দেবারতি ভট্টাচার্য: শুনেছি, ৬২ বছর বয়সেও আপনার এই ফিটনেসের পেছনে আছে দক্ষিণ ভারতীয় খাবার?
অনিল কাপুর: হা হা হা, আসলে দক্ষিণ ভারতীয় খাবার খুব নিরাপদ। তাই আমি এসব খাবার খুব পছন্দ করি। বিভিন্ন ধরনের ডাল দিয়ে দোসা খাই। তবে সবচেয়ে বেশি পছন্দ ভাপে বানানো ইডলি। এটার মতো নিরাপদ খাবার আর হয় না। আমি নিয়ম করে রোজ ব্যায়াম করি। সকালে হাঁটি। সব ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্যের অভ্যাস থেকে নিজেকে দূরে রাখি।
দেবারতি: আপনি সব সময় হাসিখুশি থাকেন। এই দুশ্চিন্তায় ভরা যুগে কী করে নিজেকে এত ইতিবাচক রাখেন?
অনিল: সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমি বেঁচে আছি। এটাই আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। আমার জীবনেও স্ট্রেস আসে। কিন্তু একে আমার আশপাশে বেশি সময় টিকতে দিই না। আধ থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে এর কোনো প্রতিকার বের করে ফেলি। আর আমি ইতিবাচক (পজিটিভ) মানুষের সান্নিধ্যে থাকার চেষ্টা করি। আমার কাছে জীবনের প্রতিটি দিন নতুন মনে হয়। তবে শুরু থেকেই আমি এ রকম পজিটিভ ছিলাম না। আমার সিনেমা না চললে বা গণমাধ্যমে আমার নামে বাজে কিছু ছড়ালে আগে আমার খারাপ লাগত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি বুঝতে পেরেছি। নিজেকে অনেক পরিপক্ব করে গড়ে তুলেছি।
দেবারতি: আপনার সঙ্গে প্রায় সময়ই আপনার সন্তানদের তুলনা করা হয়। বিষয়টিকে কীভাবে নেন?
অনিল: আমাকে আজ এই জায়গায় পৌঁছাতে অনেক সংঘর্ষ করতে হয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। অনেক পরিশ্রম করেছি আমি। আমার একদমই ভালো লাগে না, যখন আমার তুলনা আমার বাচ্চাদের সঙ্গে করা হয়। ওরা তো মাত্র কয়েক বছর আগে অভিনয়ে এসেছে। অভিজ্ঞতা দিয়ে কাজে পরিপক্বতা আসে। তাই ওদের সময় দিতে হবে।
দেবারতি: বাবা হিসেবে আপনি কেমন?
অনিল: আমি সন্তানদের একদম বকাঝকা করতে পারি না। আমার স্ত্রী বলে আমাকে একটু কড়া হওয়ার জন্য। আমার পক্ষে সম্ভব নয়
দেবারতি: বলিউডে ৪০ বছর কাটানোর পর এখন ছবির সফলতা-ব্যর্থতা আপনাকে কতটা প্রভাবিত করে?
অনিল: আমাকে এখন আর এতটা প্রভাবিত করে না। আমি আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। কোনো বিষয় নিয়ে খুব বেশি ভাবনাচিন্তা করি না। ছবি না চললে আমি ঘাবড়ে যাই না। তবে আজও ছবি মুক্তির আগে উৎকণ্ঠায় থাকি। আমি মনে করি, ছবি সফলতার জন্য সঠিক ছবি, সঠিক চরিত্র নির্বাচন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলেন অমিতাভ বচ্চন। আমি ১৭ বছর থেকে নিজের ইগোকে (অহংবোধ) দূরে রেখে কাজ করা শুরু করেছি। তাই আগের চেয়ে এখন অনেক ইতিবাচক থাকতে পারি।
দেবারতি: আপনার প্রযোজিত গান্ধী মাই ফাদার ছবিটি সফলতা পায়নি। এই ব্যর্থতাকে কীভাবে দেখেন?
অনিল: আমি অনেক পরিশ্রম করে গান্ধী মাই ফাদার বানিয়েছিলাম। কিন্তু দর্শক ছবিটা পছন্দ করেনি। তবে এই ছবি দুটো পুরস্কার পেয়েছিল। ছবির সবাই ছবিটা না চলার জন্য ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু আমি খুব একটা ঘাবড়াইনি। আমি খুব কম দামে ছবিটা হলে ছেড়ে ছিলাম। এর ফলে আমার দুশ্চিন্তা কম হয়েছিল। ওই সময় আমি স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবির শুটিং করছিলাম। স্লামডগ-এর জন্য খুব একটা পরিশ্রম আমি করিনি। কিন্তু ছবিটা অস্কারে মনোনয়ন পায়। গান্ধী মাই ফাদার-এর ব্যর্থতা থেকে আমি স্লামডগ মিলিয়নিয়ার-এ সফলতা পেয়েছি। জীবনে এভাবেই ভালো-মন্দের ভারসাম্যের মধ্য দিয়ে নানা কিছু ঘটতে থাকে।