প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবার থেকে দাবি করা হয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। সে সময় পরিবার থেকে এই অভিনেতাকে হত্যার দায়ে মামলা করা হয়। সেই মামলার অন্যতম আসামি করা হয় সে সময়ের সুপরিচিত অভিনেতা ডনকে। তিনি মূলত খলচরিত্রে অভিনয় করতেন।
সালমান শাহর অপমৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকার আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৬০০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রটি জমা দেন। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, চিত্রনায়ক সালমান শাহকে খুন করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। এই আত্মহত্যার পেছনে পাঁচটি কারণ ছিল। প্রথম এবং প্রধান কারণ, সালমান শাহ ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের মধ্যকার ‘অতি-অন্তরঙ্গতা’। এ নিয়ে সালমানের স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ, অতি আবেগ থেকে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা, মায়ের সঙ্গে অভিমান এবং সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতা বোধ।
প্রায় ২৩ বছর পর তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশে খুশি হন অভিনেতা ডন। মিথ্যা হত্যা মামলায় জড়িত না থাকায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ডন বলেন, ‘একটা মিথ্যা অপবাদ থেকে মুক্ত হলাম, চিন্তামুক্ত হলাম। একটা দায়মুক্ত হলাম। বিষয়টা দীর্ঘদিন ধরে আমাকে যন্ত্রণা দিয়েছে। সালমান আমার কাছের বন্ধু ছিল। সালমান মারা যাওয়ার পর আমি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারিনি। কাজ কমে গেছে। এখন চিন্তামুক্ত হয়েছি। পিবিআই তদন্ত করে সুন্দর একটি সমাধান দিয়েছে। তাদের গবেষণা, তথ্য নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেটার প্রতি আমার এবং দেশের মানুষের আস্থা আছে। আমি পিবিআইকে মন থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে অনেক দিন পর আবারও আমার কাছের বন্ধু সালমানকে হারানোর কষ্টটা পেয়েছি।’ ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির শুটিং থেকেই সালমান শাহ ও ডনের মধ্যে বন্ধুত্ব শুরু হয়।
খল অভিনেতা ডন নিজে হত্যার অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়ে খুবই খুশি। অভিনেতা ডনের কাছে এটা অনেক বড় একটি প্রত্যাশিত ফলাফল। নিজের কিছু মন্দ লাগা অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে সালমান শাহর তরুণ ভক্তদের ওপর মনঃক্ষুণ্ন হন এই খলনায়ক। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এই রায়ের ওপর নাখোশ হয়েছেন। অনলাইন আক্রমণের শিকার হয়ে এই অভিনেতা বলেন, ‘সালমানের অনেক তরুণ ভক্ত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে তারা মামলা নিয়ে বিভিন্ন উল্টাপাল্টা কথা বলছে। এখন আমার কথা হচ্ছে, তারা এই মামলা সম্পর্কে কী জানে? এখন যার বয়স ৩০ বছর, ১৯৯৬ সালে যখন সালমান শাহ আত্মহত্যা করেন, তখন সেই দর্শকের বয়স ছয়–সাত বছর। এই ছোট বয়সে একটা শিশু কী বোঝে। অথচ তারাই এখন মহাজ্ঞানীর মতো এই মামলার রায় নিয়ে কথা বলছে। কিছু না বুঝেই বলছে এটা নাকি আত্মহত্যা নয়। নিজে কিছু না দেখে না শুনে ভালো একটা সমাধানের মন্তব্য করছে। এই হুজুগে দর্শকদের কী আর বলব। মনে হয় তাঁদের কাছে বহু প্রমাণ আছে? ’৯৬ সালে আমার বয়সী হলে তা–ও এক কথা ছিল। ওই সময়ে যাদের জন্ম হয়নি, এরাও বড় বড় কথা ক্যামনে বলে বুঝি না।’
দীর্ঘদিন পর নিজেকে মুক্ত ভাবছেন এই খলতারকা। বন্ধু সালমান শাহর মৃত্যুতে সব সময়ই একটা শোকের আবহে থাকতেন, সেটা এখনো আছে বলে জানান এই খল অভিনেতা।