অচেনা আগন্তুক ঢুকে পড়ে মহড়াকক্ষে। তাই বিরতি। পরিচিতিপর্ব শেষে ফের মহড়ার শুরু। কৈবর্ত রাজ ভীম অগ্নিশর্মা। নিজের পালিত পুত্র চণ্ডকই কিনা শত্রুশিবিরে গোপনে খবর পাঠায়! এর চেয়ে যন্ত্রণা আর কী হতে পারে? লজ্জায়, রাগে, ক্ষোভে মুষড়ে পড়েন রাজা। সভাসদেরা বসেন বিচারে। কী বিচার এই রাজদ্রোহীর? সবার উত্তর—মৃত্যুদণ্ড। রাজা দণ্ডাদেশ দেন। বাধা হয়ে দাঁড়ান পুত্রবধূ। প্রাণভিক্ষা চান রাজার কাছে। মৃত্যুদণ্ড দেননি রাজা। বের হয়ে যেতে বলেন রাজ্য থেকে। পুত্র চণ্ডক আঁতাত করে রাজা রামপালের সঙ্গে। রামপাল পরাজিত করেন কৈবর্তরাজ ভীমকে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। মৃত্যুর আগে ভীম এক চিরন্তন প্রশ্ন রেখে যান। সেই প্রশ্নের ডালপালা ধরে ছড়ায় আরও প্রশ্ন।
এমন প্রশ্নগুলো রাখতেই মঞ্চে আসছে কৈবর্তগাথা। গত রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মহড়া চলে নাটকটির। বিবর্তন যশোরের ঢাকার কর্মীরা মঞ্চে আনছেন এই নাটক। মহড়ার পাশেই প্রপস তৈরি করছেন কয়েকজন নাট্যকর্মী। চেয়ারে বসা নির্দেশক ফয়েজ জহির বললেন, ‘আমি আর কিছুই বলব না। এখন আপনারাই অভিনয় করে যাবেন।’ কারণ হলো, নাটকের প্রদর্শনী সমাগত। ৪ অক্টোবর একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে হবে উদ্বোধনী প্রদর্শনী।
বিবর্তন যশোরের নাট্যদল। এই দলের কিছু কর্মী ঢাকায় থাকেন। তাঁরাই রাজধানীতে একত্র হয়ে করেছেন বিবর্তনের আরেক শাখা। এর আগে তাঁরা মঞ্চে এনেছেন ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন। এবার কৈবর্তগাথা। জানালেন দলের সদস্য শ্রাবণী সাহা। ঠিক এই সময়ে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস নিয়ে নাটক নির্দেশনার কারণ কী? নির্দেশক ফয়েজ জহির বললেন, নাটকটি নির্দেশনা দেওয়ার বড় কারণ হলো এর বিষয়বস্তু। বরেন্দ্র জনপদে কৈবর্তদের একটা বিদ্রোহ হয়। নিম্নবর্ণের মানুষেরা মিলে পাল বংশকে পরাজিত করে ক্ষমতা দখল করে। পরে সামন্তরাজাদের নিয়ে কৈবর্তরাজ ভীমকে পরাজিত করেন রাজা রামপাল। রামপালের সভাকবি সন্ধ্যাকর নন্দী রামপালের গুণগান গেয়ে রচনা করেন রামচরিত মানস। সেই কাহিনিকে অবলম্বন করে নাট্যকার রচনা করেছেন কৈবর্তগাথা। নাট্যকার দেখাতে চেয়েছেন, একজন কবির কাজ কী। তিনি কি চাটুকার হয়ে ক্ষমতাসীনদের কথা বলবেন, নাকি জনগণের সুন্দর জীবনের জন্য, কল্যাণের জন্য লিখবেন। এই সময়েও এটি প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখনো শিল্পে, সাহিত্যে যাদের বসবাস, তাদের মধ্যেও সন্ধ্যাকর নন্দীর মতো সভাকবি হওয়ার প্রবণতা আছে। তারা ক্ষমতাসীনদের পদলেহন করে সুবিধা ভোগ করতে চায়।
নাটকটি রচনা করেছেন আবদুল্লাহেল মাহমুদ। ৪ অক্টোবর পরীক্ষণ থিয়েটার হলে বসবে উদ্বোধনী প্রদর্শনী। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমানকে মিলিয়ে দেখতে আপনিও আসতে পারেন সেদিন সন্ধ্যায়।