রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রসূনের 'নিগ্রহকাল'

‘নিগ্রহকাল’ ছবির প্রদর্শনীতে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
‘নিগ্রহকাল’ ছবির প্রদর্শনীতে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশেরই প্রধান সংকট এমন নয়, আন্তর্জাতিকভাবেই এ মুহূর্তে চলমান বৈশ্বিক সংকটগুলোর মধ্যে তা অন্যতম। এই সংকট নিয়ে গত দুই বছরে বিশ্বের নানা মাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়েছে অসংখ্য সচিত্র সংবাদ প্রতিবেদন, নির্মিত হয়েছে অসংখ্য তথ্যচিত্র।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নিগৃহীত ও বিতাড়িত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এখন আশ্রিত আছে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে। ‘সোফিয়া’ নামের একটি রোবটকে যখন নানা দেশ সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করছিল প্রযুক্তিবিষয়ক নানা সম্মেলনে, তখন প্রসূন রহমান নির্মাণ করছিলেন রক্ত-মাংসের এক সোফিয়ার গল্প, যে সোফিয়ার কোনো নাগরিকত্ব নেই। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার আকুতিকে ধারণ করে তিনি নির্মাণ করেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘জন্মভূমি’। চলচ্চিত্রটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মুক্তি পায়। এরপর বছরজুড়ে বিশ্বব্যাপী নানা চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণের পাশাপাশি জাতিসংঘ সদর দপ্তরেও চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এবার তথ্য ও গবেষণানির্ভর আরও একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন প্রসূন রহমান। নাম ‘নিগ্রহকাল’। এর চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন তিনি। ৮৪ মিনিট দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রটি এরই মধ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। এরপর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মহাখালীর এসকেএস টাওয়ারে স্টার সিনেপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হলো এই তথ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী। আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ অনেকে।

‘নিগ্রহকাল’ ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

‘নিগ্রহকাল’ সম্পর্কে পরিচালক প্রসূন রহমান বলেন, ‘একজন সমাজসচেতন নির্মাতার কাজ হচ্ছে, তাঁর কাজে তাঁর সময়কে ধারণ করা। তাঁর সময়ের নৃতাত্তিক ইতিহাসকে ধারণ করা, যে ঘটনাগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে প্রভাব ফেলে, তার একটি নৈর্ব্যক্তিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা। ভবিষ্যতের জন্য যা হয়তো একটি সংরক্ষণমূলক দলিল হয়ে থাকার ক্ষমতা রাখে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সারা বিশ্ব থেকে যা নির্মিত হয়েছে, তা মূলত দুই ধরনের। এক ধরনের চলচ্চিত্র হচ্ছে অনেকটাই বর্ধিত সংবাদ প্রতিবেদন, আরেক ধরনের চলচ্চিত্র হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থার অনুদান বরাদ্দের আবেদন। কোনোটাই ভুল কিছু নয়। তবে কোনোটাই সম্পূর্ণ এবং যথেষ্ট সম্পন্ন নয়। “নিগ্রহকাল” চলচ্চিত্রে আমরা চেষ্টা করেছি, রোহিঙ্গা সংকটের সব দিকে আলো ফেলে দেখার। সংকটের ইতিহাস, কার্যকারণ এবং সমাধানের সূত্রগুলো দেশের ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের বক্তব্যসহ বিশ্লেষণ করে দেখার। চলচ্চিত্রের ছাত্র হিসেবে আমি জেনেছি, সংবাদ প্রতিবেদনের কাজ যেখানে শেষ হয়, প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের কাজ শুরু হয় সেখান থেকে। আমার চেষ্টাও ছিল তা–ই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ চলচ্চিত্রটি দেশব্যাপী প্রদর্শনের ব্যবস্থা করব, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎসবগুলোতেও অংশ নেব।’

প্রসূন রহমানের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সুতপার ঠিকানা’ মুক্তি পায় ২০১৫ সালে। এরপর ২০১৮ সালে নির্মাণ করেন দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘জন্মভূমি’। বর্তমানে নির্মাণের শেষপর্যায়ে রয়েছে তাঁর তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘ঢাকা ড্রিম’। একই সঙ্গে তারেক মাসুদকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘ফেরা’র সিরিজ হিসেবে নির্মাণ করছেন আরও তিনটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। এর মধ্যে একটি নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেলকে নিয়ে। ‘নদী ও নির্মাতা’ নামের এ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের চিত্র ধারণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সৃজনশীল চলচ্চিত্র ও বিকল্পধারার আর দুই দিকপাল মোরশেদুল ইসলাম ও মানজারে হাসীন মুরাদকে নিয়ে এই সিরিজের বাকি দুটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের কাজ পরিকল্পনা করা হচ্ছে।