সভ্যতার বিজয় উদ্যাপন

সভ্যতা
সভ্যতা

‘এখনো সেই সব গান শুনলে গায়ের লোম কেঁপে দাঁড়ায়’, শিহরিত কণ্ঠে বলছিলেন সংগীতশিল্পী সভ্যতা। কোন গান? ওই তো, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের। সভ্যতার বাবা খোদাবক্স সানু শুধু শিশু একাডেমিতেই গান শেখাতেন না। নিজের সন্তানদেরও সংগীতের গুরু তিনি। সভ্যতাকে তাঁর বাবাই শিখিয়েছেন দেশের গান। শিখিয়েছেন সেই গানগুলোর কথা কেন এমন, বুঝিয়েছেন সেই কথার ক্ষমতা কতটা, কীভাবে এই গানগুলো গাইতে, কেমন হতে হয় অভিব্যক্তি। বাবার কাছ থেকে দেশের গানের গভীরতা জেনেই নিজের মধ্যে সেই গানগুলোর তাৎপর্য ধারণ করেন সভ্যতা। সেই টানে ৮ ডিসেম্বর তিনি ছুটে গিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে সভ্যতা ৮ ডিসেম্বর সেখানে গান গাইতে যান। সেদিন ছিল ৩ নম্বর সেক্টর স্বাধীন হওয়ার দিন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ওই সেক্টরের অন্তর্গত অঞ্চল ছিল। এই উপলক্ষেই সভ্যতা আর তাঁর ভাই সংগীতশিল্পী খৈয়ম সানু সন্ধি দেশের গান গাইতে গিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সবাইকে গান শুনিয়ে তাঁরা ফিরে এসেছেন একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে। কী সেই মুগ্ধতা? জানতে চাইলে সভ্যতা বলেন, ‘স্কুলের বাচ্চারা দেয়ালে দেয়ালে ছবি এঁকেছিল। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অসাধারণ সব ছবি। সেখানে এসেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা আমার কাছে বাস্তব জীবনের নায়ক। তাদের মুখ থেকে তাদের যুদ্ধের গল্প শুনতে পারাটা অনেক বড় ব্যাপার।’ 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অাঁকা দেয়ালের সামনে সভ্যতা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ বছর বিজয় দিবসের প্রথম অনুষ্ঠানটি করে সভ্যতার মন আনন্দে টইটম্বুর। কারণ, সেখানকার যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে গেছে সভ্যতাকে সেটা হলো—‘গান গাইলাম, বাচ্চারা শুনল। এরপর যে যার মতো বার্ষিক পরীক্ষা দিতে ক্লাসে চলে গেল। পড়াশোনার পাশাপাশি সংস্কৃতিচর্চা তো ঠিক এমনভাবেই হওয়া উচিত। পড়ার সময় পড়তে হবে, আবার থাকবে সংস্কৃতিচর্চার সুযোগও। সব স্কুলেই যদি এমন হতো—পরীক্ষার দিন পরীক্ষাও হবে, আনন্দও হবে! 

দেশের গান গাওয়া হয় প্রায়ই। সবই শিখিয়ে গেছেন তাঁর প্রয়াত বাবা। সভ্যতা জানালেন, তাঁর বাবা তাঁদের তিন ভাইবোনকে—স্বাগতা, সন্ধি ও সভ্যতাকে এমনভাবে গড়েছেন, যে কেউ যেকোনো সময় অনুরোধ করলে তৎক্ষণাৎ মঞ্চে দাঁড়িয়ে গাইতে পারবেন দেশের গান, মুক্তির গান, বিজয়ের গান।