ফুংসুখ ওয়াংড়ুর সঙ্গে মিথিলার যে কথা হলো

সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে মিথিলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে মিথিলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

বলিউডের আইকনিক চলচ্চিত্র ‘থ্রি ইডিয়টসে’ আমির খান ‘র‌্যাঞ্চোরদাস শ্যামলদাস চ্যাঞ্চোড়’ ওরফে ‘ফুংসুখ ওয়াংড়ু’ চরিত্রটিকে করে তুলেছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। চরিত্রটি কিন্তু কাহিনিকারের মাথায় আকাশ থেকে আসেনি। ফুংসুখ ওয়াংড়ু চরিত্রটি লেখা হয়েছিল সোনম ওয়াংচুক নামের এক শিক্ষা সংস্কারকের জীবন থেকে। সেই সোনম ওয়াংচুক এসেছিলেন ঢাকায়। এসেন, ঘুরলেন, আলাপ করলেন আর গতকাল বিকেলেই ৪টার ফ্লাইট ধরে ফিরে গেলেন লাদাখ। ব্যস্ত শিডিউলের এক ফাঁকে ২ ঘন্টা আলাপ করলেন রাফিয়াদ রশিদ মিথিলাদের সঙ্গে।

পঞ্চমবারের মতো আয়োজিত ঢাকা আর্ট সামিটের আমন্ত্রণে তিনি যে ঢাকায় আসবেন, সেটা প্রায় এক মাস আগে থেকে নির্ধারিত হয়। তখনই তিনি ‘ব্রাক’কে মেইলে জানান, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে তিনি জানতে চান, আলাপ করতে চান। তাঁর ঢাকা সফরের মাঝে একটা মিটিংয়ের জন্য মেইলে লিখেছিলেন। ব্রাকের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে কাজ করেন মিথিলা। তাঁরাও নিজেদের সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে একটি সময় জানান। তাই সোনম ওয়াংচুক ঢাকা এসে ঘুরে দেখেন এই প্রতিষ্ঠান।

সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে মিথিলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

কী আলাপ হল বৃহস্পতিবার বিকেলের সেই মিটিংয়ে? উত্তরে প্রথম আলোকে মিথিলা বলেন, ‘সোনম ওয়াংচুক কিন্তু আমাদের সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে এসেছে। এসেই জানাল, তিনি দূর থেকে ব্রাকের শিক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। তবে তাঁর মূল আগ্রহ শিশুর বিকাশে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে। আমি এই বিভাগটা দেখি। আমি সেটা নিয়ে বললাম। ‘প্লে লাভ মডেল’ বা খেলার মাধ্যমে শেখানোর যে ব্যাপারটা, সেটা শুনে উনি খুবই উচ্ছ্বসিত। জানালেন, তাঁর স্কুলেও তিনি অনেকটা একইভাবে শেখান বা নতুন নতুন জিনিস বানান। আমাদের কাজের প্রশংসা করলেন। তাঁর নিজের যাত্রাটা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করলেন।'

মিথিলা আরও জানান, মানুষ হিসেবে সোনম ওয়াংচুককে তাঁর অত্যন্ত বিনয়ী মনে হয়েছে। এত বড় একজন মানুষ, কিন্তু একেবারে যেন মাটির মানুষ। তাঁর জীবনের গল্প খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক।

ইনস্টাগ্রামে সোনাম ওয়াংচুকের সঙ্গে কয়েকটি ছবি পোস্ট করে মিথিলা লেখেন, ‘তাঁর সঙ্গে কথা বলে খুবই ভালো লাগল। এই মানুষটাই লাদাখের শিক্ষা ব্যবস্থা বদলে দিয়েছেন। তাঁর থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই "থ্রি ইডিয়টস" ছবিটা নির্মিত। সোনম জানিয়েছেন, তিনি ব্রাকের কার্যক্রমে মুগ্ধ। দূর থেকে আমাদের কাজ দেখেন। খোঁজ রাখেন আর আমাদের কাছ থেকে শিখতে চান। তাই ঢাকায় স্বল্প সময়ের সফরেও তিনি আমাদের সঙ্গে আলাপনে বসার সময় বের করেছেন।’

সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে মিটিংয়ে মিথিলা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

পরদিন ঢাকা আর্ট সামিটের বিশেষ অনুষ্ঠানে এই শিক্ষাসংস্কারক ও প্রকৌশলী ন্যূনতম সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে বেঁচে থাকার উপকারিতার কথা বলেন। ভারতের লাদাখে বিপ্লব ঘটানো ওই প্রকৌশলী ঢাকায় বললেন, ‘বড় বড় শহরের মানুষের জীবনাচরণ বদলাতে হবে। গাড়ির বদলে সাইকেলে চড়া, বিমানের বদলে রেলগাড়ি এবং সবজিভোজী হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। মুম্বাই, নিউইয়র্ক, ঢাকার মতো বড় বড় শহরের লোকেরা সাধারণ জীবন যাপন করলে আমরা পর্বত ও সমুদ্রতীরের মানুষেরা ভালোভাবে বাঁচতে পারব।’

‘স্টুডেন্টস এডুকেশন অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ’ নামের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন সোনম ওয়াংচুক। মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় স্কুলটি থাকে প্লাস ১৫ ডিগ্রিতে। বন্যায় ভেসে থাকে পানির ওপর। গ্রীষ্মের খরাতেও সেখানে পাওয়া যায় পানি। পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে, এমন কিছুই নেই সেই স্কুলে।

অদ্ভুত সেই স্কুলে পড়ার যোগ্যতা ‘ম্যাট্রিক ফেল’। আর সর্বোচ্চ শাস্তি, এক সপ্তাহ স্কুল ছুটি! সোনমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে তাই অনেকেই বলেন ‘ইউনিভার্সিটি অব ফেইলরস’। তিন-চারবারের ‘ফেলটুস’ সেই ছাত্রদের অনেকেই আজ বিশ্বসেরা সাংবাদিক, নির্মাতা ও স্বনামধন্য উদ্যোক্তা।