মাননীয় পরিচালক, রীতিমতো ধৈর্য ধরে আপনার তৈরি করা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অ্যাকশন জেসমিন দেখে শেষ করলাম। মন্তব্য করার জন্য রীতিমতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ভাষা খুঁজে পেলে আপনাকে অবশ্যই জানাব।
মুক্তির দিন বলাকা সিনেমা হলে প্রিমিয়াম টিকিট কেটে অ্যাকশন জেসমিন দেখে ওপরের চিঠিটিই লিখতে ইচ্ছা করেছিল। পরিচালক ইফতেখার চৌধুরীর ঠিকানা জানা ছিল না বলে চিঠিটি পাঠানো হয়নি। বাংলায় একটি কথা আছে ‘চোরের ওপর বাটপারি’। এই ছবির ক্ষেত্রে প্রবাদটি পুরোপুরি খেটে যায়।
ভারতের মাইকেল জ্যাকসন-খ্যাত প্রভু দেবা যদি একবার এই ছবি দেখেন, নিশ্চিত খাবি খাবেন। কারণ তাঁর ছবি রাউডি রাঠোর-এর নকল বাংলাদেশি ছবি অ্যাকশন জেসমিন । তবে পরিচালক একটু কষ্ট করেছেন। মূল চরিত্রটি নকল করেননি। একটু বদলেছেন মাত্র। রাউডি রাঠোরের চরিত্রে ছিলেন অক্ষয় কুমার, যিনি পুরুষ। অ্যাকশন জেসমিন ছবিতে চরিত্রটি ছিল একজন নারীর। আর এই ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ববি।
নায়িকা হিসেবে ববি বেশ উতরে গেছেন বলা চলে। কারণ এক চরিত্রে আঞ্চলিক ভাষা ও উচ্চারণে চিৎকার করে কথা বলা, অন্য চরিত্রে চোস্ত ইংরেজির সঙ্গে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে হয়েছে তাঁকে। দুটোতেই তাঁকে বেশ সাবলীল মনে হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি সাবলীল ছিলেন চোখ টিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে।
এখানে নায়ক সাইমন প্রসঙ্গে দুটি কথা না বললেই নয়। কেন যে এ চরিত্রটি সিনেমায় ছিল, তা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। চোর নায়িকার সহযোগী কাবিলাকে যতবার পর্দায় দেখা গেছে, তার চার ভাগের একভাগও নায়ককে দেখা যায়নি। নায়ক শুধু দুটো গানে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। তাই চলচ্চিত্রটি দেখার পর দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে—নায়কের কি দরকার ছিল?
ছবি মানেই আয়-ব্যয়। তবে এ ছবির আয়-ব্যয়ের খতিয়ান না জানলেও চলে। ছবি মুক্তির দিন বলাকা সিনেমা হলের ক্যানটিন প্রধান বলেছিলেন, ‘কেন যে এই ছবি এনেছে, প্রথম শোতে ছিল মাত্র ২২ জন দর্শক।’ আশা করি, আর কাউকে বলে দিতে হবে না কি হয়েছে পরে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই যদি হালের বাংলা ছবির ধরন হয়, তবে কেন দর্শক হলে গিয়ে ছবি দেখবেন? পরিচালক বা চিত্রনাট্যকারদের কি কিছুই করার নেই?
অ্যাকশন জেসমিন ছবির নিরিখেই বলা যায়, চুরি না করেও ছবি বানানো যেত। নায়ক-নায়িকার যতটা না করণীয় তার চেয়ে বেশি দায়িত্ব ছিল পরিচালকের। কিন্তু তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব সিনেমা নকল করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলেন। আলমগীর-শাবানার একটি ছবি ছিল মায়ের দোয়া। সে ছবি ভারতে রীতিমতো অনুমতি নিয়ে রিমেক হয়েছিল। সেখানেও মূল চরিত্র অভিনয় করেন বাংলাদেশের নায়ক আলমগীর। মায়ের দোয়া লেখা ব্যানার থাকলে নাকি ২০-২৫ গুলিও বুকে লাগে না। এ-ই ছিল ছবির মূল বিষয়। এমন একটি ছবি রিমেক হয়েছিল শুধু পরিচালকের গুণে। বেদের মেয়ে জোৎস্নাও অঞ্জু ঘোষকে নিয়ে গিয়ে রিমেক হয়েছিল ভারতে। তাহলে এখন কেন আমাদের চুরি করতে হবে? অার এই ছবির মেকআপ-গেটআপ নিয়ে কোনো কথা না বলাই ভালো। একেবারে অদর্শনযোগ্য কোনো দৃশ্য ছিল না বলে দর্শক হিসেবে পরিচালকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তবে ‘কাবিলা’ টাইপ কমিক চরিত্র যথেষ্ট বিরক্তির উদ্রেক করেছে। তাঁর অশালীন আচরণ রীতিমতো অসম্মানজনক। আর ডাবিং বলে যে বস্তুটি রয়েছে, তা নিয়ে না বললেই নয়। একটি গানের কথাও বোঝা যায়নি। সংলাপ তো সব ‘ঘের ঘের’ আওয়াজ।
আরেকটি কথা, ‘মু হা হা হা’ কিংবা ‘অ্যারাবিয়ান নাইটস’-চরিত্র জিঙ্গালু জিংলার মতো ভিলেনদের বোধ হয় বদলানোর সময় এসেছে। এটা শুধু পরিচালক নয়, ভিলেন খ্যাত শীর্ষ অভিনেতা মিশা সওদাগরও ভাবতে পারেন।
প্রিয় পরিচালক, পরিশেষে এটাই বলতে চাই—ভবিষ্যতে দর্শককে মানসিক যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য এ ধরনের ছবি আর বানাবেন না। আশা করি দর্শককে ‘লক্ষ্মী’ বিবেচনা করে কথাটি রাখবেন।