পঞ্চাশের দশক। জাপানে তখনো নারী চরিত্রগুলো পর্দায় অতটা জৌলুশময় নয়। সাদাকালো পর্দায় নারীকে প্রথমবারের মতো ঝলমলে দেখল দর্শকেরা। প্রথম গ্ল্যামার নায়িকা হিসেবে দেখা গেল জাপানি অভিনেত্রী মাচিকো কিওকে। নামটা কি অপরিচিত? তাদের জন্য বলি। আকিরা কুরোসাওয়ার বিখ্যাত সিনেমা রশোমন–এর সামুরাইয়ের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ১২ মে মারা যান তিনি।
১৯২৪ সালে জাপানের ওসাকার মোতোকো ইয়ানোতে জন্মেছিলেন এই অভিনেত্রী। অভিনয়জীবনে জাপানের বড় বড় সব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। নারী তারকা হিসেবে তাঁকে জাপানের কিংবদন্তির মর্যাদা দেওয়া হয়। তাঁর আগে কোনো অভিনেত্রীর এতটা ঝলমলে উপস্থিতি ছিল না জাপানি চলচ্চিত্রে। জাপানি পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া, ইয়াসুজিরো ওজু, তেনোসুকি কিনুগাসা, কেনজি মিজোগুচি, কেন ইচিকাওয়ার মতো কিংবদন্তিদের পরিচালনায় কাজ করেছেন এই অভিনেত্রী। যদিও মাচিকোর সৃজনশীল যাত্রা শুরু হয়েছিল অভিনয় নয়, নাচ দিয়ে।
ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলেন চমৎকার নাচিয়ে। ১৯৪৯ সালে তাঁর নাচের দ্যুতি চোখে পড়ে প্রযোজক মাসাইকি নাগাতার। নাগাতা তাঁকে নিয়ে আসেন রুপালি জগতে। তাঁকে তৈরি করেন তারকা হিসেবে। ১৯৫০ সাল। আকিরা কুরোসাওয়া তাঁর রশোমন ছবির কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রের জন্য লোক খুঁজছেন। প্রযোজক নাগাতা যুক্ত ছিলেন এই ছবির সঙ্গে। তিনিই সুপারিশ করেন কুরোসাওয়ার এই ছবির সামুরাইয়ের স্ত্রী হিসেবে মাচিকো কিওকে নেওয়ার জন্য। সেই বিখ্যাত চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান মাচিকো। ছবিটি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে জেতে গোল্ডেন লায়ন। জাপানি সিনেমা বিশ্ব চলচ্চিত্র দরবারে পরিচিত হয় অন্যভাবে।
বড় পরিচালকের ছবি বলেই নয়, প্রতিটি চরিত্রের জন্যই মাচিকো ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। ১৯৮২ সালে সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফিতে কুরোসাওয়া লিখেছেন, ‘শুটিংয়ের আগে মহড়ায় আমি মাচিকোর ডেডিকেশন দেখে বাক্রুদ্ধ হয়ে যাই। সকালে আমি যখন ঘুম থেকে উঠিনি, তখনই তিনি এসে হাজির। পাণ্ডুলিপি হাতে নিয়ে আমার কাছে বসে থাকতেন। বলতেন, “দয়া করে আমাকে কিছু শেখান।” আমি তাঁর কথায় অবাক হতাম।’
>১৯৫৩ সালে কিনুগাসার গেট অব হেল সিনেমাতেও দেখা যায় মাচিকোকে। এই সিনেমাটি প্রযোজনা করেছিলেন মাসাইকি নাগাতা। সিনেমাটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে গ্রাঁ প্রি পুরস্কার জেতে। জিতে নেয় সম্মানসূচক অস্কার পুরস্কারও। এত বড় বড় পরিচালক আর বিখ্যাত ছবিতে চমৎকার অভিনয়ের জন্য মাচিকোর নাম দেওয়া হয় জাপানের ‘গ্রাঁ প্রি অ্যাকট্রেস’ হিসেবে।
মাচিকো জাপানের আরেক মাস্টার চলচ্চিত্রকার কেনজি মিজোগুচির উগেস্তু সিনেমাতেও অভিনয় করেন। সিলভার লায়ন জিতেছিল সিনেমাটি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে। এই সিনেমাকে জাপানের সোনালি যুগের সিনেমা হিসেবে দেখা হয়। ১৯৫৩ সালে কিনুগাসার গেট অব হেল সিনেমাতেও দেখা যায় মাচিকোকে। এই সিনেমাটি প্রযোজনা করেছিলেন মাসাইকি নাগাতা। সিনেমাটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে গ্রাঁ প্রি পুরস্কার জেতে। জিতে নেয় সম্মানসূচক অস্কার পুরস্কারও। এত বড় বড় পরিচালক আর বিখ্যাত ছবিতে চমৎকার অভিনয়ের জন্য মাচিকোর নাম দেওয়া হয় জাপানের ‘গ্রাঁ প্রি অ্যাকট্রেস’ হিসেবে।
হলিউডেও অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী। দ্য টিহাউস অব দ্য অগাস্ট মুন সিনেমাতে মাচিকোকে দেখা যায় মারলন ব্রান্ডোর বিপরীতে। মৃত্যুর দুই বছর আগে ২০১৭ সালে মাচিকোকে জাপান একাডেমি প্রাইজ অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
সূত্র: দ্য হলিউড রিপোর্টার, বিএফআই