শুরু হয়েছে লিবারেশন ডকফেস্ট বাংলাদেশ

এসব তথ্যচিত্রে উঠে আসবে এই সময়ের কথা এবং মানুষের মুক্তি ও অধিকারের কথা। ছবি: সংগৃহীত
এসব তথ্যচিত্রে উঠে আসবে এই সময়ের কথা এবং মানুষের মুক্তি ও অধিকারের কথা। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবছর জাঁকজমকভাবে অনুষ্ঠিত হয় আয়োজনটি। এবারও পরিকল্পনা ছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে বড় পরিসরে লিবারেশন ডকফেস্ট বাংলাদেশ আয়োজন করা হবে। কিন্তু সময় পক্ষে নয়। প্রায় সারা বিশ্বে এখন করোনায় কাতর। দেশে দেশে চলছে লকডাউন। ঘর থেকে বের হওয়াও ঝুঁকির মুখে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার থেকে অনলাইনে শুরু হয়েছে লিবারেশন ডকফেস্ট। রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত এ আসরটি অষ্টমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এবারের উত্সবের এবারের স্লোগান ‘নতুন সময়ে নতুন চলচ্চিত্র’, আর উত্সবের থিম ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিদাতা’। বেলা ১১টায় জুম সংযোগমাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন হয়। আয়োজকেরা জানান, বিশ্বের নানা দেশের এসব তথ্যচিত্রে উঠে আসবে এই সময়ের কথা এবং মানুষের মুক্তি ও অধিকারের কথা। এবার সব আয়োজনই হচ্ছে, তবে তা অনলাইনে।

লিবারেশন ডকফেস্টের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে অনলাইন চলচ্চিত্র উত্সব। দেশ-বিদেশের তথ্যচিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে এ উত্সব। এ উত্সবে ভারত, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, সিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া, জাপান, জার্মানি, গ্রিসসহ বিশ্বের ৫০টি দেশের নির্মাতাদের প্রামাণ্যচিত্র উপভোগ করবেন দর্শকেরা। উত্সব চলবে ২০ জুন পর্যন্ত। এবারের উত্সবে ৫০টি দেশের ৮৫টি প্রামাণ্যচিত্র অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রমাণ্যচিত্র ১৫টি। দেশের ও দেশের বাইরের দর্শকেরা সরাসরি বিনা মূল্যে দেখতে পারবেন এ উত্সবের প্রামাণ্যচিত্রগুলো।

উত্সবে ছবি দেখতে আগ্রহী দর্শকদের নিবন্ধন করতে হবে। www.liberationdocfestbd.org এই ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশনের পাশাপাশি উত্সবের অন্তর্ভুক্ত ছবিসহ নানা তথ্য জানা যাবে। রেজিস্ট্রেশনকারী সবাই প্রামাণ্যচিত্রের তালিকা, সময়সূচি এবং তথ্যাদি নিয়মিতভাবে পাবেন। তিনটি বিভাগে প্রদর্শিত হবে উত্সবের ছবিগুলো। প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বিভাগের পাশাপাশি বিভিন্ন প্যাকেজে প্রামাণ্যচিত্রগুলো প্রদর্শিত হবে। জাতীয় বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিদাতা’ শাখায় থাকছে বঙ্গবন্ধু ও তৃতীয় বিশ্বের নেতাদের নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। ‘সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক বিভাগে দেখা যাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য ও সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নির্মিত ‘ওয়ান মিনিট ফিল্ম’ সেকশনে প্রদর্শিত হবে পূর্বভারতের নতুন প্রামাণ্যচিত্রগুলো। আগ্রহী দর্শক বিনা মূল্যে এসব প্রামাণ্যচিত্র দেখতে পারবেন।

আগ্রহী দর্শক বিনা মূল্যে এসব প্রামাণ্যচিত্র দেখতে পারবেন। ছবি: সংগৃহীত

উত্সবের উদ্বোধনী দিন আন্তর্জাতিক বিভাগে প্রদর্শিত হয় শ্যারলোট মুলার নির্মিত বেলজিয়ামের প্রামাণ্যচিত্র ‘নো ম্যান'স ল্যান্ড’। জাতীয় বিভাগের প্রদর্শিত হবে বিপ্লব সরকার নির্মিত বাংলাদেশি ছবি ‘লাইফ ইজ এভরিহোয়্যার’। স্পেশাল প্যাকেজে প্রদর্শিত হবে কিভনি শশী পরিচালিত ভারতীয় ছবি ‘আন্ডার দ্য লংফুরু’।

দেশে দেশে মানুষের মুক্তি ও মানবাধিকার রক্ষার নানা প্রচেষ্টা আর সংগ্রাম সেলুলয়েডে তুলে ধরতে মুক্তিযদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ থেকে ২০০৫ সালে মুক্তি ও মানবাধিকার প্রামাণ্যচিত্র উৎসব শুরু করেছিল। উৎসবের মূল উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের মুক্তিসংগ্রাম ও মানবাধিকার রক্ষার যে লড়াই পৃথিবীর নানা দেশে চলছে, তার বাস্তব চিত্র বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে প্রামাণ্যচিত্রের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা এবং বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তির অব্যাহত প্রয়াস চলচ্চিত্রে প্রতিফলন জোরদার করা। আজকের পৃথিবীতে নানা স্থানে সন্ত্রাস ও মানবাধিকার হরণের ঘটনা যেমন বেড়ে চলেছে, তেমনি মানুষের লড়াই, মুক্তিসংগ্রাম ইত্যাদি সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে ধরার চেষ্টাও কম নয়। বিশেষত প্রামাণ্যচিত্রের ব্যাপক ভূমিকার কথা এ প্রসঙ্গে না বললেই নয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত এ উৎসবটি কয়েক বছরের বিরতির পর ২০১৯ সাল থেকে আবার শুরু হয়েছে।