অভিনয়ের কারণে কদিন আগেও বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন জয়া আহসান। এখন আর সেই ব্যস্ততা নেই। করোনাভাইরাসে এখন কাটছে তাঁর ঘরবন্দী সময়। তবে এর মধ্যেও রান্না করা খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন রাস্তায়। নিজ হাতে খাওয়াচ্ছেন অসহায় পথকুকুরদের। করোনাভাইরাসের এই উপদ্রুত সময়ে কীভাবে কাটছে তাঁর সময়, তা জানতে রোববার বিকেলে ফোনে কথা হলো। জানা গেল, একটি ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটে মুক্তি পেয়েছে তাঁর ‘কণ্ঠ’ ছবিটি। এসব নিয়েই কথা তাঁর সঙ্গে
করোনায় থমকে আছে চারদিক। কেমন কাটছে আপনার সময়?
এমন পরিস্থিতিতে যেমনটা থাকা যায়। একটু আগে শুনলাম, নিউইয়র্কে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমার একজন আত্মীয় মারা গেছেন। এত সুখী একটা পরিবার, খবরটা শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আরও কত পরিচিত লোকের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাচ্ছি। মনটা বিষণ্ন হয়ে আছে।
বাংলাদেশেও তো আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
তাই তো দেখছি। আমার ছোট ভাই লন্ডনে। ওর জন্য খুব শঙ্কিত হয়ে আছি। ও অবশ্য বাড়িতে আছে, ঠিকঠাক আছে। এ অবস্থায় লকডাউন না চলেও উপায় নেই। কিন্তু কত দিন যে চলবে। শুধু আমার ভাইবোন বা আত্মীয়স্বজন তো নয়। পুরো পৃথিবীর পরিস্থিতি নিয়েই তো মনটা অবসন্ন। আমাদের দেশের অবস্থাও তো একই।
পুরো পৃথিবী এখন করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এই সময়ে আপনার কী উপলব্ধি হচ্ছে?
মানুষ তার মানবিকতার সীমানা অতিক্রম করেছে। আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। আমরা প্রকৃতিরও সন্তান। তা সত্ত্বেও প্রকৃতিকে আমরা ধ্বংস করেছি। নির্বিকারে বন উজাড় করেছি। এরই ফলে অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলে কোটি গাছ ছাই হয়ে গেছে, লাখো বন্য প্রাণী মারা গেছে। আমাদের লোভ আর হঠকারিতায় বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। যে প্রকৃতির মধ্যে আমরা বাস করি, তার ভারসাম্য রক্ষার কথা মোটেও ভাবিনি। সবকিছুকে আমাদের লালসার শিকার করেছি। প্রকৃতিকে কোণঠাসা করেছি। কিন্তু আমরা নিজেরাও তো এই প্রকৃতির ভেতরেই আছি। সেই প্রকৃতির প্রতিশোধ আমাদের গায়েই তো লাগবে বেশি। সেটাই এখন হচ্ছে। আমরা পারমাণবিক বোমা বানিয়েছি। অস্ত্রশস্ত্রে কত কত দেশ তছনছ করে দিয়েছি। এখন একটা অণুজীবের বিরুদ্ধে এখন কেমন অসহায় হয়ে পড়েছি আমরা। তবে সব খারাপেরই একটা ভালো দিক আছে বলে আমি বিশ্বাস করি।
একটু ব্যাখ্যা করবেন?
এই ভাইরাসের প্রকোপে মানববিদ্বেষী কূটনীতি মনে হচ্ছে কিছুদিনের জন্য স্তব্ধ হয়ে আছে। বোমাবাজি রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সব দেশ এখন একটা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার লড়াইয়ে ব্যস্ত। এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্য। এবার যদি আমাদের বোধোদয় হয়। এখন যদি আমরা আরও একটু প্রকৃতিবান্ধব হই, প্রাণীবান্ধব হই। এই সময়টা পার হলে পুরো মানবজাতির এ ব্যাপারে নতুন উপলব্ধি আসা উচিত।
আপনি মনে করছেন, করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠলে মানুষের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আসবে?
হয়তো আসবে, হয়তো আসবে না। কিন্তু এই পরিস্থিতিটা তো কিছু প্রশ্ন রেখেই গেল। তার উত্তর তো মানুষকে খুঁজতে হবে। মানুষ বিরূপ প্রকৃতির কাছে হার মানছে। বাঁচতে হলে বোধোদয় হতেই হবে। আমাদের আরও মানবিক হতে হবে, সত্যিকারের শিক্ষিত হতে হবে।
সত্যিকারের শিক্ষিত বলতে কী বোঝাতে চাইছেন?
আজকেও ফেসবুকে দেখলাম, কোথায় যেন জেলেরা ডলফিন ধরে মেরে ফেলছে। একটা বানর খেতে এসেছে বলে ছালার বস্তা দিয়ে মুখ বেঁধে মেরে ফেলেছে। একটি বানরকে কেন শ্বাস আটকে মেরে ফেলতে হবে? প্রাণীদের প্রতি কেন আমাদের এত নিষ্ঠুর হতে হবে? ডলফিন বা বানরও তো আমাদের মতো প্রকৃতির সন্তান। মানবিক যদি আমরা না–ই হতে পারলাম, তাহলে কিসের শিক্ষা!
কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতে অভিনয়ের কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ সবকিছু থেমে গেল। কী করছেন এখন?
সবুজ আমার খুব পছন্দ। আমার বাড়ির ছাদে একটা বাগান আছে। আমার অবসর কাটছে বাগানের গাছপালার পরিচর্যা করে। ভেবেছিলাম প্রচুর বই পড়ব, কিন্তু মনোযোগ দিতে পারছি না। একটি বইও শেষ করতে পারিনি। নেটফ্লিক্স দেখি না। কিছু মুভি দেখার চেষ্টা করেছি, পারিনি। যেখানে আগে দিনে দু-তিনটি করে ছবি দেখতে পারতাম, এখন কষ্ট করেও একটা ছবি দেখতে পারছি না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে আছি।
প্রকৃতিই তাহলে আপনাকে সবচেয়ে বেশি প্রশান্তি দিচ্ছে?
খুব ভালো লাগছে। ঢাকার আকাশ–বাতাস অনেক বদলে গেছে। আমার বাগানের গাছগুলো অদ্ভুতভাবে তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠছে। যে ঢাকা শহরে পাখির ডাক শোনা দুর্লভ, সেখানে ছাদে কিংবা বারান্দায় যখনই যাই, পাখির কিচিরমিচির শব্দে মন ভরে যায়। সেদিন দেখি, কোত্থেকে একটি মাছরাঙাও এসে হাজির। সত্যিই অভাবনীয় দৃশ্য। তবে সাধারণ ও স্বাভাবিক জীবনই চাই। এমন কোনো মৃত্যু চাই না, যেখানে দাফন ঠিকমতো করা সম্ভব নয়। এ দুসঃময় কাটুক। মানুষ, গাছপালা, প্রাণী মিলেমিশে থাক।
এবার কাজের খবর বলুন। সর্বশেষ কবে শুটিং করেছিলেন?
এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। ভারতে মানস মুকুল পাল নামের একজন পরিচালকের নতুন ছবির কাজ শুরুর কথা ছিল। কৌশিক গাঙ্গুলির ‘অর্ধাঙ্গিনী’সহ আরও কয়েকটি ছবির ডাবিং করার কথাও ছিল। তবে সিনেমা নিয়ে এখন ভাবছি না। সিনেমা তো তৈরি হয় কারও যদি অতিরিক্ত টাকা থাকে তা দিয়ে। কারও যদি ২৫ কোটি টাকা থাকে, তিনি ৫০ লাখ টাকা ছবিতে বিনিয়োগ করেন। এখন তো খাদ্য, স্বাস্থ্য বা শিক্ষার মতো মানুষের মৌলিক দাবিগুলোই হুমকির মুখে পড়ে গেছে। নতুন করে ছবি নিয়ে তাই ভাবছি না। আমি নিজেও তো সবার একই কাতারে আছি।
আপনার অভিনীত ‘কণ্ঠ’ ছবিটি স্ট্রিমিং সাইটে।
স্ট্রিমিং সাইট হইচইয়ে এখন থেকে ছবিটি দেখতে পাবেন সবাই। এটি বিরূপ অবস্থার সঙ্গে লড়াই করার গল্প। এ সময়ে চলচ্চিত্রটি সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগাবে।