মঞ্চ, টেলিভিশন আর চলচ্চিত্র—যেখানে তিনি নাম লিখিয়েছেন, সফল হয়েছেন। সব মাধ্যমে অভিনয় দিয়েই দর্শকমনের বড় জায়গা দখল করে নিয়েছেন অভিনেতা, নির্মাতা আফজাল হোসেন। বিজ্ঞাপনচিত্র আর নাটক নির্মাণেও তাঁর মুনশিয়ানা দেখেছেন দর্শকেরা। এবার তিনি নির্মাণ করছেন ডকু ফিকশন। ঢাকার উত্তরায় গতকাল সোমবার থেকে শুটিংও শুরু হয়েছে। বাঙালি কালজয়ী লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনকে কেন্দ্র করে তৈরি এই ডকু ফিকশনের নাম রাখা হয়েছে মানিকের লাল কাঁকড়া।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ৪৮ বছরেই বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী লেখক হয়ে উঠেছিলেন। বাজি ধরে সাহিত্য রচনা শুরু করলেও নিজেকে বলতেন ‘কলম-পেষা মজুর’। সেই বাজি ধরা লেখকের জীবনকে কেন্দ্র করে আফজাল হোসেন বানাচ্ছেন মানিকের লাল কাঁকড়া।
বেশ কিছুদিন ধরেই বিনোদন অঙ্গনে খবর ছড়িয়েছে, নন্দিত অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা আফজাল হোসেন চলচ্চিত্র বানাচ্ছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যতবারই যোগাযোগ করা হয়, তিনি এড়িয়ে যান। শুধু বলেন, সময় হলেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবেন। তখনই জানা যাবে সিনেমা নাকি অন্য কিছু বানাচ্ছেন। যেই কথা সেই কাজ, আফজাল হোসেন মারফত জানা গেল, সিনেমা নয়, তিনি ডকু ফিকশন বানাচ্ছেন। এ–ও জানিয়ে রাখলেন, তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের কাজ শুরু হবে এ বছরেই।
সোমবার থেকে ঢাকার উত্তরায় ফেরদৌস ও সোহানা সাবাকে নিয়ে শুটিং করছেন তিনি। খবরটি জানতে আফজাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘আমি সিনেমা নয়, একটি ডকু ফিকশন বানাচ্ছি। আজ থেকে সেটিরই শুটিং শুরু হয়েছে।’
মানিকের লাল কাঁকড়া দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তির। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অনুদানে নির্মিত এই ডকু ফিকশন লিখেছেন আনজীর লিটন ও চিত্রনাট্য করেছেন মাসুম রেজা। স্বামী, স্ত্রী ও তাদের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে এই ডকু ফিকশনের গল্পটা এগিয়েছে। এটি বাণিজ্যিকভাবে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হবে না। তবে দেশের বাইরের বিভিন্ন উৎসবে পাঠানো হবে। এটিকে খুব সিরিয়াসধর্মী একটি কাজ বলে মনে করছেন পরিচালক। তিনি জানান, এটি বাচ্চাদের জন্য তৈরি হচ্ছে। তিনিও কাজটি করে বেশ রোমাঞ্চিত।
রোমাঞ্চিত হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে আফজাল হোসেন বলেন, ‘মানিক বন্দ্যোপধ্যায়কে কেন্দ্র করে তৈরি হলেও এটি তাঁর জীবনী নয়। খুব আলাদা ধরনের গল্প। মজার। আমার জন্য খুবই রোমাঞ্চকর একটি কাজ। এটা না ফিচার ফিল্ম, ইটস নট আ বায়োপিক—আবার এটিতে থাকবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী। আমরা বায়োপিক বুঝি, ফিচার ফিল্ম বুঝি—সেই জায়গা থেকে এটা একেবারে নতুন ধরনের একটি কাজ।’
প্রথম পর্যায়ে তিন দিন ঢাকায় মানিকের লাল কাঁকড়া–এর শুটিং হবে। এরপর ঢাকার বাইরে শুটিং করা হবে। এই ডকু ফিকশনে মুহিত নামের একজন লেখকের চরিত্রের অভিনয় করছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। সন্তানের কাছে তাঁর বয়ানে জানা যাবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে। তাঁকে সূত্রধর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ধরনের একটি কাজের অংশ হতে পেরে ফেরদৌসও যারপরনাই আনন্দিত। তিনি জানান, নাগরিক একটি জীবন ও গ্রামের একটি জীবনকে ডিজাইন করে এখনকার বাচ্চাদের জীবনযাপন দেখানো হয়েছে। মানিক বন্দ্যোপধ্যায়ের শৈশবের একটি অংশ এই ছবিতে প্রাধান্য পেয়েছে।
ফেরদৌস বলেন, ‘এর আগে আমি শিশুতোষ সিনেমায় কাজ করেছি, কিন্তু এ ধরনের ডকু ফিকশনে কাজ করিনি। শিশু একাডেমি থেকে যখন আমাকে জানানো হলো, তখন ভালো লাগে। তার ওপর যখন শুনলাম আফজাল হোসেনের মতো একজন ব্যক্তিত্ব বানাবেন—তা তো বিরাট প্রাপ্তি। খুবই সুন্দর একটি গল্প। আমাদের সন্তানেরা যারা ফ্ল্যাট কালচারে বড় হচ্ছে, তাদের সঙ্গে প্রকৃতির যোগাযোগ একেবারে নেই, সেদিকটাই আমার কাছে আকর্ষণীয় লেগেছে। ইট–কাঠ–পাথরে বেড়ে ওঠা বাচ্চাদের যে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ থাকা দরকার—এ ব্যাপারটাই গল্পের মধ্যে ভীষণভাবে আছে।’
ডকু ফিকশন মানিকের লাল কাঁকড়ায় থাকবে গানও। দৃশ্য ধারণের কাজ শেষ হলেই এসব নিয়ে ভাববেন বলে জানান আফজাল হোসেন।