ভোরে অসিত দের রাগ দিয়ে শেষ হলো শুদ্ধ সংগীত উৎসব

ছায়ানটের শুদ্ধ সংগীত উৎসবের শেষ দিনের একটি পরিবেশনা। ছবি: ছায়ানটের সৌজন্যে
ছায়ানটের শুদ্ধ সংগীত উৎসবের শেষ দিনের একটি পরিবেশনা। ছবি: ছায়ানটের সৌজন্যে

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শেষ হবে ছায়ানটের অনুষ্ঠান—এটাই যেন নিয়ম হয়ে গেছে। কাল ছিল ব্যতিক্রম। ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিল্পী-দর্শক দাঁড়িয়ে গাইলেন ‘আমার সোনার বাংলা...’। সন্ধ্যায় শুরু হয়ে সারা রাত চলে আসর। আজ শনিবার সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে শেষ হয় শুদ্ধ সংগীত উৎসব।

সংগীতের প্রাণ ‘শুদ্ধ সংগীত’। একটা সময় ঢাকা কিংবা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রাজবাড়ি তথা জমিদারবাড়িতে বসত শুদ্ধ সংগীতের আসর। সমাজের অভিজাত শ্রেণিই এর পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। সম্প্রতি শুদ্ধ সংগীতের চর্চা বা শোনার অভ্যাস একেবারেই কমে গেছে। এ চিত্রটা পাল্টে দেওয়ার প্রত্যয়ে গত বৃহস্পতিবার ছায়ানট ভবনে শুরু হলো শুদ্ধ সংগীত উৎসব। গতকাল শুক্রবার ছিল ছায়ানটের শুদ্ধ সংগীত উৎসবের সমাপনী দিনের আয়োজন। এদিন সন্ধ্যা থেকে রাতভর চলেছে সংগীতাসর। কণ্ঠ ও যন্ত্রসংগীতের সম্মিলনে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত জমাটি শীতে দারুণ কেটেছে শ্রোতার সময়। সমাপনী সন্ধ্যাটি শুরু হয় অসিত দের পরিচালনায় ছায়ানটের শিল্পীদের বৃন্দ রাগসংগীত পরিবেশনার আশ্রয়ে। এক সুরে মিলে যায় অনেক কণ্ঠ। সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় রাগ অষ্টপ্রহর। কণ্ঠসংগীতের সুর-মূর্ছনা থামতেই বেজে ওঠে তবলার বোল। গৌতম সরকারের পরিচালনায় তবলায় বৃন্দ পরিবেশনা উপস্থাপন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা। রাগ মুলতানি শোনান পরাগ প্রতীম চক্রবর্তী।

শুক্রবার সকালে শেষ হয় শুদ্ধ সংগীত উৎসব। ছবি: ছায়ানটের সৌজন্যে

পরে সুপরিচিত সরোদশিল্পী রাজরূপা চৌধুরী সরোদে সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর কণ্ঠসংগীত নিয়ে মঞ্চে আসেন সুপ্তিকা মণ্ডল। উপস্থাপন করেন রাগ মধুবন্তী। রাগ পুরিয়া ধানেশ্রীর আশ্রয়ে কণ্ঠসংগীত পরিবেশন করেন মিনহাজুল হাসান ইমন। সেতারে সুর তোলেন এবাদুল হক। তবলার বাদন শুনিয়েছেন অনন্য রোজারিও। কণ্ঠসংগীতে অংশ নেন খায়রুল আনাম শাকিল। বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি পরিবেশন করেন রাগ পুরিয়া কল্যাণ। শ্রাবন্তী ধর শোনান রাগ কেদার। রাগ যোগের আশ্রয়ে কণ্ঠসংগীত পরিবেশন করেন মো. আলাউদ্দিন মিয়া। দ্বৈতকণ্ঠে টিংকু শীল ও অভিজিৎ কুণ্ডুর রাগ ঝিঁঝিট মুগ্ধ করে শ্রোতাদের। এরপর ছিল শেখর মণ্ডল ও রেজোয়ান আলীর পরিবেশনা। মধ্যরাতে সর্বশেষ পরিবেশনা উপস্থাপন করেন অসিত দে। এই পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় ছায়ানট আয়োজিত দুই দিনের শুদ্ধ সংগীত উৎসব।

১৪১৫ বঙ্গাব্দের হেমন্তে প্রথম শুদ্ধ সংগীত উৎসবের আয়োজন করে ছায়ানট। তিন অধিবেশনের প্রথম আসরের উদ্বোধন করেছিলেন পূর্ব বাংলায় জন্ম ও পরে ভারতীয় নাগরিক পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। বর্তমানে প্রতিবছরের শীতকালে এর আয়োজন হচ্ছে। বার্ষিক এই উৎসবে দেশের নানা অঞ্চলের গুণীরা সংগীত পরিবেশন করে থাকেন। বার্ষিক শুদ্ধ সংগীত উৎসবের শেষ সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত শাস্ত্রীয় সংগীতের কণ্ঠ ও যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করে।

১৪১৫ বঙ্গাব্দের হেমন্তে প্রথম শুদ্ধ সংগীত উৎসবের আয়োজন করে ছায়ানট। ছবি: ছায়ানটের সৌজন্যে