এখন তো বিশ্ব করোনা মহামারির কবলে বন্দী। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে রোজ হয়তো আপনি একবার রিকশায় চড়েন। কিন্তু কখনো জানা হয়ে ওঠেনি রিকশার চাকা আর প্যাডেলের সঙ্গে ঘুরতে থাকা রিকশাচালকদের জীবনের গল্প। রিকশাওয়ালাদের জীবন নিয়ে তৈরি ছয় পর্বের প্রামাণ্যচিত্র সিরিজ, নাম ‘রিশকাওয়ালা’। করোনার দিনে অলিখিত লকডাউনে ঘরে থেকে বিনা মূল্যে সিরিজটি দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গুপী বাঘা প্রোডাকশনস।
সিরিজটির পরিচালক আরিফুর রহমান কিছুদিন আগে বাজার করতে বের হয়েছিলেন। বললেন, ‘দেখি কত মানুষ, কত বাজারের ব্যাগ। অনেকে রিকশা খুঁজছেন, কিন্তু পাচ্ছেন না। একজন তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্যকে বললেন, রিকশাগুলো কেন বন্ধ রেখেছেন? আমরা এখন এই বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরব কীভাবে? তখন আমার মনে হলো, এই মানুষগুলো বাজার নিয়ে ঘরে ফিরবেন কীভাবে, তা–ই নিয়ে চিন্তিত। অথচ এমন কঠিন সময়ে এই রিকশাওয়ালাদের কথা কেউ ভাবছে না যে এই দিনগুলোতে তাঁরা কীভাবে বেঁচে আছেন। তাঁরা, তাঁদের পরিবার কী খাচ্ছে। তাই মনে হলো, রিকশাওয়ালাদের নিয়ে বানানো সিরিজ তাঁদের জন্যই মুক্তি দিই। এরপর আমরা বিদ্যানন্দের সঙ্গে আলাপ করি। ওরা খুবই গুছিয়ে কাজ করে। ওরা শুনেই সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায়।’
এক ভিডিও বার্তায় এই পরিচালক জানান, ঢাকা শহরে রিকশাওয়ালাদের সংখ্যা ১৫ লাখের কম নয়। এই সময়ে তাঁদের জন্য সবচেয়ে বড় সংকটের নাম ক্ষুধা, কোভিড–১৯ নয়। খাবারের জন্য তাঁরা যদি রাস্তায় বের হন, তা তাঁদের এবং অন্যদের সবার জন্যই অনিরাপদ, ঝুঁকিপূর্ণ। তাই শিগগিরই রিশকাওয়ালা সিরিজটি দেখা যাবে গুপী বাঘার ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
সিরিজটি শুরুর আগে বিদ্যানন্দের বিকাশ ও অন্যান্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর জুড়ে দেওয়া হবে। সিরিজটি দেখে সাধ্যমতো বিদ্যানন্দের ফান্ডে অর্থ দিতে অনুরোধ করেছেন পরিচালক। আপনার দেওয়া অর্থ ঢাকা শহরের রিকশাওয়ালাদের খাবার জোগাবে। আর সেটির দায়িত্ব নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ। ৪৬ দিন ধরে চলবে এই ক্যাম্পেইন। চলতি সপ্তাহে টিজার ও ট্রেইলার প্রকাশিত হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে রিকশাওয়ালাদের নিয়ে এই অনুষ্ঠান। থাকবে অর্ক মুখার্জি ও সত্যকী ব্যানার্জির গান।
নীলচাঁদের দুঃখ, পুলিশের সার্জেন্ট নাকি ‘প্রাইভেটওয়ালাদের’ কিছুই বলেন না। রিকশাচালক দেখলেই বলেন ‘হ্যাটাও’। অন্যদিকে উপস্থাপক জয়ী আবার রিকশাওয়ালা রফিক ভাইকেই বানালেন প্যাসেঞ্জার। রিকশাওয়ালাদের নিয়ে গান শোনালেন। রফিক ভাইও কম যান না, তিনি জয়ীকে দিলেন ১০ টাকা। রিকশাচালক রেজাউল করিম গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন পালিয়ে, প্রেমিকার হাত ধরে। তারপর বিয়ে করে সংসার। রিকশা চালিয়েই সেটা চলে। তিনি যে সুখে আছেন, তা তাঁর গালভরা হাসি বলে দেয়। রিকশাচালক রোমানার গল্প আবার ভিন্ন। তিনি প্রেম করেন না; কারণ, কোনো ছেলেকেই তিনি বিশ্বাস করেন না। ছেলেরা নাকি প্রেমিকাকে মিথ্যা বলে। তাই প্রেমের প্রস্তাব পেলেও তা ছুড়ে ফেলে রিকশা নিয়ে চলছেন অজানা গন্তব্যে। আর সেই টাকায় পড়াশোনা শিখছে তাঁর ভাইবোন। এসব গল্প উঠে আসবে ৬ পর্বের এই সিরিজে।