স্থান, রাজধানীর জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবন। সময়, বেলা ৩টা বেজে ৫ মিনিট। মাইক্রোবাস থেকে নামলেন শিক্ষক, গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্য রচয়িতা কমল স্বরূপ। সঙ্গে মেয়ে আরড্রা স্বরূপ, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা অঞ্জন জাহিদুর রহিম ও বিসিটিআইয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
গাড়ি থেকে নেমেই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করমর্দন করলেন। এরপর সোজা চলে গেলেন মিলনায়তনে। আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব–২০১৯–এ যোগ দেওয়ার জন্য শুক্রবার বাংলাদেশে এসেছেন তিনি।
সেখানে তখন চলছে ১৯৮৮ সালে নির্মিত কমল স্বরূপ পরিচালিত ‘ওম দার বি দার’। মানে নির্মাতা এসে পৌঁছানোর আগেই পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী বেলা ঠিক তিনটায় শুরু হয়েছে ছবির প্রদর্শনী। যেটা বাংলাদেশের আয়োজনে ব্যতিক্রমই বলতে হয়। যে পোস্টমর্ডানিস্ট ছবিটি নির্মাণের ২৬ বছর পর ২০১৪ সালে ভারতে মুক্তি পায়। এরপর প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত চলেছে কমল স্বরূপের ‘পুষ্কর পুরাণ’ আর ‘সমুদ্র মন্থন’। এর মধ্যেই এক ফাঁকে ঘুরে দেখলেন শিল্পকলা একাডেমির মাঠে অনুষ্ঠিত পার্বত্য মেলা। এক ফাঁকে চলল প্রথম আলোর সঙ্গে কথোপকথন।
প্রথমবার ঢাকায় এসে কেমন লাগছে? ‘মনে তো হচ্ছে না অন্য কোথাও এসেছি। আমাদের মতোই সবকিছু।’ যানজটে পড়েননি? ‘হ্যাঁ, ঢাকার যানজট আমার ভালোই লেগেছে। ইচ্ছা আছে, সাইকেল নিয়ে ঘুরব, আর যানজটে বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আশপাশ দেখব।’ তা বটে, ঢাকার যানজটে বসে কমল স্বরূপ মনোযোগ দিয়ে মানুষ পর্যবেক্ষণ করেছেন। একজন নির্মাতার জন্য নাকি সেটা জরুরি।
কমল স্বরূপের ফেসবুকে গেলে দেখবেন, কেবল দেখেই ক্ষান্ত দেননি, ছবিও তুলেছেন টপাটপ। সেসব ছবিতে উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ৫২তম সমাবর্তনের ছবি, ম্যানিকুইন, ঘরবাড়ি, রাস্তায় আটকে থাকা সিএনজি, রিকশা আর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের দোকান।
কথায় কথায় জানালেন, বাংলাদেশি সিনেমা দেখা হয়নি। তবে পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সুবর্ণা সেঁজুতি টুসির স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মীনালাপ’ দেখে ভালো লেগেছে তাঁর। সুবর্ণা সেঁজুতি টুসি বাবাকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন তাঁর প্রিয় শিক্ষকের এ অনুষ্ঠানে।
বাংলাদেশের সিনেমা দেখার ইচ্ছা পোষণ করেছেন কমল স্বরূপ। আয়োজন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আর কথা দিয়েছেন, আবার আসবেন বাংলাদেশে। চিত্রনাট্যের ওপর ১০ দিনের একটা কর্মশালায় অংশ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
কমল স্বরূপের মেয়ে, প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পী আরড্রা বাংলাদেশের যা-ই দেখছেন, বলছেন, ‘ওয়াও’। শিল্পকলা একাডেমির মাঠে পার্বত্য মেলা ঘুরে ঘুরে দেখলেন। পিঠা খেলেন। দেখলেন বায়োস্কোপও। বাদামের কটকটি খেয়ে খুবই মজা পেলেন। পানিপুরি আর সফেদা ফল খাওয়ার ইচ্ছার কথাও জানালেন। আজিজ মার্কেটের ভাত, ডাল আর ভর্তার প্রশংসাও করেছেন।
অন্যদিকে বাবা কমল স্বরূপও জানালেন, বাংলাদেশের খাবার ভালো লেগেছে তাঁর। ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ উৎসব। তত দিন বাংলাদেশে থাকবেন তিনি।
বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের উদ্যোগে ১৯৮৮ সালে প্রথম আয়োজন করা হয় মুক্তধারার চলচ্চিত্রের এ উৎসব। এরপর থেকে নিয়মিত দ্বিবার্ষিক ভিত্তিতে এটি আয়োজিত হয়ে আসছে। এ উৎসবই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম চলচ্চিত্র উৎসব হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আসছে।