সংযোগের ভাষা সংগীত

গানে-সুরে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন ভারতের শিল্পী শংকর মহাদেবন। গতকাল রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায়। ছবি: সুমন ইউসুফ
গানে-সুরে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন ভারতের শিল্পী শংকর মহাদেবন। গতকাল রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায়।  ছবি: সুমন ইউসুফ

গোপন রাখা হয়েছিল একটা চমক। কী সেটা? সূত্র দেওয়া হলো, দীপাবলি আলোর উৎসব। সুত‍রাং গান শেষে উঠে যাওয়া চলবে না। দীপাবলি উৎসব উপলক্ষে গান করবেন ভারতের জনপ্রিয় সংগীতত্রয়ী শংকর-এহসান–লয়। কে জানত, এরপর আলোয় ভাসবে ঢাকার আকাশ! দীপাবলির আলো!

গতকাল শুক্রবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটির এক্সপো জোনে ছিল ‘দিওয়ালি কনসার্ট’। মূলত বাংলাদেশে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকদের জন‍্য নিয়মিত এ আয়োজন করে ভারতীয় হাইকমিশন। এতে অংশ নেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও। এ বছর এতে সহযোগিতা করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ ও বেঙ্গল গ্রুপ লিমিটেড। এ বছরের দীপাবলি উৎসবটি অন্যবারের থেকে আরও উজ্জ্বল। কনসার্টের শুরুতে স্বাগত বক্তব‍্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, ‘দেশে থাকলে বন্ধু-স্বজন-পড়শিদের সঙ্গে দীপাবলি উদ্‌যাপন করতেন। আজ বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গে করুন। এ উৎসবের মধ‍্য দিয়ে আমরা কামনা করব জ্ঞান অজ্ঞতাকে, আলো অন্ধকারকে এবং ভালো মন্দকে হটিয়ে দিক।’

ঢাকায় প্রথমবার কোনো গণ-অনুষ্ঠানে গাইতে এসেছেন শংকর-এহসান-লয়। গান শুরু করার আগে শংকর মহাদেবান দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘দীপাবলি শেষ। তবে আপনাদের সঙ্গে যেদিন দেখা হলো, সেদিনই দীপাবলি।’ তিনি শুরু করেন তুমুল জনপ্রিয় ‘দিল চাহতা হ‍্যায়’ গানটি দিয়ে। এরপর গেয়ে শোনান ‘কোয়ি ক‍্যাহে ক‍্যাহেতা র‍্যাহে’, মাই নেম ইজ খান ছবির ‘সাজনা’, ‘বুমরাহা’, ‘কাল হো না হো’সহ ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় কিছু গান। এ ছাড়া ছিল রাজস্থানি একটি গান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুম্বাইয়ের সুনিধি ঘাটালে। উৎসব বলে কথা, তাঁর গানের তালে আসন ছেড়ে উঠে উদ্যম নৃত‍্য জুড়ে দেন শ্রোতারা।

বলিউডের সাড়া জাগানো মিশন কাশ্মীর, দিল চাহতা হ‍্যায়, কাল হো না হোর মতো ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেছেন শংকর মহাদেবান। তার আগে জ‍্যাজ, ব্লুজ, রক ঘরানার সংগীত চর্চা করতেন এই শিল্পী। তাঁকে নিয়ে কবি জাভেদ আখতার বলেছিলেন, ‘শংকর থামতে জানে না।’

এই শিল্পীর কর্ণাটকি সংগীতের গুরু প্রয়াত টি কে বালামানি। গুরু হিসেবে তিনি ছিলেন মুক্তমনা। ফলে সব ধরনের গান শোনা ও শেখার ব‍্যাপারে উৎসাহ দিতেন তিনি। সংগীতের নোটেশন লেখাও শিখেছেন তাঁর থেকে।

কর্ণাটকি গান বা বলিউড—সবটাতেই স্বাচ্ছন্দ্য শংকরের। সংগীত তাঁর সংযোগের ভাষা। তবে শাস্ত্রীয় সংগীত শেখাটা তাঁর জীবনের সেরা অর্জন। অন‍্য কোনো ঘরানা সেভাবে শেখেননি তিনি। ঢাকার শ্রোতাদের হতাশ করেননি এই শিল্পী। গেয়েছেন প্রায় সব ধরনের গান।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব‍্যে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐক‍্য তৈরিতে কাজ করছি। সে জন‍্য এ উৎসবে আমরা অংশ নিয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমাদের ও ভারতের জন‍্য সেটা প্রাসঙ্গিক।’

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘নিজেদের এলাকায় একটা সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নিয়ে ভালো লাগছে। বেঙ্গল গ্রুপকে সঙ্গে নিয়ে শিগগিরই আমরা একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করব এ এলাকায়। যেখানে ৩৬৫ দিন অনুষ্ঠান হবে।’

গান শুনতে এসেছিলেন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব‍্যক্তিরা। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন শিল্পী মেহরীন। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় ছিল ব্লুজ কমিউনিকেশন। অনুষ্ঠানস্থলে বেঙ্গল এক্সপ্রেসের খাবারের স্টল ছিল। অনুষ্ঠান শেষে বসুন্ধরার আকাশ আতশবাজির আলোয় রঙিন
হয়ে ওঠে।