‘চার বছর ধরে মিডিয়াতে কাজ করছি। অনেক ছেলেমেয়ে বিজ্ঞাপন আর নাটকে কাজ করছেন। কিন্তু হাতে গোনা কজন ছাড়া বেশির ভাগই ঝরে যাচ্ছেন। আমি ওই ঝরে পড়ার রাস্তায় যেতে চাই না। অনেক কষ্ট করছি। লক্ষ্য শুধু একটা—ভালো অভিনয়শিল্পী হওয়া।’ বললেন মডেল ও অভিনয়শিল্পী ফারহান আহমেদ। সবার কাছে তিনি জোভান নামেই পরিচিত। ২০ ডিসেম্বর দুপুরে এলেন প্রথম আলো কার্যালয়ে।
নিজের কাজ নিয়ে বললেন, ‘আমি সব সময়ই কাজের ভিন্নতায় বিশ্বাস করি। আর এ ধরনের কাজ করার জন্য একাধিক পরিচালক ও সহশিল্পীর সঙ্গে কাজ করছি। তাতে আলাদা অভিজ্ঞতা হয়। সব অভিজ্ঞতা এক হলে নিজের কাজের ক্ষেত্রটা মজবুত হবে।’
নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস জোভানের। জানালেন, হুমায়ূন আহমেদের বই তাঁর খুব প্রিয়। বললেন, ‘বই পড়ার কারণে জানার পরিধি বাড়ে। ক্যামেরার সামনে তাৎক্ষণিকভাবে অভিনয় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়।’
প্রথম অভিনীত নাটক প্রচারের পরই আলোচনায় আসেন জোভান। জানালেন, ২০১৩ সালে আতিক জামানের ইউনিভার্সিটি ধারাবাহিকে প্রথম অভিনয় করেন। নাটকটি প্রচারের পর থেকে অভিনয়ে আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
কিন্তু তাঁর শুরুর পথ খুব একটা মসৃণ ছিল না। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাঁকে। জোভান জানান তাঁর শুরুর দিকের কথা। ২০১১ সাল। প্রাণের একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার আশা নিয়ে প্রাথমিক বাছাইয়ে অংশ নেন। বাছাই শেষে চতুর্থ শ্রেণির মডেল হিসেবে তাতে কাজ করতে হয় তাঁকে। সেই থেকে টানা দেড় বছর কয়েকটি বিজ্ঞাপনে মূল মডেলের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে জোভানকে। তাঁর ভাষায়, ‘একটা সময় হতাশ হয়ে পড়ি। সিদ্ধান্ত নিই, আর কাজ করব না।’
এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর বন্ধু সিয়ামের সহযোগিতায় একটা পরিবর্তন আসে। ইউনিভার্সিটি ধারাবাহিকের জন্য প্রাথমিক বাছাইয়ে অংশ নেন জোভান। শতাধিক ছেলেমেয়ের মধ্য থেকে এই বাছাইয়ে টিকে যান তিনি। ধারাবাহিকটিতে অভিনয়ের সুযোগ পান।
ধারাবাহিকের প্রচার শুরু হওয়ার পর একাধিক বিজ্ঞাপনে কাজের প্রস্তাব পান। এই ধারাবাহিকের পর এক বছর আর কোনো নাটকে অভিনয় করেননি। এই সময় তিনি কাজ করেছেন শুধুই বিজ্ঞাপনে। জোভানের মতে, বাংলালিংক সেলফি আর গাজী টিভি—এই দুটি বিজ্ঞাপন তাঁকে মজবুত অবস্থান তৈরি করে দেয়।
এখন নাটক, বিজ্ঞাপন—দুই জায়গায় সমান তালে কাজ করছেন তিনি। চ্যানেল নাইনে সম্প্রতি প্রচারিত ধারাবাহিক নাটক রাব্বু ভাইয়ের বউ এবং গত কোরবানির ঈদে মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়া ব্রাদার্স নাটকে জোভানের অভিনয় দারুণ প্রশংসিত হয়। নতুন সম্ভাবনাময় অভিনয়শিল্পী হিসেবে নির্মাতাদের কাছে আস্থার জায়গায় পৌঁছে যান।
এখন ব্যস্ততা কী নিয়ে? জোভান জানান, ঝালমুড়ি, হাউজ নম্বর ৪৪, নাইন অ্যান্ড আ হাফ আর শূন্যতা নামে চারটি ধারাবাহিকে কাজ করছেন। এর মধ্যে প্রথম তিনটি ধারাবাহিকের প্রচার শুরু হয়েছে। শুটিং শেষ করেছেন প্রেমিকা আবশ্যক, শো-অফ নামে দুটি এক ঘণ্টার নাটক।
চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন জোভান। অনন্য মামুনের অস্তিত্ব চলচ্চিত্রে তিশার ভাইয়ের চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। বললেন, ‘হুট করেই চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। চলচ্চিত্রের ভাষা আলাদা। তবে যে মাধ্যমেই হোক, নিয়মিত অভিনয় করব।’
এক ভাই আর এক বোনের মধ্যে জোভান বড়। ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করবেন। কিন্তু বাবা-মায়ের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে এখন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ইউআইইউ) বিবিএ পড়ছেন তিনি।