দুই ধাপে প্রায় ৩২ দিনের শুটিং হলো ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির। ১১ মার্চ মোংলার জয়মনি এলাকায় ছবিটির শুটিং শেষ হয়। এর মধ্য দিয়ে খুলনা অঞ্চলের ছবির শুটিং শেষ হলো। আর মাত্র চার দিনের শুটিং হবে ঢাকায়। তারপর কেবল বাকি থাকবে গানের শুটিং।
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর খুলনার মুন্সিগঞ্জে শুটিং শুরু হয় ছবিটির। তার আগে ‘সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত দিবস’ উপলক্ষে পয়লা নভেম্বর ছবিটির একটি পোস্টার প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি আয়োজন করা হয়েছিল শিল্পী পরিচিতি অনুষ্ঠানের।
সুন্দরবন থেকে জলদস্যু মুক্ত করার অভিযান নিয়ে ছবির গল্প। তবে ছবির গল্পে থাকবে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ নিয়েও কিছু অংশ। চলচ্চিত্রটির কাছের একটি সূত্র জানিয়েছে, ছবিটির শুটিংয়ে প্রায় ১০০ জন অভিনয়শিল্পী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ জন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্য। প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন কাজ করেছেন ছবিটির পেছনে। শুটিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছে দুটি বড় জলজাহাজ, সাতটি স্পিডবোট, ছয়টি লঞ্চ, দুটি হেলিকপ্টারসহ আরও অনেক কিছু।
ছবির পরিচালক দীপংকর দীপন বলেন, ছবিটি প্রযোজনা করছে র্যাব ওয়েলফেয়ার কো–অপারেটিভ সোসাইটি লি.। তাদের সহায়তা ছাড়া এত বড় আয়োজন করে এই ছবি নির্মাণ সম্ভব নয়। শুধু এটিই নয়, র্যাবের ৯০ জনের একটি দল শুটিংয়ে নানা কাজে সাহায্য করেছে। ছবিতে হেলিকপ্টার অপারেশনের শুটিংয়ে ঢাকা থেকে আট সদস্যের একটি দল অংশ নিয়েছে।
সুন্দরবন ঘিরে নানা ধরনের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। নির্মাতা জানান, এটি একক কোনো গল্পের ছবি নয়। সুন্দরবনকেন্দ্রিক বিভিন্ন পেশার মানুষের গল্প এটি। সুন্দরবন, খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলের জনপদের গল্প এটি।
এই পরিচালক আরও বলেন, ‘সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ ছবিটিতে কাজ করেছে, সহযোগিতা করেছে। তা নাহলে এত শিল্পী ঢাকা থেকে নিয়ে শুটিং করা সম্ভব ছিল না।’
ছবির শুটিং হয়েছে গভীর সুমদ্র থেকে শুরু করে সুন্দরবনের ভেতরে, হিরণ পয়েন্টে। এ ছাড়া কালিরচর, দুবলার চর, আলোর চর, মেহের আলীর চর, ডিমের চর, লক্ষ্মীর চরসহ ওই অঞ্চলের নানা জায়গায় শুটিং হয়েছে ছবিটির। দীপন বলেন, ‘কাদাপানির মধ্যে শুটিং করেছি। অনেক সময় শিল্পীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শুটিংয়ের সময় সুমদ্রের জোয়ার কখনো অনুকূলে ছিল, কখনো ছিল না। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই শুটিং করতে হয়েছে। জলদস্যু ধরার দৃশ্যের জন্য গভীর বনে ঢোকার পর হঠাৎ পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় শুটিং না করে ফিরে আসতে হয়েছে।’
দীপন আরও বলেন, ‘অনেক সময় এমন দুর্গম এলাকায় যেতে হয়েছে, যেখানে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না। তিন-চার দিন পরপর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি আমরা।’
এভাবেই শেষ হয়েছে সুন্দরবন অংশের শুটিং। এখন ঢাকার অংশের শুটিং হবে। বাকি চার দিনের দুদিন শুটিং হবে বিএফডিসিতে, এক দিন গাজীপুরের র্যাব ট্রেনিং সেন্টারে আর এক দিন শুটিং হবে র্যাবের সদর দপ্তরে। দীপন বলেন, ‘যেসব জায়গায়, যত বড় আয়োজনে আমরা ছবিটির শুটিং করেছি, পর্দায় না দেখলে বিশ্বাস করানো মুশকিল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আগে এভাবে কাজ হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। যতটুকু কাজ করেছি, অনেক কষ্ট করে করেছি। কষ্টের ফল দর্শক পাবেন।’
পরিচালক জানান, গানগুলোর শুটিং ইউরোপে করার কথা ছিল, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আশপাশের দেশে করার চিন্তাভাবনা চলছে। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবিটির চিত্রনাট্য করেছেন দীপংকর দীপন ও তাঁর দল। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন, রিয়াজ, সিয়াম আহমেদ, তাসকিন রহমান, রোশান, নুসরাত ফারিয়া, রওনক; কলকাতার দর্শনা বণিক, তুয়া চক্রবর্তী প্রমুখ। ছবিটি ঈদুল আজহায় মুক্তির কথা আছে।