‘অভিনয়জীবনে এই প্রথম একটানা ৪০ দিন ধরে বাসা ছেড়ে, প্রিয়জন ছেড়ে, ঢাকা ছেড়ে দূর দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে কাটিয়ে প্রিয় শহরে ফিরলাম। আহা, কী যে শান্তি!’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেন জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী।
গতকাল সোমবার যোগাযোগ করা হলে চঞ্চল চৌধুরী জানান, এই ৪০ দিন তিনি কক্সবাজার এবং সেন্ট মার্টিনে ছিলেন শুধু ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের জন্যই। তিনি বলেন, ‘এই ৪০ দিনের পুরো বিষয়টা ছিল আমার কাছে যুদ্ধের মতো। ৪০টা দিন সমুদ্রের মাঝখানে, বিষয়টা খুব সহজ নয়। অনেক কষ্টসাধ্য ছিল। প্রতিকূল পরিবেশ ছিল। একটা সময় এমনও মনে হয়েছিল, এতগুলো মানুষ কাজটা শেষ করে আসতে পারব কি না।’
‘মনপুরা’, ‘আয়নাবাজি’ এবং ‘দেবী’র মতো আলোচিত ও ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’। ছবিটির গল্প নিয়ে গুণী এই অভিনেতা বলেন, ‘এ রকম গল্প নিয়ে এর আগে, এ দেশে আর কোনো সিনেমা নির্মাণ হয়নি। হয়তো কেউ সাহসও করেনি। আমাদের চ্যালেঞ্জটা ছিল সেখানেই। “হাওয়া” টিমের প্রত্যেক মানুষ অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন, যেটা বলে বোঝানো যাবে না।’ এ ছাড়া ‘মনের মানুষ’, ‘টেলিভিশন’, ‘রূপকথার গল্প’ চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়। কিছুদিন করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিমের তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘পাপ-পুণ্য’-এর কাজ।
কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিন এলাকা ঘিরে শুটিং হয়েছিল ‘হাওয়া’র। মেজবাউর রহমান সুমন বলেছেন, ‘এটা সমুদ্রতীরবর্তী মানুষের গল্প না। একেবারে সমুদ্রের জলের সঙ্গে মিশে যাওয়া জেলেদের গল্প। জলের গল্প। মাছ ধরার ট্রলারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাহিনি। গভীর সমুদ্রে ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য মাছ ধরতে যান জেলেরা। সেখানকার অভিজ্ঞতা এটি। আমাদের এই অঞ্চলে জলকেন্দ্রিক যে মিথ আছে, তার একটা আধুনিক উপস্থাপনা বলতে পারেন।’
এ কারণেই গভীর সাগরে গিয়ে প্রতিদিন তাঁদের শুটিং করতে হয়েছিল। সেন্ট মার্টিন থেকে ট্রলারে দেড় ঘণ্টা চলার পর সাগরের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে নোঙর করতে হতো। সেখানেই সারা দিন শুটিং চলত। এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কবলেও পড়েছিল পুরো শুটিং ইউনিট। ৮ নভেম্বর ছবিটির পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো সেদিনও সাগরে শুটিং করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। যাওয়ার সময় পরিস্থিতি ততটা বুঝতে পারেননি। ওই দিনের কথা মনে করে তিনি বলেন, ‘দুপুরের পর আবহাওয়া দ্রুত খারাপ হতে থাকে। ঢেউ ভয়ংকর থেকে আরও ভয়ংকর হতে শুরু করে। অনেক উঁচু উঁচু ঢেউ। ট্রলারের লোকজন দ্রুত ফিরে যাওয়ার জন্য তাগিদ দেন। ফিরতে গিয়েও বিপত্তি, সন্ধ্যার আগে সেন্ট মার্টিনের কাছাকাছি এসে মূল ট্রলার থেকে ছোট ট্রলারে কোনোভাবেই নামতে পারছিলেন না। ভয়াবহ স্রোত আর মনে আতঙ্ক তৈরি করার মতো ঢেউ। সঙ্গে বাতাস আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সব মিলিয়ে খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে সবার।’ প্রথম আলোকে তিনি বললেন, ‘আমাদের সেন্ট মার্টিন থেকে এতটা দূরে যেতে হয়, যাতে সেখান থেকে কোনো দ্বীপের চিহ্ন দেখা না যায়। এতটা গভীর সমুদ্রে কাজ করছি আমরা। সেদিন (৭ নভেম্বর) খুব ভয় পেয়েছিলাম। বলতে পারেন, জীবন-মৃত্যু হাতে নিয়ে কাজ করছি।’
চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কষ্টটুকু করতে পেরেছি সিনেমাকে ভালোবাসি সেই জন্য। আর দর্শকও ভালো সিনেমা দেখতে চান সেই জন্য। এটা আমার বিশ্বাস, যদি ভালো কিছু হয়, দর্শক এর মূল্য দেবেন।’ তিনি বলেন, ‘“হাওয়া” সিনেমার পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের কাজের প্রতি সততায় আমি মুগ্ধ। এই দুঃসময়ে সস্তা বিনোদন দেওয়ার জন্য ও কোনো চটকদারি গল্পের সিনেমা বানাচ্ছে না। ওর সিনেমায় অন্য রকম একটা জীবন আছে, যা আমরা আগে দেখিনি।’
‘হাওয়া’ ছবির শিল্পীদের মধ্যে এখন সেন্ট মার্টিনে চঞ্চল চৌধুরী ছাড়া আরও ছিলেন নাজিফা তুশি, সুমন আনোয়ার, শরিফুল রাজ, রিজভি, নাসির, মাহমুদ প্রমুখ। ছবিটির চিত্র গ্রহণে থাকবেন কামরুল হাসান খসরু। ‘হাওয়া’ প্রযোজনা করছে সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেড।
মেজবাউর রহমান সুমন ২০০৬ সালে প্রথম নাটক ‘দখিনের জানালাটা খোলা, আলো আসে-আলো ফিরে যায়’ দিয়ে অর্জন করেছিলেন মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার। এ ছাড়া তাঁর নির্মিত ‘তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’, ‘পারুলের দিন’, ‘জ্যোৎস্না নদী ও রফিকের কিছু কল্পদৃশ্য’, ‘সুপারম্যান’, ‘কফি হাউস’ দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। বেশ কিছু আলোচিত বিজ্ঞাপন বানিয়েছিলেন তিনি।