সাক্ষাৎকার: অঞ্জন চৌধুরী

বিশ্ব জানছে বাংলার লোকসংগীত কত সমৃদ্ধ

>আজ সন্ধ্যায় বাতি জ্বলবে ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব ২০১৭-এর মঞ্চে। তৃতীয় এই উৎসব সামনে রেখে আয়োজক প্রতিষ্ঠান সান কমিউনিকেশনসের চেয়ারম্যান এবং মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর মুখোমুখি হয়েছিল প্রথম আলো। কেমন তাঁদের প্রস্তুতি, কীভাবে তাঁরা স্বাগত জানাবেন লোকসংগীতপ্রেমী ও শিল্পীদের। সেসব নিয়ে তিনি কথা বললেন রাসেল মাহ্‌মুদ-এর সঙ্গে।
অঞ্জন চৌধুরী
অঞ্জন চৌধুরী

ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব ২০১৭-এর চিন্তা কীভাবে মাথায় এল?
আমাদের দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের লোকসংগীত ও শিল্পী। িকন্তু এই সংগীত ছড়িয়ে দেওয়ার বা শোনার কোন জাতীয় প্ল্যাটফর্ম আমাদের দেশে িছল না। আমার এ রকম একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্যই নিয়মিত এই আয়োজনটি করছি। একই মঞ্চে দেশের বাইরের লোকসংগীতশিল্পীরাও গান শোনান। ফলে, উৎসবটি আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছ। শুধু আমাদের সংগীতশিল্পীরা গাইলে হয়তো বিশ্বব্যাপী ছড়াত না। উৎসবটির ফলে বিশ্ব জানছে বাংলার লোকসংগীত কত সমৃদ্ধ।

গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর নিশ্চয়ই আরও চমৎকার পরিবেশ পাবেন দর্শকেরা?

গত দুই বছর খুব ভালো কিছু করতে পেরেছি বলে মনে হয় না। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল শিল্পী নির্বাচন করা। কারণ, এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে দর্শক-শ্রোতাদের বিনোদন দেওয়া। আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ ভালো শিল্পী বাছাই করে দর্শকদের সামনে হাজির করা। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা নিজেদের দেশের লোকসংগীতকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চাই। আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করলে এক্সপোজারটা একটু দ্রুত পাওয়া যায়। সামাজিক মিডিয়ার কারণে সেটা এখন আরও সহজ হয়েছে।

কিন্তু এ বছর নিবন্ধন করতে গিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মন ভেঙে গেছে। জানেন নিশ্চয়ই?

এটা একটা বিরাট সমস্যা। ব্যাপারটা জেনে আমারও মন খারাপ হয়েছে। আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই, কিন্তু সহকর্মীদের কাছ থেকে শুনেছি। লোকসংগীত উৎসব এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে উৎসবে উপস্থিত হতে ইচ্ছুক মানুষের চাহিদা বেড়ে গেছে। অনলাইন নিবন্ধন করাতে গিয়ে আমরা হিমশিম খেয়ে গেছি। প্রচুর অভিযোগ পেয়েছি যে অনেকেই রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না, সাইটে ঢুকতে পারছেন না। কিন্তু মাঠের ধারণক্ষমতার বেশি মানুষকে নেওয়া সম্ভব নয়। অবশ্য রেজিস্ট্রেশন করতে না পারলে এসব কথা আমি নিজেও বুঝতে চাইতাম না। যাঁদের জন্য অনুষ্ঠান, তাঁদের সবাইকে জায়গা দিতে পারছি না বলে আমি নিজেও হতাশ হয়েছি।

গত দুবার শিল্পীদের সময় নিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এবার এ রকম পরিস্থিতি সামাল দেবেন কীভাবে?

এটা একটা বড় সমস্যা। অনেক শিল্পী মঞ্চ থেকে নামতেই চান না। প্রথমবার অর্ক নামতেই চাইছিলেন না। মঞ্চে উঠে ডাকাডাকি করেও তাঁকে নামানো যাচ্ছিল না। ব্রিটিশ একটি দলকে বারবার বলেছি, ক্লোজ করো ক্লোজ করো। তারা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল আর বাজাচ্ছিল। যখন বললাম, সাউন্ড বন্ধ করে দেব, তারপর নেমে এসেছে। এতে আমিও খুশি হতে পারিনি, ওরাও না। এত দূর থেকে এসেছে, এত ক্রাউড দেখেছে, নামতে ইচ্ছে করবে কেন? কিন্তু সব শিল্পীকে সুযোগ দিতে হবে। আমাদের সময় তো সীমিত। সবাইকেই তো গাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে এসেছি।

উৎসবটি চার বা পাঁচ দিন করা যায় না?

একবার ভেবেছিলাম। কিন্তু সবকিছু আমার হাতে নেই। নিরাপত্তার একটা বিষয় আছে। একবার কথা উঠল যে সারা রাত করা যাক। পরে দেখা গেল আরও অনেক ব্যাপার আছে। তা ছাড়া পাশেই বাসস্থান। সারা রাত উৎসব চললে তাঁদের সমস্যা হবে। এটা তো অনেক লাউড মিউজিক। উৎসবের স্বার্থে তাঁরা ছাড় দেন, কিন্তু সেটারও একটা সীমা থাকা দরকার। ক্ল্যাসিক্যাল সফট মিউজিক, সারা রাত চললে সমস্যা হয় না। কিন্তু নুরান সিস্টার্স মঞ্চে উঠলে কারও পক্ষে ঘুমানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া আমাদের সময় দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। আমরা স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ যে অনুষ্ঠানটা করতে পারছি। মাঠ পাওয়া সাপেক্ষে হয়তো চার দিন করতে পারব।

রাত ১০টার পর বের হয়ে আর ঢোকা যাবে না, এটা একটা সমস্যা না?

নিরাপত্তার স্বার্থে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মানুষকে বিষয়টি বুঝতে হবে। যা কিছু করা হচ্ছে, তাঁদের নিরাপত্তার জন্যই। ঢাকা শহরে এমন নিরাপদ ভেন্যু আর একটিও নেই। কোনো অঘটন ছাড়া আমাদের শ্রোতা-দর্শকেরা এ রকম একটি উৎসব উপভোগ করতে পারছেন, এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট ব্যাপার। আমরা এমন একটা দেশ যে ছোট একটা ঘটনা ঘটলেও সারা বিশ্বে খবর হয়ে যায়। সে জন্য আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে একটু বেশি ভাবতে হয়।

দেশের শিল্পীদের আরও বেশি করে যুক্ত করা যায় কীভাবে?

শিল্পী বাড়াতে হলে উৎসবের দিন বাড়াতে হবে। আবার যদি নিজেদের ওপর বেশি ফোকাস করা হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক ফোকাস কমে যাবে। একমাত্র উপায় হচ্ছে তিন থেকে চার বা পাঁচ দিন করতে হবে। কিন্তু ভেন্যুটি পাওয়া কঠিন। যা হোক, শুধু মাঠেই না, সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেখা যাবে অনুষ্ঠান। মাছরাঙা টেলিভিশনেও লাইভ করা হবে।

এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দুস্থ লোকসংগীতশিল্পীদের জন্য কিছু করার পরিকল্পনা আছে?

আমরা ইতিমধ্যে একটা ফাউন্ডেশন নিয়ে কাজ করছি। শিল্পীরা ভালো গান করেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ হিট হয়, কিন্তু তাঁরা কোনো টাকা পান না। প্রশংসিত হন বটে। আমরা এই জিনিসটা নিয়েই কাজ করছি। যাতে তাঁরা নিজেদের গান থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হন, সেটাই হবে আমাদের কাজ।

রেজিস্ট্রেশন করতে না পারা মানুষেরা হতাশ হয়েছেন। তাঁদের জন্য কিছু বলবেন?

আগেই বলেছি যে এ ঘটনায় আমার নিজেরও খারাপ লেগেছে। যাঁরা রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন, তাঁদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, বিগত দিনগুলোর মতো তাঁরা শৃঙ্খলা মেনে একসঙ্গে মজা করবেন। কোনো বিশৃঙ্খলতার জন্য যেন কারও আনন্দ ব্যাহত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখবেন। যেহেতু সারা বিশ্ব অনুষ্ঠানটি লাইভ দেখবে, এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত, এটা যেন সবাই মাথায় রাখেন। আর সব মিডিয়াকেও ধন্যবাদ জানাই। তারা খুব আগ্রহসহকারে নিয়েছে এই উৎসবকে।