করোনার প্রভাবে এ বছরেও স্থবির ছিল বিনোদন অঙ্গন। খুব বেশি আশার খবর মেলেনি। তবে হাতে গোনা কয়েকটি ঘটনায় দেশের তারকারা ছিলেন আলোচনায়। কেউ ছিলেন পেশাগত কাজ নিয়ে, কেউবা পেশার বাইরের কাজ নিয়ে ছিলেন আলোচনা–সমালোচনায়। সারা বছর নানাভাবে আলোচনায় ছিলেন, এমন তারকাদের কথাই আজ শুনব।
পরীমনি
এমনিতে নানা কারণে আলোচনায় থাকেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। এ বছরে আলোচনার দিক দিয়ে যেন নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী ওরফে অমির বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার কথা বলে সাড়া ফেলেন পরীমনি।
এ ঘটনায় পরীমনিকে নিয়ে ডিবি অফিস, থানা–পুলিশ পর্যন্ত যাওয়া–আসা করতে হয়। এ ঘটনার কয়েক মাস পর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন পরীমনি। কারাগারেও থাকতে হয়। শেষ পর্যন্ত জামিন পেলেও পরীমনিকে নিয়ে আলোচনা থামেনি। জামিন থেকে বের হওয়ার পর তাঁর হাতে লেখা, আদালতে হাজিরা দিতে গেলেও তাঁর হাতের লেখা বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। অক্টোবরে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জন্মদিন উদ্যাপন নিয়ে তিনি আলোচিত হন।
বাঁধন
বছরটা আজমেরী হক বাঁধনের বললে কোনো ভুল হবে না। বছরের মাঝামাঝি সময়ে খবর আসে, কান চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নিয়েছে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত চলচ্চিত্র রেহানা মরিয়ম নূর। এ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র রেহানা হয়ে পর্দায় মুগ্ধ করেন বাঁধন। ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান বাঁধন। নিজের জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র নিয়ে বিশ্ব চলচ্চিত্রের অনেক দর্শক–সমালোচকের দৃষ্টি কাড়েনও তিনি। এ চলচ্চিত্রই জুন থেকে বছরের এখন পর্যন্ত তাঁকে নানাভাবে আলোচনায় রেখেছে। দেশ–বিদেশের কয়েকটি সম্মাননাও অর্জন করেছেন। রেহানা মরিয়ম নূর চলচ্চিত্রের জন্য বাংলাদেশ ও বিশ্ব চলচ্চিত্রের আঙিনায় আলোচিত মুখের নাম আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। তবে আজ পর্যন্ত দেশের কোনো সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি তাঁকে।
বুবলী
উধাও হওয়ার আগে ক্যাসিনো ছিল বুবলী অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা। আর মুক্তি পায় বীর। এ ছবি মুক্তির সময় কোথাও তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কয়েক মাস ধরে উধাও। নেই তো নেই, কোথাও নেই। কারও সঙ্গে কোনো কথা নেই। আড়ালে থাকা সময়টায় খবর রটে, মা হয়েছেন তিনি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ সংবাদমাধ্যমে হাজির।
ফেসবুকে নতুন ছবি প্রকাশ করেন। উধাও থাকা বুবলী হঠাৎ হাজির হয়ে যেন নতুন আলোচনার জন্ম দেন। বুবলীকে নিয়েও সরব হয় সংবাদমাধ্যম। এরপর আবার কাজে মনোযোগী হন। এদিকে খবর রটে, শাকিবের সঙ্গে নতুন কোনো সিনেমায় দেখা যাবে না বুবলীকে। দেশে ফেরার পর শাকিবের সঙ্গে নতুন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হলেও তাঁকে নিয়ে আবার আলোচনা হয়।
শাকিব খান
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লিডার: আমিই বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের মহরতে কথায় কথায় কাউকে ইঙ্গিত করে শাকিব খান বলেন, ‘অনেকেই বলছে, চলচ্চিত্রের না খেয়ে থাকা মানুষদের আমি কাজ দিচ্ছি। তোমার কাজ দেওয়ার দরকার নেই স্টুপিড! তুমি কে কাজ দেওয়ার?’ শাকিবের এ বক্তব্য চলচ্চিত্রাঙ্গনে ব্যাপক আলোচিত হয়। লিডার: আমিই বাংলাদেশ, অন্তরাত্মার পর সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র গলুই–এ অভিনয় করে আলোচিত হন শাকিব।
নভেম্বরে শাকিব খান যুক্তরাষ্ট্রে চ্যানেল আইয়ের একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে যান। সপ্তাহ দুয়েকের জন্য গিয়ে মাস দেড়েক পার হয়ে গেলেও না আসায় তাঁকে ঘিরে রহস্য তৈরি হয়। কেউ বলেন, শাকিব যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হবেন। তবে তিনি বলেন, গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন এবং নতুন চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের কারণে তাঁকে সেখানে পাঁচ মাসের মতো থাকতে হতে পারে।
মাহিয়া মাহি
আগে থেকে শোনা যাচ্ছিল, মাহির সঙ্গে তাঁর স্বামী অপুর সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। মাহিও এ কথা ফেসবুকে কয়েকবার লিখেছেন। আবার গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্কে কথাও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু নিশ্চিত করে কিছুই বলছিলেন না মাহি। অবশেষে মে মাসে এসে মাহি নিজেই জানালেন, অপুর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে গেছে দুই বছর আগে। রাকিব সরকারের সঙ্গে প্রেমের বিষয়টি গুঞ্জন বলে অস্বীকার করলেও সেপ্টেম্বরে বিয়ের পর সব স্বীকার করেন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হলে আবারও আলোচনায় আসেন মাহি।
মেহ্জাবীন
বছরের মাঝামাঝি ঘটনা সত্য নামের একটি নাটকে অভিনয় করে ব্যাপক তোপের মুখে পড়েন মেহ্জাবীন ও আফরান নিশো। নাটকটিতে বিশেষ শিশুদের বিষয়ে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে, এমনটাই অভিযোগ ছিল। অনভিপ্রেত এ ঘটনার জন্য অবশ্য ক্ষমাও চেয়েছেন নাটকটির পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলীরা। নাটকের কারণে বছরের অন্যান্য সময়ে আলোচনায় থাকলেও বছরের শেষ দিক পরিচালক আদনান আল রাজীবের সঙ্গে একটি স্থিরচিত্র নিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসেন মেহ্জাবীন। কারণ, তাঁদের মধ্যে কয়েক বছর ধরে প্রেমের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
নোবেল
বিতর্কিত নানান কর্মকাণ্ডের কারণে শুরু থেকে আলোচিত ও সমালোচিত নোবেল। এ বছরেও বিতর্কিত নানান কর্মকাণ্ডের কারণে বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন। গানের বাইরে সাংবাদিককে হুমকি, পথচারীকে মোটরসাইকেলচাপা দেওয়া—এসব তাঁকে সমালোচিত রেখেছে।