দেশের প্রেক্ষাগৃহে অনেক দিন নতুন কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলো দিয়ে প্রেক্ষাগৃহের মালিকেরা দর্শক ধরে রেখেছিলেন। ঈদ উৎসব শেষে দেশের কয়েকটি সিনেমা যখন মুক্তির জন্য প্রস্তুত, ঠিক তখনই জানা গেল, দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ভারত থেকে আমদানি করা কয়েকটি বাংলা সিনেমা। টানা কয়েক সপ্তাহ ছবিগুলো মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত দেশের সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো।
জানা গেছে, সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাঁচটি ছবি দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির জন্য আমদানি করা হয়েছে। ছবিগুলো হচ্ছে ভোকাট্টা, শেষ থেকে শুরু, কিডন্যাপ, ভূতনাথ ডটকম ও বিবাহ অভিযান। এরই মধ্যে প্রথম ছবিটি শুক্রবার বাংলাদেশের ৪২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের চারটি সিনেমা মুক্তির জন্য দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। ছবিগুলো হচ্ছে সাইফ চন্দনের আব্বাস, দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর আকাশমহল, হাসান সিকদারের অবতার ও উত্তম আকাশের প্রেমচোর।
এদিকে এমনও শোনা যাচ্ছে, আগামী শুক্রবার তিনটি ছবি মুক্তির জন্য দিনক্ষণ ঠিক করা আছে। কোনো অবস্থায় তিনটি ছবি মুক্তির অনুমতি মিলবে না বলে জানান প্রদর্শক সমিতির সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সপ্তাহে দুটি ছবি মুক্তির নিয়ম করা হয়েছে। সেখানে দেশি না বিদেশি, কোনো বিষয় না। এখন কোনো পরিচালক কিংবা প্রযোজক যদি দেশের বাইরের ছবির সঙ্গে প্রেক্ষাগৃহে আসতে না চান, তাহলে উভয় পক্ষে আলাপ করতে হবে।’
ভারতীয় পাঁচটি বাংলা সিনেমার মধ্যে চারটি আমদানি করেছে শাপলা মিডিয়া। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সেলিম খান বলেন, ‘আমি টাকা খরচ করে ছবি আমদানি করেছি। এসব ছবি না চালিয়ে রেখে দিলে যদি পাইরেসি হয়ে যায়, তাহলে দায় কে নেবে। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত, ছবি দুটির একটি মুক্তি দেওয়ার।’
জানা গেছে, কিডন্যাপ এরই মধ্যে সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত দেশের বাইরে ছবি রপ্তানি করেন প্রযোজক কামাল মো. কিবরিয়া লিপু। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু বলব, এসব আলোচনা করে সমাধানের বিষয়। নিয়মকানুন অনেক থাকতেই পারে, নিজের দেশের স্বার্থ বিবেচনা করতে হবে।’
আব্বাস ছবির পরিচালক সাইফ চন্দন বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন অন্যভাবে। বললেন, ‘আতঙ্কের জায়গাটা হচ্ছে, জিৎ কিংবা দেবের ছবি বাংলাদেশে মুক্তি পেলে শুরুতে হল বুকিংয়ে আমরা পিছিয়ে পড়ব, যা মোটেও কাম্য নয়। তবে এটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি, ছবির মেধা নিয়ে যদি কথা হয়, তাহলে কিডন্যাপ কিংবা শেষ থেকে শুরু কোনোটাই টিকবে না। তা ছাড়া ছবিগুলো বাংলাদেশের অনেক দর্শকের দেখাও হয়ে গেছে।’
পরিচালক হাসান শিকদার তাঁর ছবিটি ১৯ জুলাই মুক্তি দিতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনিও বললেন, ‘যেসব ছবি আমাদের দেশে আসছে, সেগুলো ওদের দেশেই কোনো পাত্তা পায়নি। তারপরও কিছুটা সংশয় থেকে যায়। কারণ, বুকিংয়ে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। দর্শকদের জানাতে চাই, সুন্দর একটি গল্পে আমি ছবিটি বানিয়েছি। আপনারা আমাদের ছবিটি দেখে তারপর বিবেচনা করুন।’
এদিকে ভোকাট্টার খবর জানতে প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার নওশাদের সঙ্গে কথা বললে শুরুতেই জানালেন, ‘বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। ভোকাট্টার ব্যবসায়িক প্রতিবেদন খুবই খারাপ। আমার প্রেক্ষাগৃহে এখন পাসওয়ার্ড চলছে।’
একই দিনে বাংলাদেশের ছবির সঙ্গে কলকাতার ছবি মুক্তির বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন এই প্রযোজক ও প্রদর্শক। তিনি বলেন, ‘আমার দেশের নির্মাতাদের বলব, আপনারা মোটেও এসবে ভীত হবেন না। স্ট্রং থাকেন, লড়ার মানসিকতা রাখেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি নিয়ে দেশের সিনেমার একজন নায়ক ও প্রযোজক বলেন, ‘আমি দেশের সিনেমার প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের বলতে চাই, আপনারা আপনাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। ওসবে ভীত না হয়ে লড়ার মানসিকতা রাখেন। ভারতের কলকাতা থেকে যত ছবিই এসেছে, বাংলাদেশি কেউ না থাকলে সেসব ছবির প্রতি দর্শকের কোনো আগ্রহই ছিল না। বলতে পারেন, মুখ থুবড়ে পড়েছে।’