এসেছে বসন্ত। আজ পয়লা ফাল্গুন, আগামীকাল ভালোবাসা দিবস। বসন্তে ভালোবাসার অনেক রং জাগে। মেঘের মতো ক্ষণে ক্ষণে প্রেমের রঙের বদল ঘটে, সৃষ্টি হয় ভালোবাসার নানা তরঙ্গ। তারকাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়কে কেমনভাবে ছুঁয়ে গেছে ভালোবাসা, সেই গল্পসহ ‘আনন্দ’-র এই সংখ্যা সেজেছে নানা রঙের ভালোবাসায়
‘আমার আর মাত্র তিনটি কাজ বাকি আছে।’
কথাটি শুনে আমাদের কি মেজাজ খারাপ করা উচিত?
যাঁর জন্য দুপুর থেকে অপেক্ষা, ঘোর সন্ধ্যায় পরিবাগে তাঁর ফ্ল্যাটে ঢোকার সময় তাঁর প্রথম বাক্যটি যদি এমন হয়, তবে মেজাজ খারাপ হবে না!
কিন্তু আমাদের বিগড়ে যাওয়া মন খুশিতে ভরে উঠল তাহসান যখন গিটার বাজিয়ে গুনগুন করে উঠলেন।
না, তাহসানের কাছে আমরা গান শুনতে আসিনি, গান শোনাটা ছিল উপরি পাওনা।
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারও কথাবন্ধু মিথিলা নামে একটি নাটকে অভিনয় করছেন তাহসান। ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প-২’ প্রতিযোগিতায় আসা অসংখ্য গল্প থেকে বাছাই করে তিনটি নাটক তৈরি করা হয়েছে। নাটক তিনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশ। এর একটি কথাবন্ধু মিথিলা।
তখন ২০০৪ সাল। অফ বিট নামে আফসানা মিমি পরিচালিত ভালোবাসা দিবসে প্রচারিত একটি নাটকে প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছিলেন তিনি। দর্শক গ্রহণ করলেন তাহসানকে। গায়ক থেকে তিনি হয়ে উঠলেন অভিনয়শিল্পী। এই ধারায় ২০০৭-এ মধুরেণ সমাপয়েৎ নামে আরও একটি নাটকে অভিনয়। ভালোবাসা দিবসের বিশেষ নাটক হিসেবে প্রচারিত হয়েছিল সেটিও।
পাঠক, এই তথ্যগুলো মনে রাখুন। আর ভাবুন, ভালোবাসা দিবসের নাটকে বারবার তাহসানকে দেখা যায় কেন? ভেবেছিলাম, তাঁর সঙ্গে আলাপের প্রথমেই ছুড়ে দেব এই প্রশ্ন। বিধি বাম, তাঁর ফ্লাটে ঢোকার মুহূর্তেই ওই যে মিইয়ে গেল মন। এরপর তাঁর বসার ঘরে—আমরা সোফায় আর মেঝেতে ম্যাটের ওপর বসে ল্যাপটপে কী যেন লিখছেন তাহসান।
‘আজকাল কাগজে-কলমে আর লেখা হয় না।’ কথাটি বলেই তারপর গিটারে টুং টাং, ‘আমার শব্দ যত কথাবন্ধুর কাছে/ ভেসে ভেসে উড়ে যায়...।’ গানের এটুকু শুনিয়ে বললেন, ‘কথাবন্ধু মিথিলার জন্য গানটি লিখছি। এ নাটকের শুটিংয়ের অবসরে একদিন আমি এলোমেলো গিটার বাজাচ্ছিলাম। গিটারে একটি সুর উঠল। তো, পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল বললেন, এই সুরের ভেতর কথা বসিয়ে দিন। কথা কোথায় পাই! বললাম আবোলতাবোল কিছু। সেটি ধারণও হলো। পরে আমার মনে হলো, ওই দৃশ্যের জন্য লিখে ফেলি একটা গান। এটা সেই গান, সুর আগেই হয়েছে। এখন মাত্র লিখছি।’
তাহসানের মুখে সদ্য রচিত গানটির সুরের গন্ধে ম-ম করছে ঘর। কাজের ব্যাপারে যে মানুষটি এত খুঁতখুঁতে, তাঁর ওপর কি মন খারাপ করে থাকা যায়!
ভালোবাসা দিবসের নাটকে বারবার আপনি কেন?
‘আমার নাটকগুলো দেখে মানুষ হয়তো স্বপ্ন দেখেন, তাঁদেরও এমন একটি প্রেম হবে। তাই হয়তো তাঁরা আমার নাটক পছন্দ করেন। নাটকে আমি কিন্তু কখনো অভিনয় করি না।’
নাটকে তাহলে কী করেন তাহসান?
‘আমি খুব স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণের চেষ্টা করি।’
শুনব ভালোবাসা দিবসে প্রচারিত তাঁর নাটকগুলোর পেছনের গল্প।
ওমা, তাহসান বের করছেন একটি ফর্দ! সেখানে লেখা আছে, কী কী বলবেন তিনি। সব মিলিয়ে দেখি দুর্দান্ত হোমওয়ার্ক! আবার কথা শুরু করলেন তাহসান।
অফ বিট: আমি সাইকেল চালাতে পারতাম না। কিন্তু অফ বিট-এ অভিনয় করতে গিয়ে সাইকেল চালানো শিখতে হয়েছিল আমাকে। সে এক দারুণ কাণ্ড! এ নাটকে আমার বিপরীতে ছিলেন জয়া আহসান। বয়সে তিনি আমার বড়। এমনিতে তাঁকে জয়া আপু ডাকি কিন্তু নাটকটিতে যখন তাঁর সঙ্গে প্রেমের দৃশ্যে অভিনয় করতে হতো, কী যে অস্বস্তি হতো!
মধুরেণ সমাপয়েৎ: আশফাক নিপুন পরিচালিত এ নাটকে মিথিলা ছিল আমার সহশিল্পী। তত দিনে তিন বছরের প্রেম শেষে মিথিলার সঙ্গে জোড় বেঁধেছি আমি। নাটকের একটি দৃশ্যে নায়িকার সঙ্গে আমার বিয়ের ছবি দেখানো হয়। ফলে, আমাদের বিয়ের ছবিগুলো রিয়েল লাইফ প্রপস হিসেবে ব্যবহূত হয়েছিল মধুরেণ সমাপয়েৎ-এ। হা হা হা।
আচ্ছা, কথাবন্ধু মিথিলা নাটকের পেছনের গল্প কি তাহসান বলবেন না?
‘“ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প-২”-এর আওতায় নির্মিত এ নাটকগুলোর মধ্যে দুই নির্মাতা আশফাক নিপুন ও শাফায়েত মনসুর রানা পাণ্ডুলিপি নির্বাচিত হওয়ার আগে আমায় বললেন, আমাকে তাঁরা নাটকে নেবেন। কিন্তু তাঁদের নাটকের গল্পের সঙ্গে আমি বেমানান। ভেবেছিলাম, যাক বাবা বাঁচা গেল, এ বছর আর ভালোবাসা দিবসের নাটকে ভালোবাসার অভিনয় করতে হবে না। কিন্তু এর পরই উজ্জ্বলের ফোন। ফলে...’
১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাভিশনে প্রচারিতব্য কথাবন্ধু মিথিলা নাটকে তাহসানের সহশিল্পী অগ্নিলা ইকবাল। কথাবন্ধু ও এক যুবকের প্রেম নিয়ে নাটকের কাহিনি। তবে নাটকের পুরো কাহিনি তাহসান আমাদের বললেও আমরা এখনই সেটি ফাঁস করব না। শুধু বলব, এ নাটকের শেষ দৃশ্যে রয়েছে চমক। ফলে, অপেক্ষা করুন, দর্শক!
পাদটীকা: তাহসানের জীবনসঙ্গীর নাম মিথিলা। আর কাকতালীয়ভাবে তাহসান অভিনীত এ নাটকের নামকথাবন্ধু মিথিলা। তাই মিথিলার নাকি ‘গোস্সা’ হয়েছে খুব। তবে তাহসান বললেন, সেই রাগ ঝাঁঝালো নয়, মধুর।