রাজ্জাকের ৪ নায়িকা

রাজ্জাক-সুচন্দা
রাজ্জাক-সুচন্দা

যে সময় রাজ্জাক নায়ক হিসেবে দাঁড়ালেন, সেটা ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্রের উন্মেষকাল। ১৯৫৬ সালে এ দেশে নির্মিত হয়েছে প্রথম বাংলা ছায়াছবি মুখ ও মুখোশ। আবদুল জব্বার খানের এই ছবিটির মাধ্যমেই বাংলা চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয় এই বাংলায়।

কবরী-রাজ্জাক

সেটা ভাষা আন্দোলনের পরপর। প্রবল জাতীয়তাবাদী আবেগ তখন বাঙালি সমাজকে নিজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দিকে ফিরে তাকাতে বাধ্য করেছে। সমাজের নানা দিকেই তখন বাংলা, বাঙালির ইতিহাসের প্রতি নিজেকে নিবেদন করেছে বাঙালি। আর রাজনৈতিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ জাতীয়ভাবেই ক্ষোভ ও ক্রোধের জন্ম দিয়েছিল।

এ রকম একটি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পটভূমিকায় রাজ্জাক এসেছিলেন মাইগ্রেশন নিয়ে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে তিনি এলেন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায়, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায়। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তাঁর সংগ্রাম ছিল প্রাণান্তকর। কিন্তু যখন পায়ের নিচে মাটি পেলেন, তখন থেকেই নিজেকে প্রমাণ করলেন, হয়ে উঠলেন বাংলা চলচ্চিত্র অভিনয়ের মূল কান্ডারি।

ববিতা-রাজ্জাক

রাজ্জাক রিফিউজি, রাজ্জাক ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছেন, ফলে তাঁর প্রতি একটা অবজ্ঞা ছিল তখনকার ‘অভিজাত’ শিল্পীদের। নিজ ব্যবহার ও অভিনয়গুণে রাজ্জাক সেই বাধা এড়িয়েছেন, হয়ে উঠেছেন দর্শকপ্রিয় নায়ক।

রাজ্জাকের প্রথম নায়িকা সুচন্দা। ১৯৬৬ সালে মুক্তি পাওয়া জহির রায়হান পরিচালিত সেই ছবিটি দারুণ ব্যবসা করে। মনে রাখতে হবে, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে তখন ভারত থেকে ছবি আসা নিষিদ্ধ হয়েছে। উত্তম-সুচিত্রা জুটি তখনো দুই বাংলায়ই জনপ্রিয়। হঠাৎ সেসব ছবি এ দেশে না আসায় উত্তম-সুচিত্রা জুটির বিকল্প খুঁজতে লাগল মানুষ। রাজ্জাক-সুচন্দা হয়ে উঠলেন সেই বিকল্প।

রাজ্জাক-শাবানা

সুচন্দার সঙ্গে অনেক ছবি করেছেন রাজ্জাক। এর মধ্যে আছে আনোয়ারা, দুই ভাই, সুয়োরানী দুয়োরানী, কুচবরণ কন্যা, মনের মত বউ, সখিনা, জুলেখা, যোগ বিয়োগ, জীবন থেকে নেয়া, যে আগুনে পুড়ি, সংসার, প্রতিশোধ, জীবন সংগীত এবং অশ্রু দিয়ে লেখাজীবন থেকে নেয়া ছবিটি তো শুধু রাজ্জাকের অভিনয়জীবনের মাইলফলকই নয়, বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসেই একটি বাঁকবদলের কাহিনি।

তবে জুটি হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত ছিল রাজ্জাক-কবরী। উত্তম-সুচিত্রার মতো এই জুটির ছবিও ছিল সে সময়কার তারুণ্যের ক্রেজ। সুভাষ দত্তের আবির্ভাব চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই এই জুটি প্রতিষ্ঠিত হয়, এরপর এ জুটির উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো নীল আকাশের নীচে, দর্পচূর্ণ, প নেভে নাই, ময়নামতি, ক খ গ ঘ ঙ, ঢেউ এর পরে ঢেউ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই জুটির উল্লেখযোগ্য ছবি রংবাজ, বেঈমান ইত্যাদি।

রাজ্জাক-ববিতা জুটির ইতিহাস চমকপ্রদ। ১৯৬৮ সালে রাজ্জাক-সুচন্দা জুটির মেয়ে হিসেবে সংসার ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ববিতা। সেটি ছিল জহির রায়হানের ছবি। তারই পরিচালনায় ১৯৭০ সালে টাকা আনা পাই ছবিতে জহির রায়হান ববিতাকে নিয়ে আসেন রাজ্জাকের নায়িকা হিসেবে। এরপর চাষী নজরুল ইসলাম স্বরলিপি, রাজ্জাকের নিজের পরিচালিত প্রথম ছবি অনন্ত প্রেম এই জুটিকে জনপ্রিয়তম করে তোলে। এই জুটির উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে আছে পিচ ঢালা পথ, আলোর মিছিল, বাঁদী থেকে বেগম, সোহাগ, বিরহ ব্যথা ইত্যাদি।

১৯৬৯ সালে কাজী জহিরের মধু মিলন ছবি দিয়ে রাজ্জাক-শাবানা জুটির শুরু। ১৯৭২ সালে নির্মিত এ জুটির অবুঝ মন ছবিটি দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পায়। অবুঝ মন, সাধু শয়তান, মাটির ঘর, দুই পয়সার আলতা, চাঁপা ডাঙ্গার বউ, সখী তুমি কার, অমর প্রেম, রজনীগন্ধা এ জুটির উল্লেখযোগ্য ছবি।

এ ছাড়াও রাজ্জাক-রোজিনা জুটিও ছিল উল্লেখযোগ্য।