যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালা

বছর পেরিয়ে মুক্তি পেল একটি ছবি

প্রেম আমার ২ ছবিতে আদ্রিত ও পূজা
প্রেম আমার ২ ছবিতে আদ্রিত ও পূজা

যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালায় ‘প্রেম আমার ২’ ছবিটি গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুক্তির পর গতকাল বাংলাদেশের ৫৬টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের সংশোধিত নীতিমালা প্রকাশিত হয়। নতুন নীতিমালা প্রণয়নের এক বছরের বেশি সময় পর এই একটিমাত্র ছবি মুক্তি পেল বাংলাদেশ–ভারতের যৌথ প্রযোজনায়। ছবিটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের গ্রিনলাইট প্রোডাকশন ও ভারতের রাজ চক্রবর্তী প্রোডাকশনস্।

যৌথ প্রযোজনার চিত্রনাট্য অনুমোদন ও প্রিভিউ কমিটির সদস্য ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, সংশোধিত নীতিমালা হওয়ার পর প্রায় ১৫ মাসের মাথায় যৌথ প্রযোজনার একটি ছবি মুক্তি পেল। নতুন নীতিমালায় চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারাগুলো কঠোর করা হয়েছে। ফলে যাঁরা এত দিন নিয়মিতই যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ করতেন, তাঁরা আর আগ্রহী হচ্ছেন না। যৌথ প্রযোজনায় ছবির শুটিংয়ের আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে একাধিক বিষয়ের অনুমতি নিতে হয়, এর ফলে দাপ্তরিক কাজ শেষ করে আনতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এসব কারণেই ভোগান্তির ভয়ে বর্তমান নীতিমালায় আর কেউ ছবি বানাতে চাইছেন না। এ জন্যই সংশোধিত নীতিমালায় এত দিনে এসে একটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। নওশাদ আরও বলেন, আগের নীতিমালায় বছরে তিন-চারটি ছবি নির্মিত হতো, ছবিগুলোর ব্যবসাও হতো। বর্তমান নীতিমালায় তো ছবিই নেই। ছবির অভাবে এখন সিনেমা হলও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

একই কথা বললেন ২০১২ সালের নীতিমালায় তৈরি ব্ল্যাক ছবির বাংলাদেশ অংশের প্রযোজক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া। তিনি বলেন, এত কঠিন শর্তের নীতিমালা মেনে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ সম্ভব নয়।

নতুন সংশোধিত নীতিমালায় চিত্রনাট্য অনুমোদন পাওয়ার পরও অনেকেই ছবি নির্মাণ করতে পারেননি। বালিঘর ও সুলতান: দ্য স্যাভিয়র ছবি দুটির চিত্রনাট্য যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের সংশোধিত নীতিমালায় প্রিভিউ কমিটির কাছ থেকে অনুমোদন পায় গত বছরের এপ্রিল মাসে। কিন্তু বর্তমান নীতিমালার কারণে শেষ পর্যন্ত সুলতান: দ্য স্যাভিয়র ছবিটি এককভাবে ভারত প্রযোজিত ছবি হিসেবে তৈরি হয়। অন্যদিকে বালিঘর ছবির আর কাজই শুরু হয়নি।

নতুন নীতিমালায় (ঙ) অনুচ্ছেদের শর্তগুলোই যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে কয়েকজন প্রযোজক জানিয়েছেন। কারণ, সেখানে দুই দেশের শিল্পী সমানুপাতিক হারে অংশগ্রহণের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের কুশলী ও শুটিং লোকেশনও সমানুপাতিক হারে ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া আছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় শিকারি, নবাব, বস ২, বাদশাসহ ১২টি ছবি নির্মাণ করেছে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে মুভিজ। বাংলাদেশের বর্তমান যৌথ প্রযোজনার নীতিমালার কারণে আপাতত বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে না এই প্রতিষ্ঠান। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অশোক ধানুকা বলেন, সিনেমা তৈরির পথ যত সহজ হবে, ততই ভালো কাজ হবে। কিন্তু এই নীতিমালা মেনে সিনেমা তৈরি কঠিন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ভারত–বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় মুক্তি পায় স্বপ্নজাল, নূরজাহান ও তুই শুধু আমার নামের কয়েকটি ছবি। কিন্তু এগুলো ২০১২ সালের নীতিমালায় তৈরি হয়েছিল। তবে ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ জানান, ২০১৭ সালের সংশোধিত নীতিমালায় গত জানুয়ারিতে ফুড়ুৎ, দিন: দ্য ডেসহ মোট তিনটি যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।