতে হবে না, ছবিটি দেখুন, কারণ ছবিটি সবাই বেশ আগ্রহ নিয়েই দেখছে।’

হ‌ুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী, অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন ছবিটি দেখার পর বলেন, ‘মাথায় হ‌ুমায়ূন আহমেদের “দেবী”কে না নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে যান। চলচ্চিত্র “দেবী” দেখুন। প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গায় ভালো অভিনয় করেছেন। সাউন্ড ডিজাইনিং বেশি ভালো লেগেছে। বাংলাদেশের সিনেমায় অনেক দিন এমন সাউন্ড ডিজাইন দেখিনি।’

জয়া আহসানের সঙ্গে শাওন আর তাঁর দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিত

শাওন মনে করেন, হ‌ুমায়ূন আহমেদের গল্পের কিছু কিছু জায়গা থেকে সরে এসেছেন নির্মাতা, কিন্তু এই স্বাধীনতা একজন পরিচালকের থাকতেই পারে। খুব কট্টর হ‌ুমায়ূন–ভক্তরা হয়তো একটু নাখোশ হতে পারেন বলেও মনে করেন তিনি। শাওনও মিসির আলী হিসেবে হুমায়ূন আহমেদকেই কল্পনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি বলা হয় মিসির আলী হিসেবে কাকে দেখতে চাই, তাহলে বলতাম হুমায়ূন আহমেদকে দেখতে চাই। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না। চঞ্চল চৌধুরী দেশের অনেক গুণী অভিনয়শিল্পী, তিনি তাঁর সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছেন, আমার কাছেও ভালো লেগেছে। তবে আমার কল্পনার মিসির আলীর চেয়ে কম লেগেছে। জয়া আহসান অসম্ভব ভালো লেগেছে। শবনম ফারিয়াও ভালো করেছেন। অনিমেষ আইচকে সহজ স্বাভাবিক মনে হয়েছে।’

প্রযোজক জয়া আহসানকে সফল মনে করে তিনি বলেন, ‘প্রযোজক হিসেবে সফল জয়া আহসান। প্রেক্ষাগৃহ থেকে দর্শক বের হয়ে ছবিটির প্রশংসা করছেন, আবার কেউ বলছেন আরেকটু ভালো হতে পারত। আমি বলব, প্রেক্ষাগৃহ পর্যন্ত দর্শক টেনে আনতে পারা বিশাল সফলতা।’

আর জয়া আহসান বলেন, ‘দর্শকের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, তাঁরা পছন্দ করল কি না। হ‌ুমায়ূন আহমেদ শুধু তাঁর পরিবারের না, কিংবা আমরা যাঁরা ছবিটি বানিয়েছি, তাঁদেরও না। তিনি তো পুরো বিশ্বের যত বাংলা ভাষাভাষী আছেন, সবার। হ‌ুমায়ূন আহমেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছেন তাঁর পরিবার। সেই পরিবার যখন ছবি দেখেন, প্রশংসা করেন, সেটা বড় আনন্দের বিষয়। কারণ হ‌ুমায়ূন আহমেদ স্যারের প্রতিটি সৃষ্টি, চরিত্র আর বইয়ের প্রতি তাঁদের অধিকার সবচেয়ে বেশি। এরপর পাঠক হিসেবে আমরা।’