করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত ভিডিও পোস্ট করে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি নির্মাতা হিমেল আশরাফ। ১৯ মার্চ করোনাভাইরাস–বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন হিমেল। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৫৩ লাখের বেশিবার। সব মিলিয়ে ৭০ লাখের মতো মানুষ হিমেলের কথা শুনেছেন। কী ছিল সেই ভিডিওতে?
প্রায় দেড় বছর আগে দেশ ছাড়েন হিমেল, থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটানে। নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমিতে ডিজিটাল ফিল্ম ডিরেকশন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। দেশে তিনি নির্মাণ করেছেন শতাধিক টেলিভিশন নাটক ও টেলিছবি। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ ২০১৭ সালে মুক্তি পায়। শাকিব খানের প্রযোজনায় একটি ছবি পরিচালনার কথা ছিল তাঁর।
যে ভিডিওর কারণে হিমেল আলোচিত হয়েছেন, সেখানে করোনাভাইরাস নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন তিনি। সপ্তাহ দু-এক আগে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে হিমেল হাসপাতালের সাহায্য চেয়েছিলেন। চিকিৎসকেরা তাঁর বাসায় এসে তাঁকে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিয়ে যান। তারপর কীভাবে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেই বর্ণনা দেন ভিডিওতে।
ভিডিওটি হাজার হাজারবার শেয়ার হয়েছে। ফেসবুকে নিয়মিত পোস্ট করে যাচ্ছেন হিমেল। আজ দুপুরে প্রথম আলোকে তিনি জানান, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর মেসেঞ্জারে পাঁচ শতাধিক মেসেজ পেয়েছেন তিনি, পাচ্ছেন শত শত কল। সবাই জানতে চাইছেন, কীভাবে করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করা যায়। জ্বর, কাশিসহ করোনার উপসর্গ আছে জানিয়ে তাঁরা হিমেলের কাছে করণীয় জানতে চাইছেন। এমনকি বাংলাদেশের হাসপাতালগুলো সম্পর্কে নানা অভিযোগও করছেন তাঁরা।
হিমেল বলেন, ‘আমি করোনাক্রান্ত কি না, তার কোনো পরীক্ষা করানো হয়নি। কিন্তু আমার শরীরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সব লক্ষণ ছিল। আমেরিকার ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন, সিরিয়াস না হলে তাঁরা কারও পরীক্ষা করেন না। আমি যেহেতু বিদেশফেরত কারও সংস্পর্শে যাইনি, তাই আমাকে তাঁরা পরীক্ষা করবেন না। আমি ভার্সিটিতে গিয়েছি, অনেকের ঘনিষ্ঠ হয়েছি বলার পরও তাঁরা পরীক্ষা করতে রাজি হননি। আমাকে তাঁরা কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেন। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে তাঁদের ফোন করতে বলেন।
‘করোনা নিয়ে নেটে অনেক পড়াশোনা করেছি আমি। সেখান থেকে আমার মনে হয়েছে আমি আক্রান্ত। বাসায় ছিলাম সম্পূর্ণ একা। এখনো আছি। আমার রুমমেটরা আগেই চলে গিয়েছিল যার যার প্রদেশে। গলাব্যথা, কাশি দেখা দিয়েছিল আমার। সেগুলোর কয়েকটা স্তর ছিল। নিজে নিজে লড়াই করেছি আমি। প্রচুর পানি খেয়েছি। ভিটামিন সি নিয়েছি। পরিচ্ছন্ন থেকেছি। নিজেকে নিজে সাহস দিয়েছি। লক্ষণ দেখা দেওয়ার আট দিনের মাথায় সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করি আমি।’
হিমেল আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, বয়স কম হওয়ায় আমার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো বলেই আমি সেরে উঠেছি। করোনায় আক্রান্ত অনেক রোগী নিজে থেকে ভালো হয়ে যায়। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারব না যে আমার করোনা হয়েছে। যেহেতু আমার কোনো পরীক্ষা হয়নি। আমি কোনো বিশেষজ্ঞও নই। কিন্তু সবাইকে সচেতন করার জন্য আমি ভিডিও দিয়েছিলাম।’
করোনায় আক্রান্ত হলে সবাইকে মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন হিমেল। এ সময় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। হিমেল নিজেই নিজেকে সাহস দিয়েছেন। তাঁর পরিবার বাংলাদেশে থাকে। তিনি তাঁর অসুস্থতার কথা পরিবারের কাছে গোপন করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশিদের তিনি পরামর্শ দেন অসুস্থ হলে সেটা চেপে না রেখে আইসোলেশনে চলে যাওয়ার। একমাত্র ঘরে থেকেই করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।