‘আসিতেছে, আসিতেছে’ কিংবা ‘চলিতেছে, চলিতেছে’—মাইক থেকে এখন আর এমন আওয়াজ শোনা যায় না বললেই চলে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের যুগে চলচ্চিত্রের প্রচারের ধরনটাও পাল্টে গেছে। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো সিনেমার প্রচারের বড় একটি মাধ্যম। সেই মাধ্যম ব্যবহার করছেন দেশি অভিনয়শিল্পীরাও। বলছেন, এই আধুনিক সময়ে সিনেমার প্রচারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সিনেমার প্রচারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তার উদাহরণ মেলে বাইরের দুনিয়ায়। বিশ্বের দুটি বড় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি হলিউড ও বলিউউ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দুই ইন্ডাস্ট্রির তারকারা বেজায় সচল। ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে তাঁদের অ্যাকাউন্টগুলোর খোঁজখবর রাখলে পুরো ইন্ডাস্ট্রির খবর মেলে। তারকাদের অ্যাকাউন্টগুলো খবরের সূত্রও হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। শুধু তা–ই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দিয়ে সিনেমা ও নিজের প্রচারের পাশাপাশি আয়ও করছেন তারকারা।
বাংলাদেশে এমনিতেই সিনেমার অবস্থা সংকটজনক। অনেক সময় সিনেমা মুক্তি পেলে তার খবরও পাওয়া যায় না। সিনেমা মুক্তির আগে প্রচার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তারকারাও ফেসবুক পেজ, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে তাঁদের ছবি ও কাজের ব্যাপারগুলো নিয়ে প্রচার করছেন। জয়া আহসান, শাকিব খান, নুসরাত ফারিয়া, বিদ্যা সিনহা মিম, আরিফিন শুভ, শবনম বুবলী, পরীমনি, সিয়াম আহমেদ, পূজা চেরি, রোশানসহ অনেকেই ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে সরব। কেউ কেউ ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে নিজের ছবির শুটিং, প্রথম ঝলক (ফার্স্ট লুক)সহ নানা খবর দিয়ে থাকেন। তাতে আনুষ্ঠানিক প্রচারের পাশাপাশি তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকেই ছবির একটা বড় প্রচার মেলে।
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম—তিন মাধ্যমেই সরব অভিনয়শিল্পী বিদ্যা সিনহা মিম। সম্প্রতি দেখা গেছে, পরান চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের ছবি দিয়ে নিজের ছবির প্রচারণাও করেছেন তিনি। এই অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘ফেসবুক ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে আমাদের অনেক বন্ধু ও ভক্ত–অনুসারী আছেন। তাঁরা আমাদের পোস্টগুলো দেখেন। আমাদের এই পোস্টগুলোর মাধ্যমে ছবির খবর তাঁদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। এতসংখ্যক অনুসারীর কাছে আমাদের খবরগুলো যাচ্ছে, এটা একটা বড় ব্যাপার। এ কারণে আমি মনে করি, ছবির প্রচারে এটি বেশ ভূমিকা রাখে।’
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিয়ে বেশ কয়েকবার বিপাকে পড়েছেন অভিনয়শিল্পী শবনম বুবলী। বারবার তাঁর অ্যাকাউন্টটি হ্যাক করা হয়েছে। তবু ছবির প্রচারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির পরিবর্তন হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আগে ছবির প্রচারে মাইকিং করে, বিজ্ঞাপন দিয়ে আরও নানা কৌশল ব্যবহার করা হতো। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আসার ফলে প্রচারে পরিবর্তন এসেছে। এখানে অনেক সিনেমার গ্রুপ আছে। এ ছাড়া তারকাদের অনেকে ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে বেশ অ্যাকটিভ থাকেন। তাঁরা অ্যাকাউন্টগুলো থেকে, পেজ থেকে ছবির প্রচার করেন। এটা খুবই ইতিবাচক দিক বলে মনে করি।’
আরেক অভিনয়শিল্পী নুসরাত ফারিয়ার কাছে এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছবির প্রচারে খুবই শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। তাঁর ভাষায়, শুধু দেশের মধ্যেই নয়, মুহূর্তে দেশের বাইরের সব মানুষকে একটা পোস্টের মাধ্যমেই জানিয়ে দেওয়া যায় সবকিছু। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘অনলাইনে ছবির প্রচার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার কথাই ধরুন। শুটিংয়ের জন্য নানা সময়ে দেশের বাইরে যাই। সেখান থেকে একটা পোস্টের মাধ্যমেই আমার ছবির খবর জানাতে পারি। এটা এত সহজ একটা মাধ্যম যে যেকোনো জায়গা থেকেই পৃথিবীর সবার কাছে ছবির খবর পৌঁছানো যায়। সে ক্ষেত্রে এটা খুবই বড় রকমের একটা ব্যাপার বলা যায়। মুহূর্তের মধ্যেই সবাই আমার ছবিটি সম্পর্কে জানতে পারে।’
শাকিব খান বলেন, এখন সবকিছু ডিজিটালি এগোচ্ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো সাংঘাতিকভাবে ছবির প্রচারে বড় ভূমিকা রাখছে।
তবে এই নায়ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কিছু বিষয় নিয়ে আপত্তিও তুলেছেন। তাঁর ভাষায়, সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে যেমন খুব সহজভাবে একজন তারকা তাঁর ছবির প্রচার করতে পারেন, তেমনি আবার যে কেউ এখানে সহজে লিখতে পারছেন বলে অনেক সময় বিপত্তিও ঘটছে। একটা ছবি নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা না করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে যাচ্ছেতাই ভাষা ব্যবহার করে লেখালেখি করা হয়। এটা ঠিক নয়। এটাকে এখনো গঠনমূলক ও সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানো উচিত। পুরো বিশ্বে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ছবির বড় একটা প্রচার করা হচ্ছে।