যে সিনেমা শাকিবের ভাগ্য বদলে দেয়

‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ ছবিতে শাকিব খান ও সাহারা। ছবি: সংগৃহীত
‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ ছবিতে শাকিব খান ও সাহারা। ছবি: সংগৃহীত

বড় পর্দার জনপ্রিয় তারকা শাকিব খানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবি ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’। এই ছবিই শাকিবকে ঢালিউডের মূল রাস্তায় তুলে দিয়েছিল। তারপর আর পেছনে তাকানোর দরকার পড়েনি। ২০০৮ সালের ১৩ জুন মুক্তির পর ছবিটি ব্লকবাস্টার হিট হয়ে যায়। আয়ের দিক থেকে সেই সময় বক্স অফিসের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলে এই ছবি। ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ মুক্তির পর শাকিব খানের পারিশ্রমিক বেড়ে ২০ গুণ হয়ে যায়। শুধু তা–ই নয়, এই ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করে রাতারাতি তারকা বনে যান সাহারাও। পরে শাকিব–সাহারা জুটির ‘প্রেম কয়েদী’, ‘বলবো কথা বাসর ঘরে’, ‘বস নাম্বার ওয়ান’, ‘টাইগার নাম্বার ওয়ান’, ‘তোমার জন্য মরতে পারি’, ‘খোদার পরে মা’সহ বেশ কয়েকটা ছবি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল।

জানা যায়, ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ ছবিতে শাকিব খানের পারিশ্রমিক ছিল দেড় লাখ টাকা। ‘সাইনিং মানি’ ছিল মাত্র ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু সেই সময় ছবিটি মুক্তির পর ব্যবসা করেছিল প্রায় ১৫ কোটি টাকা। আজ ১৩ জুন ছবিটি মুক্তির ১২ বছর, অর্থাৎ এক যুগ পূর্ণ হলো।

ঢালিউডে সে সময় ইতিহাস তৈরি করা ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ ছবিটির পরিচালক বদিউল আলম খোকন। ছবিটি মুক্তির এক যুগপূর্তিতে এই নির্মাতা বলেন, ‘আমি এ পর্যন্ত ৩৪টি ছবি নির্মাণ করেছি। বেশির ভাগ ছবিই শাকিবকে নিয়ে নির্মাণ করেছি। তবে এই ছবির সাফল্য অন্য কোনো ছবি ছুঁতে পারেনি। শাকিব খান ও সাহারার ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছে। তাঁদের অভিনীত অন্য কোনো ছবিই এই ছবিকে পেছনে ফেলতে পারেনি। প্রিন্টের খরচ ছাড়া মাত্র ৫০ লাখ টাকা বাজেটের এই ছবি থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা আয় করেছিলেন প্রযোজক।’

এ ধরনের দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আরেকটি ছবি নির্মাণ করতে চান এই নির্মাতা। তিনি বলেন, ‘খুব ইচ্ছা এ সময়ে এমন আরেকটি ছবি নির্মাণ করার, যা আরেকবার দর্শকের হৃদয় নাড়িয়ে দেবে। এলোমেলো করে দেবে সব হিসাব–নিকাশ।’ ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ মুক্তির সময়কার স্মৃতি আওড়ে এই পরিচালক আরও বলেন, ‘নির্মাতা, নায়ক, নায়িকা ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান—সবার জন্যই এই ছবি একটা ইতিহাস। ছবিটি মুক্তির পর বাম্পার হিট হয়ে গেল। তখন ছিল থার্টি ফাইভের যুগ। প্রথমে ৩৩টি হলে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পর সারা দেশে প্রিন্ট নিয়ে হলমালিকদের মধ্যে কাড়াকাড়ি লেগে গেল। দ্বিতীয় সপ্তাহে আরও ১০টি, তৃতীয় সপ্তাহে আরও ৭টি প্রিন্ট করা হয়। তখন দেশে প্রায় ৮০০ হল। সে সময় আড়াই-তিন মাস ধরে দেশের সব হলে ঘুরে ঘুরে চলেছিল ছবিটি।’

স্মৃতির ঝাঁপি খুলে নিয়ে বসে পরিচালক যেন আর থামতেই চান না, ‘২০০৭ সালে মান্না মারা গেল। সব ছবির চাপ আসতে থাকে শাকিব খানের ওপর। এই ছবি মুক্তির মাস ছয়েক পর আমি শাকিবকে নিয়ে “নিঃশ্বাস আমার তুমি” নির্মাণ শুরু করি। ওই ছবিতে ওঁকে দেড় লাখ টাকা থেকে এক ধাপে ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। পরপরই তাঁকে নিয়ে তৈরি করি “আমার চ্যালেঞ্জ”। তখন শাকিব খান অনেক মনোযোগ দিয়ে কাজ করতেন। তাঁর মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ ছিল।’

আজ ১৩ জুন ছবিটি মুক্তির ১২ বছর, অর্থাৎ এক যুগ পূর্ণ হলো

কিন্তু যে ছবি দিয়ে ঢালিউডে শাকিব খানের উত্থান, সেই শাকিব খান প্রথমবার ফোন ধরে এই ছবি নিয়ে কিছুই বলতে চাইলেন না। পরক্ষণে আবার ফোন দিলে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ছবিটি মুক্তির পর এগিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেন নায়িকা সাহারা। তিনি বলেন, ‘“প্রিয়া আমার প্রিয়া” মুক্তির পর দর্শক আমাদের জুটিকে দারুণ পছন্দ করেছিলেন। পরে আমরা দুজন অনেক ছবিতে কাজ করেছি। তার মধ্যেও বেশ কিছু ছবি ভালো ব্যবসা করেছে।’

‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ ছবিটি প্রযোজনা করেছিল আশা প্রোডাকশন। প্রযোজক ছিলেন মনির হোসেন। ছবিটি মুক্তির তিন বছরের মাথায় প্রযোজক মারা যান। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি এখন আর নেই। সিনেমার ব্যবসাও নেই তাদের। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ ছবিটি মুক্তির আগে আরও দুটি ছবি নির্মাণ করে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। বড় অঙ্কের দেনায় জর্জরিত ছিলেন প্রযোজক। পরে এই ছবি প্রযোজক ও এই প্রতিষ্ঠানকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছিল।