বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘পাগল মন’ গানটি। শিল্পী দিলরুবা খানের কণ্ঠে জনপ্রিয়তা পাওয়া গানটির মেধাস্বত্ব সনদ রয়েছে শিল্পী, সুরকার ও গীতিকারের নামে। গত বছর ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে গানটির চুম্বক অংশ ‘পাগল মন মন রে, মন কেন এত কথা বলে’ চরণ দুটি ব্যবহার করেছেন ছবির প্রযোজক ও অভিনেতা শাকিব খান। এর মাধ্যমে তিনভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে মেধাস্বত্ব আইন। চাইলেই তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন মেধাস্বত্বাধিকারীরা।
অনুমতি ছাড়া সিনেমায় ওই গানের দুটি চরণ ব্যবহারের কারণে শাকিবের নামে শুরুতে উকিল নোটিশ ও পরে গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন শিল্পী দিলরুবা খান। অন্যদিকে শাকিব খানের দাবি, ছবিতে গানের দুটি চরণ ব্যবহারের জন্য ফোনে মৌখিকভাবে দিলরুবা খানের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের এ পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াতে পারে? কপিরাইট দপ্তরের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘গানটির মেধাস্বত্ব তিনজনের। দিলরুবা খান একা মৌখিক অনুমতি দিলে সেটি আইনগতভাবে স্বীকৃত হবে না। গানটি ব্যবহারের জন্য তিন স্বত্বাধিকারীর লিখিত অনুমতির প্রয়োজন ছিল।’
‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে ‘পাগল মন’ একেবারেই নতুন একটি গান। কেবল পুরোনো ‘পাগল মন’ গানের চুম্বক দুটি চরণ আনা হয়েছে নতুনটিতে। আধুনিক সংগীতায়োজকেরা এর নাম দিয়েছেন ক্রসওভার। মেধাস্বত্ব আইনে ক্রসওভারের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু, জানতে চাইলে জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ কেন, বিশ্ব কপিরাইট আইনে এ রকম কোনো টার্ম নেই। দুটো শব্দও যদি ব্যবহার করা হয়, তাতে যদি পুরোনো গানটিকে শনাক্ত করা যায়, সেটাও কপিরাইট আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ তিনি মনে করেন, শাকিব খান তিনভাবে আইন লঙ্ঘন করেছেন। এক. ১৯(১) ধারা মোতাবেক স্বত্বাধিকারীদের লিখিত অনুমতি ছাড়া গানের কথা ব্যবহার, দুই. গানটি মনিটাইজ করা ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার এবং তিন. টেলিকম প্রতিষ্ঠানের কাছে গানটি বিক্রি।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ‘পাগল মন’ গানটি বাংলাদেশ বেতারে গেয়েছিলেন দিলরুবা খান। দুই বছর আগে যৌথভাবে গানটির মেধাস্বত্ব লাভ করেন গীতিকার আহমেদ কায়সার, সুরকার আশরাফ উদাস ও শিল্পী দিলরুবা খান। অনুমতি ছাড়া গানটি ব্যবহারের জন্য প্রথমে শাকিবের কাছে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠান এই শিল্পী। এর সুরাহা না হওয়ায় গীতিকার ও সুরকারের পক্ষে তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছেন। এ বিষয়ে শাকিব খান বলেন, ‘ছবিটি মুক্তির আগেই ইউটিউবে গানটি প্রকাশিত হয়েছিল। তখন তিনি কেন চুপ ছিলেন? আমাকে বললে ওই দুই লাইন ফেলে দিতাম, নয়তো গানটাই রাখতাম না।’
এদিকে নব্বইয়ের দশকে যে দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে গানটি প্রকাশিত হয়, সেই ডন মিউজিক ও চেনা সুর কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘পাগল মন’ গানটির কথা ও সুর সংগৃহীত। গত মঙ্গলবার রাতে গানটির রেকর্ডিস্ট রাজা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গানটি তখন লোকগান হিসেবেই প্রচলিত ছিল। রাজশাহী ও খুলনা বেতারে কতবার যে শুনেছি, হিসাব নাই।’
তবে ডন মিউজিকের স্বত্বাধিকারী বাবুল চৌধুরী জানান, গানটির শেষ অন্তরা লিখেছিলেন আহমেদ কায়সার, সংগীতায়োজন করেন আলী আকবর রুপু। তিনি বলেন, ‘এই গান নিয়ে দিলরুবা খান, আহমেদ কায়সার কিংবা আশরাফ উদাসের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো অধিকারই নেই। যদি কোনো ব্যবস্থা নিতে হয়, তা আমি নিতে পারি।’ এ প্রসঙ্গে কপিরাইট অফিস জানায়, যেহেতু এটি কপিরাইট অফিসে নিবন্ধিত, তাই আইনগতভাবে এখন গানটির স্বত্বাধিকারী ওই তিনজন। অন্য কেউ এর মালিকানা দাবি করলে উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হবে। কপিরাইট অফিস সেসব যাচাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।