করোনার ‘বিষ’ আর বিষাদে মিলেমিশে একাকার ২০২০। বছরটা দেশের আর বিশ্বের ক্যালেন্ডারে দাগানো থাকবে লাল কালির মার্কার দিয়ে। বিদায়বেলা বছরটি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে বিনোদন ও সংস্কৃতি অঙ্গনের নানা গুণীজনকে। বছরের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখে নেওয়া যাক তাঁদের।
ক্যানসার আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৭ নভেম্বর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের বিদায় নেন। টেলিভিশন ও মঞ্চের অসামান্য এই অভিনেতা সংস্কৃতি অঙ্গনে ছিলেন ধ্রুবতারা হয়ে। নূরলদীনের সারাজীবন, বাকি ইতিহাস, সৎ মানুষের খোঁজে, দেওয়ান গাজীর কিস্সা, কোপেনিকের ক্যাপ্টেন, গ্যালিলিও, ম্যাকবেথসহ অনেক মঞ্চসফল নাটকে নির্দেশনা বা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। আজ রবিবার, বহুব্রীহি-এর মতো টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
সংগীতাঙ্গনে চলতি বছরের সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল চলচ্চিত্রের গানের অনন্য শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যু। দীর্ঘ ১০ মাস ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে এ বছরের ৬ জুলাই হার মানলেন তিনি। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন তিনি নিজের ইচ্ছায় দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আমার দেশে গিয়ে মরতে চাই, এখানে নয়।’ ‘জীবনের গল্প/ আছে বাকি অল্প’, ‘হায় রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যিখানে’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুলনা’-এ রকম অগণিত জনপ্রিয় গান দিয়ে বেঁচে থাকবেন এই প্লেব্যাক সম্রাট।
এ বছর দেশের সংগীতাঙ্গনে একটা বড় জায়গা খালি করে চলে গেলেন আলাউদ্দীন আলী। ৯ আগস্ট বিকেল ৫টায় ক্যানসারসহ অন্যান্য জটিলতায় এই গুণী সুরকার ও সংগীত পরিচালকের জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন অভিনেত্রী মিনু মমতাজ। মৃত্যুর পরও তীব্র অর্থকষ্ট ছেড়ে যায়নি অসংখ্য সিনেমার এই অভিনয়শিল্পীকে।
সত্তর দশকের তুমুল জনপ্রিয় ‘পাখির বাসার মতো দুটি চোখ তোমার, ঠিক যেন নাটোরের বনলতা সেন’ গানে নায়ক ওয়াসিমের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়েছিলেন জবা চৌধুরী। প্রযোজক আবু তাহেরকে বিয়ে করে বিদায় নেন বড় পর্দা থেকে। এরপর নিভৃতে কেটে যায় ৪৫ বছর। এই দীর্ঘ সময় পেরিয়ে শেষবারের মতো তিনি আলোচনায় আসেন মৃত্যুর সংবাদ হয়ে।
হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, করোনাসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগে ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে মারা যান অভিনেতা সাদেক বাচ্চু।
২৬ ডিসেম্বর চলে গেলেন অভিনেতা আবদুল কাদের। ২৩ ডিসেম্বর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান নাট্যকার মান্নান হীরা। এ বছর আরও চলে গেলেন সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান, সুরকার সেলিম আশরাফ, ঢাকার মঞ্চনাটকের পরিচিত মুখ ইশরাত নিশাত, অভিনয়শিল্পী কে এস ফিরোজ, বড় পর্দার অভিনেতা ও প্রযোজক রানা হামিদ, রঙ্গিন রূপবান ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় আসা আব্দুস সাত্তার, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী নীলৎপোল সাধ্য, নৃত্যশিল্পী হাসান ইমামসহ আরও অনেকে।
দেশের সীমানার বাইরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বাসু চ্যাটার্জী, সুশান্ত সিং রাজপুত, ঋষি কাপুর, ইরফান খান, সারোজ খান, নিম্মি, ওয়াজিদ খান, এসপি বালাসুব্রামানিয়াম, চ্যাডউইক বোজম্যান, শন কনারি, এডি ভ্যান হ্যালেন, অলিভিয়া ডি হ্যাভিল্যান্ড, নায়া রিভেরা, কার্ক ডগলাস, কিম কি দুকসহ আরও অসংখ্য তারকা মাটির পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন অনেক দূরে।