ঠিক দুই বছর আগের কথা। এই নভেম্বরেই ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টে অংশ নিতে এসে দেখা হয়েছিল স্কটল্যান্ডের শিল্পী সাইমন থ্যাকার ও বাংলাদেশের ফরিদা ইয়াসমীনের। ভারতের রাজু দাস বাউলও ছিলেন সঙ্গে। সেবার সাইমন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এই দলটি নিয়ে ভবিষ্যতে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা আছে তাঁর।
দুই বছর পর সাইমন ফেসবুকে জানালেন, সেই পরিকল্পনা বাস্তব রূপ নিয়েছে। সাত বছর আগে উপমহাদেশীয় সংগীতের জন্য সাইমন ‘স্বরা-কান্তি’ নামের যে গানের দলটি গড়েছিলেন, সেখান থেকে তৈরি হয়েছে দ্বৈত অ্যালবাম ত্রিকালা। এই অ্যালবামের রেকর্ডিং হয়েছে গত মার্চে, ভারতের কলকাতায়। শিগগিরই এটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
দুটি অ্যালবামের প্রথমটিতে আছে হিন্দুস্তানি, কর্ণাটকি শাস্ত্রীয় সংগীত এবং পাঞ্জাবি লোকসংগীত। আর দ্বিতীয়টিতে আছে বাংলা বাউল গান। এই অ্যালবামে গেয়েছেন কুষ্টিয়ার বাউলশিল্পী ফরিদা ইয়াসমীন ও ভারতের শান্তিনিকেতনের রাজু দাস বাউল। তবলায় সংগত করেছেন ভারতের সুনয়না ঘোষ। অ্যালবামে আছে লালনের কয়েকটি গান—‘হেলায় হেলায় দিন চলে যায়’, ‘কেন ডুবলি না মন’, ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’, ‘পাখি কখন জানি উড়ে যায়’, ‘দিল দরিয়ার মাঝে দেখলাম আজব কারখানা’। আরও আছে শাহ আবদুল করিমের ‘তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো’, রাধারমণ দত্তের ‘ভ্রমর কইও গিয়া’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘একলা চলো রে’, বাউল গান ‘হরি দিন তো গেল’, ‘মেনকা মাথায় দিল ঘোমটা’ গানগুলো।
কুষ্টিয়া থেকে মুঠোফোনে ফরিদা বলেন, সাইমন একজন বিদেশি হয়ে বাউল গানকে এতটা ধারণ করেন দেখে তিনি খুব অবাক হয়েছেন। এই প্রজেক্টে কাজ করতে পেরে তিনি খুব খুশি। ফরিদা বলেন, ‘ভাষার সমস্যা ছিল। কিন্তু সবাই মিলে খুব আনন্দ নিয়ে কাজটা করেছি।’ এখনো ফরিদার বিশ্বাস হয় না, একটি আন্তর্জাতিক মানের অ্যালবামে তিনি গেয়ে ফেলেছেন!
সাইমন বলেন, ‘আমার মনে হয় আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের শিল্পীদের সেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না। বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংগীতিক ঐতিহ্যের ধারাকে আমি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চাই।’
ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে সাইমন বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ লোকসংগীতকে এত ভালোবাসে, সেটা সেই দিনই বুঝেছি। বাংলাদেশে আমি আরও আসতে চাই।’