সাদা পর্দায় ঘেরা ঘরের খাটেও বিছানো সাদা চাদর। সেখানে থেকে নামলেই নায়িকার পা পড়ে সাদা পালকের নরম গালিচায়। সিনেমায় এমনভাবে দেখা যায় নায়িকার দিন শুরু হতে। কিন্তু িবদ্যা িসনহা মিমের জন্য এটাই বাস্তব। তাঁর ঘরটা সাজানো–গোছানো সিনেমার সেটের চেয়ে কম নয়। মিম নিজে যেমন আকর্ষণীয়, তাঁর ঘরটাও তাঁর সঙ্গে মানিয়ে যায় পুরোপুরি।
আসছে ‘দাগ হৃদয়ে’
অন্দরসজ্জা নিয়ে আর কথা না বাড়াই। আমরা মিমের বাসায় যাই গত সোমবার, তাঁর নতুন ছবির খোঁজ জানতে। তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে জানতে চাই সুন্দরী এই নায়িকার নিজের ফ্যাশন আর স্টাইলের ভাবনা। আগামীকাল শুক্রবার তাঁর অভিনীত দাগ হৃদয়ে ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। এ ছবিতে মিমের নায়ক বাপ্পি চৌধুরী। ছবিটির শুটিং মিম করেছিলেন বেশ আগে, সে প্রায় বছর তিনেক আগের কথা। তাই দাগ হৃদয়ে নিয়ে মিমের স্মৃতি এখন অনেকটাই ঝাপসা হয়ে এসেছে। তাই আমরাও জোর করে ছবিটি নিয়ে তাঁর কাছে কিছু জানতে চাইনি, শুনতে চাইনি শিল্পীদের সেই অতিপরিচিত বয়ান—‘আশা করি, দর্শকদের ভালো লাগবে’!
মিমের স্টাইল
সরাসরি মিমের আলমারির দিকে চোখ যায় আমাদের। সেদিকে তাকাতেই বোঝা যায় মিমের আলমারিতে এখন ভর করেছে বসন্ত। জানতে চাই, কোন ধারা মেনে এখন নিজেকে সাজান–গোছান তিনি? ফুলেল জাম্পস্যুট পরা গোলাপি আভায় রঙিন মিম বলেন, ‘কোনো ধারা (ট্রেন্ড) মেনে সাজি না। আমি সাজ আর পোশাক বাছাই করি উপলক্ষ আর সময় বুঝে। কাজের খাতিরে। নিজের কথা ভেবে তো কখনো সাজাই হয় না। সব সময় মাথায় থাকে কোথায় যাচ্ছি, কোন কাজে যাচ্ছি, সেখানে কোন ধরনের দর্শক বা অতিথিরা থাকবেন—সেসব ভেবে ঠিক করি আমার সাজপোশাক।’
প্রিয় রং, প্রিয় সুগন্ধি
মিম আমাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সাজঘরের ড্রেসিং টেবিলে থাকা ব্যাগ ঘেঁটে খুঁজতে থাকেন প্রিয় রঙের লিপস্টিক। ব্যাগটার দিকে চোখ যেতেই দেখি—গোলাপি রঙের যত ধরন আছে মিমের ব্যাগভর্তি শুধু সেগুলোই। বুঝতে বাকি থাকে না, মিমের আলাদা একটা পক্ষপাত আছে গোলাপির প্রতি। ড্রেসিং টেবিলের পাশে থরে থরে রাখা সুগন্ধির বোতল। কোনোটা ডিওরের, কোনোটা ভিক্টোরিয়াস সিক্রেটের স্পেশাল এডিশন। মিম সেখান থেকে তাঁর সবচেয়ে শখের সুগন্ধিটা বের করে দেখান। সেটার নাম হলো ‘টার্বুলেন্স’। লুই ব্যুটনের। ব্যাংকক থেকে মোটা দামে কিনেছিলেন। প্রিয় জিনিস, তাই যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছেন। প্রতিদিনের জরুরি অনুষঙ্গের একটি এই টার্বুলেন্স।
বেহিসাবি মিম, হিসাবি মা
কথায় কথায় মিম কয়েকবার বললেন ব্যাংককের কথা। সবশেষে জানালেন, কেনাকাটার জন্য এই জায়গাটাই খুব প্রিয় তাঁর। ‘ছাড়’ বা ‘সেল’ পেলে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠেন। পারলে কিনে নেন পুরো দোকান! সেটা ব্যাংকক হোক, ভারত হোক কিংবা ঢাকা! তবে তাঁর এই বেহিসাবি অভ্যাসে লাগাম টানেন মিমের মা (ছবি সাহা)। হাসতে হাসতে মিম বলেন, ‘আমি তো কেনাকাটা করতে গেলে কিছু বুঝতে পারি না। কিনতেই থাকি। যা দেখি সেটাই কিনতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু মা তখন আমাকে থামান। মা প্রয়োজনের বাইরে কেনাকাটা করতে দেন না।’ মিম আরও একটা কারণে তাঁর মায়ের খুব প্রশংসা করলেন। তা হলো মিমের মায়ের ‘সাহসী’ পছন্দ।
প্রিয় গোলাপি রং থেকে বেরিয়ে নিজেকে একটু ছাঁচের বাইরে ফেলে সাজার ইচ্ছে হলো মিমের। গাঢ় রঙের লিপস্টিক, চোখ ভারী করা সাজ। কিন্তু অনেক খুঁজেও গোলাপির বাইরে কোনো ‘স্ট্রাইকিং’ রং খুঁজে পেলেন না তিনি। হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘আমার মায়ের একটা বেগুনি রঙের লিপস্টিক আছে। ওটা দিই। মা যে কীভাবে এমন সব রং অনায়াসে পরতে পারে, আমি বুঝি না। আমার সাজপোশাক তো একটু বদলালেই কেমন যেন ভয় ভয় লাগে! সবাই কীভাবে নেবে, কী বলবে— আরও নানান কিছু। সেই ভয়ে নিজের স্টাইল চেঞ্জই করা হয় না।’
জিমখানার রুটিন
স্টাইল বদল করা না হয় না–ই হলো। শারীরিক গড়নে কিন্তু নিয়মিত টুকটাক বদল আনেন মিম। বেশির ভাগ সময়ই তা করেন কাজের খাতিরে, চরিত্রের স্বার্থে। কখনো বাড়াতে হয় ওজন, কখনো কমাতে হয়। তাই নিয়ম করে ব্যায়াম চালিয়ে যান। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মিমের বাসা। বাড়ির কাছেই জিম। ছুটির একটা দিন বাদ দিয়ে আর ছয় দিনই জিমে গিয়ে ঘণ্টাদুয়েক ঘাম ঝরান। ভাত আর রুটির মতো কার্ব তো একেবারেই ছুঁয়ে দেখেন না। খাবার নিয়ে বিলাসিতার মধ্যে শুধু মাঝেসাঝে মায়ের হাতের ক্ষীর আর নিজের হাতে বানানো শাহি টুকরা চেখে দেখেন। এর বাইরে মিম চলেন কঠিন জিম রুটিন ও ডায়েট মেনে। এটাও তাঁর কাজের অংশ।
যে স্টাইলে স্বাচ্ছন্দ্য
মিমের স্নিকার্স, জিনস আর টি–শার্ট খুব পছন্দের। হালের চলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁর আলমারিও ভরে উঠেছে ক্রপ টপ আর লাম্পারে। শুটিং ছাড়া যেকোনো কাজে বাইরে যেতে হলে জিনস আর টি–শার্ট মিমের ‘শর্টকাট’। এখন বসন্ত আসি আসি করছে, তাই প্রতিদিনের সেই জিনস ও টি–শার্টেও থাকে রঙিন ব্যাপার। বিকেলের দিক থেকে পড়তে থাকে একটু একটু শীত। তাই হালকা–পাতলা একটা জ্যাকেট রাখেন গাড়িতে। আর থাকে রোদচশমা।