>দুর্দান্ত এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন আয়ুষ্মান খুরানা। একের পর এক হিট ছবি তাঁর সাফল্যের ঝুলিতে। শুধু বক্স অফিস সাফল্যই নয়, চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের ভূরি ভূরি প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। সম্প্রতি আরেক সফল ছবি তিনি উপহার দিলেন দর্শকদের—শুভ মঙ্গল জেয়াদা সাবধান। গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া এই ছবির প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে তৈরি হলেও ভারতীয় সিনেমার দর্শক বেশ সহজভাবেই নিচ্ছেন ছবিটিকে। এই ছবির জের ধরেই আয়ুষ্মান খুরানার সঙ্গে আড্ডা দিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য
পরপর সাতটি সফল ছবির নায়ক আপনি। ব্যর্থতা নিয়ে কোথাও কি আর কোনো ভয় কাজ করে না?
আয়ুষ্মান খুরানা: আমি এভাবে কখনো বিষয়টাকে দেখি না। সফলতা, ব্যর্থতা আর নিজের অভিনীত চরিত্র থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে চেষ্টা করি। এসবের প্রতি ভালোবাসা ও মোহ জন্মে গেলেই বিপদ। আমি একটা ছবির পরপরই আমার পরবর্তী ছবি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এ কারণে আমি নিজের ছবি কখনো সিনেমা হলে দেখতে যাই না। কারণ সেখানে দর্শকের তালি, শিস বাজানো, তাঁদের আবেগ আমার মাথায় চড়ে বসতে পারে। বড় অভিনেতা হতে গেলে সবার আগে অহংবোধকে (ইগো) দূরে রাখতে হবে।
আপনার ছবির বিষয় সব সময়ই ব্যতিক্রম। সমাজের নানা ব্যতিক্রম ইস্যু তুলে ধরা হয় আপনার ছবির মাধ্যমে। অভিনেতা হিসেবে আপনি নিজেকে কোন ঘরানায় আবিষ্কার করতে চান?
আয়ুষ্মান: আমি অ্যাকশন ও থ্রিলারধর্মী ছবিতে অভিনয় করতে ইচ্ছুক। আমার কাছে দুটো অ্যাকশনধর্মী ছবির ভালো চিত্রনাট্য এসেছে। এই দুটোর মধ্যে কোনো একটা ছবিতে আমি অভিনয় করব।
আপনি কি মনে করেন যে সিনেমা সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে?
আয়ুষ্মান: এই উপমহাদেশে সিনেমা ও ক্রিকেট—দুটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় জিনিস। তবে আমি শুধু সিনেমাকে সব কৃতিত্ব দিতে চাই না। আমি মনে করি, শিল্পকলা সমাজের বুকে পরিবর্তন আনতে পারে।
আপনার অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কোনটা ছিল?
আয়ুষ্মান: সবার আগে আমি দম লাগা কে হ্যাইসা ছবির কথা বলব। এরপর প্রায় সব চরিত্রই আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি থ্রিলারধর্মী ছবিতে কাজ করতে চেয়েছিলাম। আন্ধাধুন আমার সেই ইচ্ছা পূরণ করেছে। এই ছবিতে অন্ধ পিয়ানোবাদক হিসেবে আমার চরিত্রটি বেশ কঠিন ছিল।
আপনি কি এ ধরনের চরিত্রগুলো খুব ভেবেচিন্তে, হিসাব কষে বাছাই করেন?
আয়ুষ্মান: একদম তাই। আমার অভিনয়জীবনের প্রথম সিনেমা থেকেই এই রাস্তা আমি বেছে নিয়েছি। ভিকি ডোনার ছবির পরই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমাকে একদম ব্যতিক্রমী ছবিতে অভিনয় করতে হবে। আমি একসময় পথনাটক করতাম। সারা দেশ ঘুরে ঘুরে নাটক করে বেড়াতাম। সেখান থেকে আমার অভিনেতা হওয়ার প্রশিক্ষণ শুরু। তখনই শিখেছি মানুষকে কীভাবে আকৃষ্ট করতে হয়। পথনাটকে সাধারণত কোনো না কোনো সামাজিক বার্তা থাকে। সামাজিক বার্তাকে কীভাবে বিনোদনের মাধ্যমে উপস্থাপনা করা যায়, তা সেখান থেকে শিখেছি আমি। মানুষকে বিনোদন ছাড়া আকৃষ্ট করা মুশকিল।
আপনি কি মনে করেন গানের চর্চা আপনাকে একজন ভালো অভিনেতা হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে?
আয়ুষ্মান: গান অনেকটা জীবনের মতো। জীবনে যেমন চড়াই–উতরাই থাকে। মিউজিকের নোটসেও ওপর–নিচ থাকে, যাঁরা সুর–তাল বুঝতে পারেন, তাঁরা খুবই ভাগ্যবান। সংগীতজ্ঞান একজন অভিনেতাকেও সমৃদ্ধ করে বলে আমি মনে করি।
নিজের প্রায় সব ছবিতেই আপনি গান গেয়েছেন। লাইভ কনসার্টও করেন। সংগীত আর অভিনয়ের মধ্যে কোনটাকে আগে রাখতে চান?
আয়ুষ্মান: অবশ্যই অভিনয়কে। এটা আমার কাছে সবার ওপরে। তবে আমি আমার প্রায় সব ছবিতে গান গাই। দিলজিৎ দোসাঞ্জ আর আমি অভিনয়ের পাশাপাশি লাইভ কনসার্টও করি। অনেক অভিনেতা গান করেন। তবে আমাদের মতো ব্যান্ড নিয়ে গান গেয়ে বেড়ান না।
একজন সু–অভিনেতা হওয়ার দায়িত্ব আপনি পালন করছেন। বাবার দায়িত্ব কতটা পালন করতে পারেন?
আয়ুষ্মান: বাবার দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন কাজ। আমি সব সময় শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকি। সন্তানদের ঠিকমতো সময় দিতে পারি না। তবে খুবই চেষ্টা করি ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে। আমার সন্তানদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বন্ধুর মতো।
আপনার সন্তানদের গানের প্রতি আগ্রহ আছে?
আয়ুষ্মান: আমার ছেলে পিয়ানো শেখে। বাড়িতে থাকলে ওর পিয়ানোর শব্দে আমার ঘুম ভাঙে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আপনি কি এই প্ল্যাটফর্মে আসতে চলেছেন?
আয়ুষ্মান: প্রযোজনার বিষয়ে বৈচিত্র্য থাকতে হবে আর আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। তখনই আমি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে আগ্রহী হব।