যেভাবে নেটফ্লিক্সের 'এক্সট্রাকশন'-এ

ওয়াহিদ ইবনে রেজা
ওয়াহিদ ইবনে রেজা

‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’খ্যাত রুশো ব্রাদার্স একটি ছবি প্রযোজনা করেছেন। এর পরিচালক তাঁদের দীর্ঘদিনের সহযোগী অ্যাকশন পরিচালক স্যাম হারগ্রেভ। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ‘থর’ ক্রিস হেমসওর্থ। সিনেমার মূল গল্প বাংলাদেশের ঢাকা শহর নিয়ে। এতে দেখানো হবে, ভারতের মুম্বাইয়ের এক ডনের ছেলেকে অপহরণ করে বাংলাদেশের এক ডন। আর তাকে উদ্ধার করতে নিয়োগ করা হয় দুর্ধর্ষ আততায়ী ক্রিস হেমসওর্থকে। শুরুতে ছবির ওয়ার্কিং টাইটেল (প্রাথমিক নাম) রাখা হয় ‘ঢাকা’। পরে সেটা পাল্টে হয় ‘আউট অব দ্য ফায়ার’, শেষে রাখা হয় ‘এক্সট্রাকশন’। সেই ছবির ট্রেলার বেরোল ৭ এপ্রিল। ছবিটি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাবে ২৪ এপ্রিল।

শুরুতেই মন খারাপ
অন্য সবার মতো আমিও প্রথম এই সিনেমার কথা জানি পত্রপত্রিকার মাধ্যমে। এবং স্বাভাবিকভাবেই জানামাত্র উত্তেজিত হয়ে যাই। কী চমৎকার একটা সংবাদ! ধীরে ধীরে আরও জানতে পারি ছবিটি নিয়ে। জানতে পারি, শ্রদ্ধেয় অভিনেতা তারিক আনাম খানের নেতৃত্বে যে দলটি হলিউডের অ্যাভেঞ্জার্স: এজ অব আলট্রন ছবিতে কাজ করেছিলেন, তাঁরাই আবার কাজ করছেন এই ছবিতে। পরিচয় হয় ছবির ভয়েস কোচ ও কনসালট্যান্ট রাফায়েল আহসানের সঙ্গে।

এরপর খবর পেলাম, এই ছবির ভিএফএক্সের কাজ হবে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের মেথড স্টুডিওতে। সেই স্টুডিওতে আমি পরপর দুই বছর অস্কার মনোনীত ছবির টিমে ছিলাম। এই প্রথম মনটা খারাপ হয়। মনে হলো, ইশ্, আজকে যদি আমি অ্যানিমেশনে কাজ না করতাম, যদি মেথডে থাকতাম, আমি নিশ্চিত এই ছবিতে কাজ করতে পারতাম! আমি যেখানেই কাজ করেছি, বড় গলায় বলেছি, আমি বাংলাদেশের ছেলে, ঢাকায় থাকি। আজকে সেই ঢাকা নিয়ে সিনেমা হচ্ছে, আর তাতে আমি কাজ করতে পারছি না, এতে মন খারাপ হবে না?

‘এক্সট্রাকশন’ ছবিতে ক্রিস হেমসওর্থ ও রুদ্রাক্ষ

ডেভিডের একটা ই–মেইল, ‘ঢাকা’য় ওয়াহিদ
এর মধ্যে একদিন হঠাৎ করে আমার এক সিনিয়র বন্ধু, ডেভিড জেমস আমাকে ই–মেইল করল দুটি ছবি। লিখল, ‘ওয়াহিদ, তুমি কি এখানে কী লেখা আছে বলতে পারবে?’ আমি দেখলাম, দুটি ছবিতে বাংলা লেখা। একটাতে দেয়ালের বিজ্ঞাপন, আরেকটি লেখা স্লোগানের মতো। আমি ডেভিডকে জানালাম, ছবিতে কী লেখা আছে। বললাম, ‘ডেভিড, তুমি কি নেটফ্লিক্সের “ঢাকা” ছবিতে কাজ করছ? তোমাদের কোনো সাহায্য লাগলে বোলো, খুবই খুশি হব আবার তোমার সঙ্গে কাজ করতে পারলে।’

ডেভিডের কথা আগে একটু বলি। ডেভিড জ্যেষ্ঠ একজন ভিএফএক্স প্রডিউসার। হলিউডের ‘ডাই হার্ড টু’ ছবির প্রোডাকশন কো–অর্ডিনেটর ছিল। ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা। ডেভিডের সঙ্গে আমি কাজ করি এমপিসি ও মেথড স্টুডিওতে। ‘ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান’, ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ’, ‘গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম টু’ আর ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’–এর শুরুর দিকে। ওর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা অবশ্য অন্যভাবে। ডেভিডও লেখালেখি করে। ডিজনির ‘জি–ফোর্স’ সিনেমার গল্পটা ওর লেখা। আমরা গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতাম, আর ভিএফএক্সের পাশাপাশি লেখালেখি নিয়ে আড্ডা দিতাম। দৈর্ঘ্য–প্রস্থে প্রায় আমার সমান ডেভিডকে দেখলেও মনে হয় মেলায় হারিয়ে যাওয়া আমার সাদা মামা! দুজনেই ভোজনরসিক বলে, আমাদের খুব জমত। ডেভিড এখন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকে। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে এলে আমার বাসায় আসে প্রতিবার। আমিও লস অ্যাঞ্জেলেসে গেলে ওর সঙ্গে দেখা করি, যেমন দেখা করেছি ওর নেটফ্লিক্সের অফিসে।

যাহোক, এদিকে দিন যায় রাত যায়, ডেভিড তো আমার প্রশ্নের উত্তর দেয় না। হঠাৎ একদিন আবার ই–মেইল করল। বলল, ‘সরি, এত দিন বলতে পারিনি, নিষেধ ছিল। হ্যাঁ, আমি “ঢাকা” সিনেমায় কাজ করছি, কনসাল্টিং ভিএফএক্সের প্রডিউসার হিসেবে। আচ্ছা, এদের লোক লাগবে, তুমি কি তোমার রেজুমি আমাকে পাঠাতে পারবে?’ আমি তো বললাম, ওরে বাবা! এ তো মেঘ না চাইতেই মিনারেল ওয়াটার! তাড়াতাড়ি নিজের রেজুমি পাঠিয়ে দিলাম।

আবারও কোনো খবর নেই। এদিকে আমিও ব্যস্ত নিজের নতুন চাকরি ও অন্যান্য কাজ নিয়ে। গত বছরের নভেম্বর মাসে ‘ঢাকা’ সিনেমার পোস্ট প্রোডাকশন সুপারভাইজার টিমোথি পেডেগানা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বললেন, ল্যাঙ্গুয়েজ কনসালট্যান্ট হিসেবে আমি সিনেমাটায় কাজ করতে পারব কি না। আমাকে কী করতে হবে? সিনেমার ফাইনাল কাট দেখে বলতে হবে বাংলা ও হিন্দি সংলাপের সঙ্গে সাবটাইটেলগুলো ঠিক মতো যাচ্ছে কি না। ছবির পরিচালক ও সম্পাদকের কিছু জায়গায় সন্দেহ আছে। তারা চাইছেন অন্য কাউকে দিয়ে দেখাতে। আমাকে এ জন্য ভ্যাঙ্কুভার থেকে যেতে হবে লস অ্যাঞ্জেলেসে। সেখানে বসে সিনেমা দেখে নোট দিয়ে আসতে হবে। আমি তো খুশিতে তিন লাফ! কিন্তু মাত্রই কাজ শুরু করেছি এটমিক কার্টুনসে। এটা বাচ্চাদের জন্য ডিজনির একটি সিরিজ। চাইলেই কি সব ফেলে যাওয়া যায়?

বললাম, ‘দেখুন, আমি তো সপ্তাহের মধ্যে আসতে পারব না, কিন্তু ছুটির দিনগুলোয় আসতে আমার আপত্তি নেই। তবে যদি সম্ভব হয় আমাকে অনলাইন লিংক দিতে পারেন। আমি দেখে নোট দিলাম।’ ওরা আমার প্রস্তাবে রাজি হলো। ওরা খুবই নিরাপদ একটা মাধ্যমে আমাকে পুরো সিনেমাটা পাঠাল। পুরো সিনেমায় আমার নাম বড় বড় করে ওয়াটার মার্ক করা। এর মানে হলো, এখান থেকে যদি ছবিটা লিক হয়, আমার জেল–জরিমানা নিশ্চিত।

হলিউডের ‘ডাই হার্ড টু’ ছবির প্রোডাকশন কো–অর্ডিনেটর ডেভিড জেমসের সঙ্গে ওয়াহিদ ও তাঁর স্ত্রী লিসা

শুরু হলো কাজ
কাজ শুরু করার আগে ছবির পরিচালক স্যাম হারগ্রেভ, এডিটর পিটার, মন্টিসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে আমার মিটিং হলো। আমি স্যামকে বললাম, এর আগে আমি দুটি সিনেমায় তোমার সঙ্গে কাজ করেছি। ভিএফএক্স কো–অর্ডিনেটর ছিলাম ক্যাপ্টেন আমেরিকা: সিভিল ওয়ার–এ, আর সহযোগিতা করেছি অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার–এর শুরুর দিকে। স্যাম খুব অমায়িকভাবে হাসতে হাসতে বলল, ডেভিড আমাকে বলেছে, তুমি খুব পরিশ্রমী এবং মার্ভেলের বিশাল ভক্ত। এরপর আমার কাছ থেকে তারা যা চাইছে, স্যাম আমাকে তা বুঝিয়ে বললেন, ‘আমি চাই তুমি পুরো সিনেমাটি দেখো। সংলাপসহ ভিজ্যুয়াল এবং ব্যাকগ্রাউন্ড অডিওতে কোথাও হবে বাংলা ও হিন্দি সংলাপের সঙ্গে সাবটাইটেলগুলো যদি তোমার খটকা লাগে, আমাদের জানাও। আমরা সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।’

আমার কাজ বেড়ে গেল। খুব মনোযোগ দিয়ে কাজটা করলাম। সংলাপের পাশাপাশি ভিজ্যুয়ালি ও ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডে যা নিয়ে খটকা লাগছিল, সবকিছুই নোট দিয়ে জানালাম। প্রথম দফায় ৪৮টা সংশোধন ও পরামর্শ থাকল আমার পক্ষ থেকে। আমি ভাবলাম কাজ শেষ। ওমা! ওরা আমার নোট অনুযায়ী সব শুধরে নিয়ে আমাকে ছবিটা আবার পাঠাল দেখার জন্য। ডেভিডকে জানালে সে বলল, ‘তার মানে ওরা তোমার কাজ পছন্দ করেছে!’ এবার আমার পক্ষ থেকে সংশোধন ও পরামর্শ থাকল ৪০টা। কিছুদিন পর ওরা আবারও নক করল। চারটি দৃশ্যের সম্পাদনা পরিবর্তন করে আমাকে বলল, ‘দেখো তো এখন বোঝা যায় কি না, আমার যা বোঝাতে চাচ্ছি।’ আমি দেখলাম, এডিট কাজ করছে না। কারণ, যেই কথা তারা সংলাপে দিয়ে বোঝাতে চাইছে, তা শুটই করা হয়নি। আমি তখন বুদ্ধি দিলাম, ‘তোমরা এই অংশটা বরং ডাবিং করে নাও। এই দৃশ্যগুলোতে এমন কয়েকটি শট আছে যেখানে যে কথা বলার সময় শিল্পীর মুখ দেখা যাচ্ছে না। ওই অংশগুলোর ডাবিং খুব সহজেই কিন্তু করে ফেলা যায়।’

কী লজ্জা! কী লজ্জা!
আমি তো বলেই খালাস। হঠাৎ ফোন, ওরা ডাবিং করবে এবং আমাকে থাকতে হবে ভয়েজ কোচ হিসেবে ফোনে। কারণ, অভিনেতারা ভালো বাংলা জানেন না। লস অ্যাঞ্জেলেসের এক অফিস থেকে আমাদের আলাপে যোগ দিলেন নির্দেশক ও অ্যাসোসিয়েট প্রোডিউসার। স্টুডিও থেকে জয়েন করল পোস্ট প্রোডাকশন দল। ভারতের কলকাতার এক জায়গা আর মুম্বাইয়ের দুই জায়গা থেকে দিলেন ছবির অভিনেতারা। মুম্বাইয়ের এক স্টুডিও থেকে সাউন্ড ডিজাইনারও থাকলেন আমাদের সঙ্গে। কানাডার ভ্যাঙ্কুভার থেকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করলাম আমি। রেকর্ডিংয়ের শুরুতে বললাম, ‘এর চেয়ে মাল্টিন্যাশনাল রেকর্ডিং হওয়া মনে হয় সম্ভব নয়। কলকাতার অভিনেতারা বাংলা পারেন। সমস্যা হলো না খুব। মুম্বাইয়ের দুজন বাংলা একদমই জানেন না। সময় লাগল তাদের শেখাতে।’ এবং এই সময় আমি একটা খুব বড় ভুল করে ফেললাম! একটা সংলাপের বাংলা কী হবে বলতে গিয়ে, বলে ফেললাম তা কীভাবে বলতে হবে। মানে, বলার ধরন বোঝাতে গিয়ে আমি বলার নিয়ম আর আবেগটা বলে ফেললাম। কিন্তু সেটা তো নির্দেশকের কাজ। আমাদের দিকে তাকিয়ে রেকর্ডিংয়ের দায়িত্বে থাকা ছেলেটি বলল, ‘তুমি এসব ডিরেকশন নাহয় ডিরেক্টরের হাতেই ছেড়ে দাও।’ কী লজ্জা, কী লজ্জা! আমি, জিব কেটে বললাম, ‘খুবই খুবই খুবই দুঃখিত, আমি আসলে বেশি উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম।’ কপাল ভালো, পরে পরিচালকও দেখলাম, শিল্পীকে একই নির্দেশনা দিলেন। তা না হলে লজ্জাটা আরও বেশি লাগত! ডাবিংয়ের পর ওরা আমাকে ‘এক্সট্রাকশন’ ছবির আরেকটি সম্পাদিত সংস্করণ পাঠায়। আমি আমার সাধ্যমতো যতটুকু পারি, শুনে বুঝে নোট দিলাম। এবার খুব বেশি পরামর্শ থাকল না। আমার কাজ শেষ।

‘ঢাকা’ নামে শুরু হয় ছবিটির শুটিং

গান নিয়ে কিছু কথা
হঠাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ওরা আবার যোগাযোগ করল। কয়েকটি গান দিয়ে বলল, এর মধ্য থেকে বাংলা গানগুলো আলাদা করো আর গানগুলো নিয়ে একটু ধারণা দাও। এগুলো ছবির আবহসংগীত হিসেবে যাবে। আমি শুনে দেখলাম, ‘বাংলা গান একটাও নেই। বেশির ভাগ হিন্দি। কিছু গান পাঞ্জাবি আর তেলেগু। আমি ওদের জানালাম। এর সঙ্গে এ–ও বললাম, ‘পুরো সিনেমায় যেহেতু বাংলা সংলাপ প্রচুর, বাংলা গান আমার মনে হয় থাকা উচিত।’ তখন ওরা বাংলা গানের তালিকা চাইল আমার কাছে। আমি আমার চেনা–জানা যত গান আছে, যা সিনেমাটির সঙ্গে যায়, এমন সব কটির লিস্ট করে দিলাম। ওরা জানাল, ওদের দরকার বাংলা হিপহপ গান। এবার আমি পড়লাম বিপদে। বাংলা হিপহপ গান তো আমি শুনি না। তখন নিজের ফেসবুকে বাংলা হিপহপ আর্টিস্টদের নিয়ে একটা পোস্ট দিলাম। দেখতে দেখতে বাংলা হিপহপের নতুন এক জগতের সঙ্গে আমার পরিচয় হলো। ব্ল্যাক জ্যাং, জালালি সেট, দেশি এমসির সাকিব খানসহ অনেকের সম্পর্কে জানলাম। তাঁদের গানগুলোর মধ্যে যেগুলো এই সিনেমার সঙ্গে যেতে পারে, এর তালিকা বানিয়ে ই–মেইল করে দিলাম। এবার আমাদের ই–মেইল চালাচালিতে যোগ হলেন ‘এক্সট্রাকশন’ ছবির মিউজিক সুপারভাইজার। তাঁর দায়িত্ব হলো বাছাই করা গানগুলো খুঁজে বের করে এর স্বত্ব নেওয়া। এই ভদ্রলোক জানালেন খুব বিস্ময়কর কিছু কথা। বাংলা হিপহপ গান তিনি জোগাড় করতে পারেননি তিনটি কারণে। প্রথম কারণ, বাংলা গানের শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো ঠিকানা পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় কারণ, কিছু বাংলা গান পেলেও জানা যায়, এর কিছু বিট বা অংশ ডাউনলোড করে নেওয়া। অর্থাৎ ১০০ ভাগ মৌলিক গান তাঁদের নেই। যেটা নেটফ্লিক্স গ্রহণ করবে না। তৃতীয় কারণটা হচ্ছে, বাংলা গানের কোনো আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড বা অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাঁরা খুঁজে পাননি, যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গানের স্বত্ব নেওয়া যায়। তাই তাঁরা ভারতের টি–সিরিজের সঙ্গে যোগাযোগ করে গান নেন।

এবার আমার একটু মন খারাপ হলো। আমাদের কী শক্ত অডিও ইন্ডাস্ট্রি ছিল একসময়। নিজের হাতে আমরা শেষ করে দিয়েছি সব। সেই দুঃখের কথা বলে লাভ নেই। কিন্তু তাই বলে তো হাল ছেড়ে দিতে পারি না। আমি ভদ্রলোককে বললাম, ‘আমি তো তোমাকে রেকর্ড কোম্পানি বা মৌলিক গানের ব্যাপারে সাহায্য করতে পারব না। কিন্তু যোগাযোগের জন্য তথ্য জোগাড় করে দিতে পারব। তোমরা গান সিলেক্ট করে আমাকে জানাও।’ ওরা জানাল, আমিও সে অনুযায়ী সব তথ্য জোগাড় করে দিলাম।

‘এক্সট্রাকশন’ ছবির শুটিংয়ে ক্রিস হেমসওর্থ ও নির্মাতা স্যাম হারগ্রেভ

‘ট্রান্সলেশন বাই…’
এমন করেই ছাড়া ছাড়াভাবে নভেম্বর মাস থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কাজ করলাম ‘এক্সট্রাকশন’ নামের ছবিটায়। ভেবেছিলাম এই কাজের জন্য স্বীকৃতি পাব কি না। হলিউডের সিনেমায় ‘ক্রেডিট’ দেওয়া হয় ইউনিয়ন মেম্বারদের প্রথমে, তারপর অন্যরা। আমি তো ইউনিয়নের সদস্য নই। তা ছাড়া দলে যোগও দিয়েছি একদম শেষে। ভাবলাম, হয়তো আইএমডিবিতে শুধু নামটা যাবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে জানানো হলো, নেটফ্লিক্স আমাকে ক্রেডিট দিচ্ছে, সিনেমার শেষে এবং আইএমডিবিতে। ক্রেডিট হলো, ‘ট্রান্সলেশনস বাই’।

আমি জানি, আমাদের এই কাজগুলো বিশাল সিনেমার প্রেক্ষাপটে খুব ক্ষুদ্র পদচিহ্ন রাখা। এরপরও একেবারে শূন্যস্থানের চেয়ে এটা কি একটু বেশি নয়? আশা করি, ভবিষ্যতে আমরা আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারব। আপাতত ঢাকা নিয়ে বানানো হলিউডের সিনেমায় নিজের প্রথম নন-ভিএফএক্স ক্রেডিট নিয়ে আমি তো একটু আনন্দিত হতেই পারি, তাই না?
লেখক, নির্মাতা ও প্রোডাকশন ম্যানেজার