ভালো আছেন বরেণ্য অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। বিছানা ছেড়ে উঠছেন নিজে নিজে। স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। আপাতত বিপদ কেটে গেছে বলে ধারণা চিকিৎসকদের।
এ টি এম শামসুজ্জামান বর্তমানে পুরোনো ঢাকার গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ টি এম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনি জামান আজ শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের তুলনায় আমরা তাঁকে (এ টি এম শামসুজ্জামানকে) অনেক সুস্থ দেখছি। তিনি এখন কথাও বলছেন। সবাইকে চিনতে পারছেন। মনে হচ্ছে বিপদ কেটে গেছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে বাসায় নিতে পারব।’
আশার কথা শোনালেন আজগর আলী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ মো. মতিউল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘আজকে উনি বেশ ভালো। এখানকার চিকিৎসায় বেশ ভালো সাড়া দিচ্ছেন তিনি। আমরা এখন আশাবাদী। আজকের দিনটা এভাবে কাটলে আমরা আইসিইউ থেকে সরিয়ে এ বিভাগেরই ওয়ার্ডে নিয়ে যাব। সেখানেও আমাদের অধীনে থাকবেন।’
জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল রাতে বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এ টি এম শামসুজ্জামান। সেদিন খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। রাত ১১টার দিকে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শুরুর কয়েক দিন পর তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। এরপর আবার স্বাভাবিক নিয়মে শ্বাস নিতে পারলে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে চার দিন আগে তাঁকে আবার লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। তার পর থেকে সুস্থতার দিকে যাচ্ছেন এই শক্তিমান অভিনেতা।
হাসপাতালের একজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, মূলত এ টি এম শামসুজ্জামানের অন্ত্রে প্যাঁচ লেগেছিল। সেখান আন্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা । এর ফলে খাবার, তরল, পাকস্থলীর অ্যাসিড বা গ্যাস বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং অন্ত্রের ওপর চাপ বেড়ে যায়। যার ফলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। এসব সারাতেই অস্ত্রোপচার করা হয়। সেখান থেকে নতুন জটিলতা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়, এটাই সুখের কথা।
এ টি এম শামসুজ্জামান বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার। তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন এ টি এম শামসুজ্জামান। প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’ ছবিতেও অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মাননা অর্জন করেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।