'আমি আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি' : সাজিদ সরকার

সাজিদ সরকার। ছবি: আনন্দ
সাজিদ সরকার।  ছবি: আনন্দ
>সংগীতাঙ্গনের বিভিন্ন তারকার সঙ্গে ভক্ত পরিচয় দিয়ে ছবি তুলতেন ইমন হোসেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ছবিগুলো ব্যবহার করে একসময় শুরু করেন ভয়াবহ প্রতারণা। নিজেকে পরিচয় করান সংগীত পরিচালক সাজিদ সরকার নামে। শিহাব শাহীনের ছুঁয়ে দিলে মন এবং মিজানুর রহমানের বড় ছেলেসহ বেশ কিছু নাটক–সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছেন সাজিদ সরকার। সাজিদের নামধারী ইমনের প্রতারণার শিকার হন দেশের নবীন গায়ক–গায়িকা, সুরকার, গীতিকার, নির্মাতা এবং অভিনয়শিল্পীরা। এ নিয়ে কথা বলেছেন সাজিদ সরকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিক আল মামুন

সংগীত নিয়ে কাজ শুরু করেছেন কবে থেকে?

সাজিদ সরকার: ২০০৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলে বাবা একটি কম্পিউটার কিনে দিয়েছিলেন। তখন ভেবেছিলাম, কম্পিউটারে গেমস না খেলে সৃজনশীল কিছু একটা করব। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ভালো লাগা ছিল। গান কীভাবে তৈরি হয়—এই প্রশ্ন মাথায় কাজ করত। সেই সময় হাবিব ওয়াহিদ ও ফুয়াদের গান ইউটিউবে দেখতাম আর কম্পিউটার দিয়ে মিউজিক করার চেষ্টা করতাম। এর মধ্যে কি–বোর্ড বাজানো শিখি আমি। ফেসবুকে হাবিব ওয়াহিদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। মাঝেমধ্যে আমার করা মিউজিক তাঁকে ইনবক্সে দিতাম। তিনি প্রশংসা করতেন। ২০০৮ সালের দিকে হাবিব ওয়াহিদের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়। সেই সময় কিছু গান নিয়ে কাজ করছিলেন তিনি। আমাকে সহযোগী হিসেবে কাজ করতে বলেন। আমিও রাজি হয়ে যাই। ২০১১ সালে হাবিব ভাইয়ের আহ্বান অ্যালবামে সহযোগী হিসেবে কাজ করি। রং এবং প্রজাপতি সিনেমায় ন্যান্​সির সব কটি গানের মিক্সিং ও মাস্টারিংয়ের কাজ করি সহযোগী হিসেবে। এভাবেই এ পথে চলে এলাম। 

নিজে এককভাবে কখন কাজ শুরু করলেন কবে?

সাজিদ: ২০১১ সালে শিহরণ নামের একটি মিশ্র অ্যালবাম করি। তারপর কিছু নাটকের গান করতে ডাক আসে। প্রথমে শিহাব শাহীনের মনফড়িং নাটকে তাহসানের কণ্ঠে ‘মেঘের পরে’ গানটির সুর–সংগীত করি। তারপর পর্যায়ক্রমে শিহাব শাহীনের নাটক মনছুবা জংশন, নীলপরী নীলাঞ্জনা নাটকের গানেও কাজ করি। এর মধ্যে তানজীব সারোয়ার ও রাফাতের একক অ্যালবামের মিউজিকও করি। তারপর ঝিলিকের অ্যালবামে একটি ও কনার অ্যালবাম রিদমিক কনাতে দুটি গানের সুর–সংগীত করি। 

কবে আলোচনায় এলেন?

সাজিদ: প্রথমে নাটকের গান দিয়ে খানিকটা পরিচিতি পাই আমি। এরপর শিহাব শাহীনের ছুঁয়ে দিলে মন ছবির ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ও ‘শূন্য থেকে’ গান দুটি আমাকে বেশি আলোচনায় আনে। এই ছবির পাঁচটি গানের চারটিরই সুর–সংগীত আমার। একটিতে শুধু মিউজিক করেছি। এরপর মিনারের ‘ঝুম’, তানজিবের ‘দিল আমার’, ‘মিথ্যা শিখাইলি’ গানগুলোর মিউজিক শ্রোতাদের প্রশংসা পায়। এ ছাড়া আরিয়ানের অ্যাংরি বার্ড নাটকে তাহসানের কণ্ঠে ‘প্রেম তুমি’ এবং বড় ছেলে ও বুকের বাঁ পাশে নাটকের গান ও মিউজিক
প্রশংসিত হয়।

বর্তমান কী কাজ করছেন? 

সাজিদ: নিজের গানের সুর-সংগীত এবং অন্যের সুরে মিউজিকের কাজ করছি। সম্প্রতি মিনারের ‘কেউ কথা রাখেনি’ গানটি ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে। তানজিবের পয়লা বৈশাখের জন্য ‘ভুল থেকে শিখেছি ’গানটির মিউজিক করছি। এ ছাড়া ইমরান ও পূজার দ্বৈত কণ্ঠে ‘তুমি শুধু আমার’ শিরোনামের একটি গানের সুর–সংগীত করলাম, গানটি ভালোবাসা দিবসে মুক্তি পাবে। এ ছাড়া ভালোবাসা দিবসের দুটি নাটকের গানের কাজ হাতে আছে।

বেশ কিছুদিন ধরেই ইমন নামে এক ব্যক্তি নিজেকে সাজিদ সরকার বলে দাবি করে বিভিন্ন জায়গায় পরিচয় দিয়ে আসছেন। আপনার নামে তাঁর ছবি দিয়ে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে আপনার ভক্তদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। বিষয়টি আপনি কবে জানতে পেরেছেন? 

সাজিদ: বছর দেড়েক আগে আমার এক ফেসবুক বন্ধুর মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পারি। আমার সবকিছুই কপি করে তাঁর ছবি দিয়ে ফেসবুকে আইডি খোলেন তিনি। সেখানে আমার করা গানগুলো তাঁর বলে শেয়ার দিতে থাকেন। পাশাপাশি বিশ্বস্ততা বাড়ানোর জন্য জনপ্রিয় শিল্পীদের সঙ্গে তোলা ছবি ওই অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করতে থাকেন। বিষয়টি নজরে এলে রিপোর্ট করে ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করি। কিছুদিন পর আবার অ্যাকাউন্ট খোলেন। 

তারপর আবারও সাজিদ সরকার দাবি করে একই কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি মেসেঞ্জারে গান করে দেওয়ার নাম করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে অগ্রিম টাকাও নিয়েছেন। এখনো নিয়ে যাচ্ছেন। আমার জানামতে, এ পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ জনের সঙ্গে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছেন। এ ছাড়া সাজিদ সরকার সেজে একাধিক মেয়ের সঙ্গে
বন্ধুত্ব গড়েছেন। সম্প্রতি একটি ভয়ংকর চিত্র দেখলাম, একটি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে
তিনি আমার পরিচয় দিয়ে সাক্ষাৎকার
দিলেন! বিষয়টি নিয়ে খুবই বিব্রতকর অবস্থায় আছি আমি।

কিন্তু আপনাকে নিয়ে এই প্রতারণার সুযোগ পাচ্ছে কীভাবে?

সাজিদ: আমার চেহারা মানুষ খুব একটা চেনেন না। আর মানুষের সঙ্গে মেশাটাও আমার কম হয়। আমার গানের সঙ্গে পরিচয় থাকলেও আমার চেহারার সঙ্গে অনেকের পরিচয় সেভাবে নেই। আমাদের এখানে অনেকেই সুর–সংগীত করার পাশাপাশি গানেও কণ্ঠ দেন। ফলে তাঁদের বেলায় এই সমস্যা হয় না। ভাবছি, এখন থেকে মাঝেমধ্যে কাজের ছবি, কাজের খবরাখবর নিয়ে ফেসবুক লাইভে আসব।

প্রতারিত হয়েছেন এমন কারোর সঙ্গে কি দেখা হয়েছে আপনার? 

সাজিদ: হ্যাঁ, জিসান খান নামের এমন একজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ঘটনাটি মাসখানেক আগের। জিসান গান করেন। তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল না। আমাকে নামে হয়তো চিনতেন তিনি, কিন্তু চেহারায় চিনতেন না। জিসান একদিন সাজিদ সরকার মনে করে ওই প্রতারকের সঙ্গে দেখা করেন। হাসিমুখে সেলফি তোলেন। ‘সাজিদ সরকারের সঙ্গে এক সন্ধ্যা’ লিখে সেই ছবি ফেসবুকে শেয়ারও করেন। গান করার জন্য মোটামুটি কথাবার্তা চূড়ান্ত করেছিলেন জিসান। এর কদিন পর তিনি জানতে পারেন, ওই তরুণ সাজিদ সরকার নন। জিসান একদিন আমার স্টুডিওতে এসে এ ঘটনা খুলে বলেন।

প্রশ্ন: আপনি কি কোনো আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন?

সাজিদ: না, এখনো নিইনি। তবে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনে অভিযোগ করেছি।

আরও পড়ুন: আসল সাজিদ নকল সাজিদ