বীরাঙ্গনাদের নিয়ে 'রাইজিং সাইলেন্স'

‘রাইজিং সাইলেন্স’ ছবির দৃশ্য
‘রাইজিং সাইলেন্স’ ছবির দৃশ্য

‘মুক্তিযুদ্ধে দুই লাখের বেশি নারী ও কিশোরী পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাঙালির স্বাধীনতাযুদ্ধকে বলা হয় জনযুদ্ধ। যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা হয়ে ওঠেন সেই জনযুদ্ধের অগ্র সেনা আর এই নারীরা চাপা পড়ে যান উপেক্ষার তলে। ধর্ষিত এই নারীরা চলে গিয়েছিলেন নীরবতা, বিচ্ছিন্নতা আর বিস্মৃতির অন্তরালে। “রাইজিং সাইলেন্স” ছবিটি তাঁদের গল্প নিয়ে এসেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে। সেই নারী ও কিশোরীরা কীভাবে লড়াই করেছেন মুক্তিযুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে, সেই গল্প রয়েছে এখানে।’ বললেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ।

মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনাদের জীবন নিয়ে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রাইজিং সাইলেন্স’-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনীর পর আজ রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এখানে হাসান আরিফ আরও বলেন, ‘ছবিটি নারীর সঙ্গে নারীর সম্পর্কের পরিভ্রমণ—যাঁরা যুদ্ধ সয়েছেন, যুদ্ধের হিংস্রতা আর পরবর্তী সময়ে দৈনন্দিন বিদ্বেষ সত্ত্বেও আগামী দিন গড়তে ক্ষত মুছেছেন শর্তহীন ভালোবাসায়।’

‘রাইজিং সাইলেন্স’ ছবির পোস্টার

সপ্তদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জাতীয় জাদুঘর মূল মিলনায়তনে গতকাল শনিবার লীসা গাজী পরিচালিত মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনাদের জীবন নিয়ে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘রাইজিং সাইলেন্স’-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ছবিটি প্রযোজনা করেছে লন্ডনভিত্তিক সংগঠন কমলা কালেকটিভ, ওপেনভাইজার ও মেকিং হার স্টোরি। সহযোগিতা করেছেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও দ্য ওসিরিস গ্রুপ।

বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রটির নির্মাতা লীসা গাজী, ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি শাহাদাত হোসেন, কমলা কালেকটিভের উপদেষ্টা জন বেকার প্রমুখ। এ সময় জানানো হয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে এই চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরুর স্থান। তাই এখানেই সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন যুক্তিযুক্ত মনে করেন চলচ্চিত্রটির গবেষণা উপদেষ্টা হাসান আরিফ। নির্মাতা লীসা গাজী জানান, তাঁর প্রথম ছবিটি এই নারীদের গল্প নারীদের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। ছোটবেলা থেকেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেছি।

২০১০ সালে ২১ জন বীরাঙ্গনার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। তখন থেকেই বীরাঙ্গনাদের ব্যক্তিগত গল্প আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহ করা শুরু করি। এর মধ্যে ২০১৪ সালে আমি ও সামিনা লুৎফা যৌথভাবে লিখেছি নাটক “বীরাঙ্গনা: যুদ্ধের নারী”। নাটকটি প্রযোজনা করেছে লন্ডনের নাট্য ও সংস্কৃতি সংগঠন কমলা কালেকটিভ। নাটকটি বাংলাদেশে ও লন্ডনে প্রদর্শিত হয়েছে। প্রশংসিতও হয়েছে। তখন এই ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি।’

সপ্তদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘রাইজিং সাইলেন্স’ ছবির দ্বিতীয় প্রদর্শনী হবে ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাতটায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে। প্রদর্শনী থেকে আয় করা অর্থ মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনা আর তাঁদের পরিবারকে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন নির্মাতা।