সুচন্দার লেখা চিঠি পেয়ে আপ্লুত ববিতা, চম্পা

সুচন্দা-ববিতা ও চম্পা। ছবি: সংগৃহীত
সুচন্দা-ববিতা ও চম্পা। ছবি: সংগৃহীত

‘গোটা পৃথিবীটাই যেন করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে। যদি কখনো কোনো দিন হঠাৎ করে দু-এক টুকরো সাদা মেঘ ভেসে আসে, তখন মনে হয়, ওরা যেন বাংলাদেশের বার্তা নিয়ে এসেছে। মেঘ যেন বলছে, আমরা ভালো নেই, চিকিৎসা নেই, ঘরে খাবার নেই, আমরা বড্ড অসহায়, তখন অঝোরে কাঁদি।’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় থাকা দুই বোন ববিতা ও চম্পার কাছে লেখা চিঠিতে এমনটাই বলেছেন সুচন্দা। 

নতুন প্রযুক্তির মোবাইলের এই সময়ে এখন আর চিঠি লিখতে খুব একটা দেখা যায় না। মনের ভাবটা প্রকাশের জন্য মোবাইলের খুদে বার্তা আদান প্রদান করেন। আবার ভিডিও কলে দূর থেকে দেখা এবং কথা সেরে নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হওয়াতে চিঠি লেখার এই রীতিটা আরও ভুলতে বসেছে মানুষ। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে আটকে থাকা বরেণ্য অভিনয়শিল্পী সুচন্দা তাঁর ছোট দুই বোনের খবর নিতে চিঠির আশ্রয় নিলেন। হাতে লেখা সেই চিঠির ছবি তুলে ভাইবারে পাঠিয়ে দিয়েছেন দুই বোনের কাছে। বড় বোনের কাছ থেকে হাতে লেখা চিঠি পেয়ে আবেগ আপ্লুত ছোট দুই বোন ববিতা ও চম্পা।

ছেলে অপু রায়হানকে নিয়ে গত ফেব্রয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বেড়াতে গিয়েছিলেন অভিনয়শিল্পী সুচন্দা। ফিরে আসার কথা ছিল এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। ছেলে ঢাকায় ফিরে এলেও মা সুচন্দা আরও কয়েকটি দিন বেড়িয়ে আসবেন, এমনটাই ছিল চিন্তাভাবনা। কিন্তু করোনার অবনতিতে শেষ পর্যন্ত আর দেশে ফিরতেই পারেননি সুচন্দা। মেজ ভাইয়ের হাইড পার্কের বাসায় আটকে রইলেন। কবে ফিরবেন, তা–ও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সুচন্দার লেখা চিঠি পেয়ে আপ্লুত ববিতা, চম্পা। ছবি: সংগৃহীত।

২২ এপ্রিল হাইড পার্কের বাড়িতে বসে দুই বোনের কাছে একটি চিঠি লেখেন সুচন্দা। তাতে সুচন্দা লেখেন, ‘ভাবছ, বুজির (সুচন্দাকে বুজি বলে ডাকেন ববিতা ও চম্পা) সঙ্গে ফোনে কথা হয়, এরপর আবা চিঠি কেন? আসলে অনেক দিন কাউকে চিঠি লেখা হয় না। হাতের কাছে কাগজ–কলম পেলাম। মনে হলো দু-কলম লিখি, বলা যায় না, এই লেখাটুকুই হয়তো স্মৃতি হয়ে থাকবে।’

চিঠিতে সুচন্দা আরও লেখেন, ‘প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠে দরজার পর্দা সরিয়ে সোফায় বসে সামনের সড় গাছগুলোর দিকে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি, মনে হয় প্রকৃতি যেন তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। স্তব্ধ মেঘ যেন মুখ কালো করে থমকে আছে। মেঘের চঞ্চলতা নেই। রাস্তায় গাড়ি চলার শব্দ নেই। বাচ্চাদের খেলাধুলা, হইচই নেই। গোটা পৃথিবীটাই যেন করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে। যদি কখনো কোনো দিন হঠাৎ করে দু-এক টুকরো সাদা মেঘ ভেসে আসে, তখন মনে হয়, ওরা যেন বাংলাদেশের বার্তা নিয়ে এসেছে। বলছে, আমরা ভালো নেই। চিকিৎসা নেই, ঘরে খাবার নেই, আমরা বড্ড অসহায়, তখন অঝোরে কাঁদি।’

এদিকে এমন দিনে বড় বোনের কাছ থেকে হাতে লেখা চিঠি পেয়ে ভীষণভাবে আপ্লুত ছোট বোন ববিতা ও চম্পা। প্রথম আলোকে চম্পা বলেন, ‘সকালবেলা ভাইবারে চিঠিটি যখন পেলাম, পড়ে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করল। আমাদের কথা জানতে চাওয়ার পাশাপাশি বুজি (সুচন্দা) দেশের মানুষকে নিয়েও ভীষণ চিন্তিত। কবে সবকিছু স্বাভাবিক হবে, সেই অপেক্ষায় আছি।’