মতামত

প্রযোজক-পরিচালককে ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে

বদিউল আলম খোকন
বদিউল আলম খোকন
কমছে প্রেক্ষাগৃহ, কমছে দেশি চলচ্চিত্র নির্মাণের সংখ্যা, প্রযোজকেরাও এ শিল্পে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছেন। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গত মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারও করে তারা। ঢাকাই ছবির চলমান এই সংকটের মধ্যে প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র আনন্দ–এ গত ২১ মার্চ প্রকাশিত হয়েছিল ‘সারা বিশ্বের ছবি দেখতে চাই: সব কটা জানালা খুলে দাও’ শীর্ষক নিবন্ধ। সেই লেখার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ লিখেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি যে আলটিমেটাম দিয়ে সারা দেশে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশে ভালো মানের ছবি নির্মিত হয় না। এটা ভুল কথা। ভালো ছবি বাংলাদেশে নির্মিত হয়। তবে সব সময় ভালো ছবি কখনোই হবে না। যাঁরা বাজারের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা জানেন, যেসব পণ্য বাজারে যায়, তার সব কটি মানুষের চাহিদাসম্পন্ন হয় না। কেবল কয়েকটি মানসম্পন্ন হয়। কিছু পণ্য বিরক্তিকরও মনে হয়।

যা–ই হোক, সে কথা ধরেই বলছি, এসব কথা না বলে আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এখন যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থান থেকে উত্তরণের জন্য কী করা দরকার, সেটা সম্মিলিতভাবে বসে ঠিক করা দরকার। আমি যদি হঠাৎ বলি সিনেমা বানাব না, হল কীভাবে চালায় দেখব, তা কি হয়? তাঁরা বলছেন, সিনেমা হল বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে। আমরা যদি বলি, চলচ্চিত্র না থাকলে সিনেমা হল দিয়ে কী হবে, তবে? কথাটা অনেকটা মুরগি আগে না ডিম আগের মতো।

সবারই সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে। হলমালিকেরা একটি পক্ষ, আমরাও। আমরা ছবি নির্মাণ করি। হলমালিক ছবি প্রদর্শন করেন। এখানে তৃতীয় পক্ষও একটা আছে, সরকার। এখানে সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা লাগবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে বসি।

বিদেশি ছবি উন্মুক্ত করার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি আছে। বাংলাদেশের বাজারে যদি বিদেশি সব পণ্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, তখন দেশের কিছুই থাকবে না। সবাই বাইরের পণ্য কিনবে। তখন বাংলাদেশের শ্রমিক, শিল্পমালিকেরা কী করবেন? এটা কখনোই হয় না।

দেশের সংস্কৃতি বাঁচলেই দেশ বাঁচবে। বাইরের ছবি এনে আমার সংস্কৃতিকে রক্ষা করা যাবে না। সেখানে আমার দেশের ছবি লাগবে। এখানে কী কী সমস্যা আছে, সেটা দেখতে হবে। আমার মনে হয়, এখানে তাঁদের একটা দুরভিসন্ধি কাজ করছে। তাঁরা বাইরের ছবি এনে নিজেদের প্রেক্ষাগৃহ উজ্জীবিত করতে চাইছেন। আমি আপনাকে একটা সিনেমা দেব, আপনি যদি নামমাত্র টাকা ফেরত দেন, তাহলে আমি আরও ভালো সিনেমা বানাব কী করে? আমার ছবি বিক্রির ন্যায্য হিস্যা তো আমাকে দিতে হবে। আপনি ১৫০ টাকার টিকিট বিক্রি করে প্রযোজককে মাত্র ৩০ টাকা দেবেন। তার মধ্যেই প্রজেক্টর ভাড়া, ব্যানার, পোস্টারের খরচ দিতে হবে। আমার পকেট থেকেই টাকা খরচ করে ছবি নির্মাণ করব, আবার আমিই ছবি চালানোর সব ব্যবস্থা করব, তাহলে কিন্তু কখনোই ভালো ছবি হবে না। তাঁদের এ পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করতে দিতে পারি না।

বাইরের ছবি দেখানো হোক, আমরাও চাই। বাইরের ভালো ভালো ইংরেজি ছবির মর্নিং শো হোক। এটা তো আগেও ছিল। আমরা বলছি, অন্তত ৭৫ শতাংশ শোতে বাংলাদেশের ছবি দেখাতে হবে। তাঁরা ১০০ শতাংশ শোতেই বাইরের ছবি দেখাতে চান। এতে আমাদের ছবির কোনো মূল্যায়ন হবে না, সেটা আমরা মানি না।

সিনেমা হলকে উজ্জীবিত করতে হলে প্রযোজক-পরিচালককে ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। দেশে বড় বড় শিল্পপতি আছেন। তাঁরা ভাবেন, এখানে যে টাকা বিনিয়োগ করবেন, তার বিপরীতে কীভাবে মুনাফাটা আসবে? বিনিয়োগ ফেরতের নিশ্চয়তা না পেলে এখানে ভালো ছবি কখনোই নির্মিত হবে না।

লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি

ঘোষণা
পাঠক এ প্রসঙ্গে আপনাদের মতামত ও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন আমাদের। চিঠি পাঠাতে খামের ওপর লিখুন মতামত ও প্রতিক্রিয়া (আনন্দ)। িঠকানা: বিভাগীয় সম্পাদক, আনন্দ, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন ২০-২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫ অথবা ই–মেইল করুন এই ঠিকানায়: ananda@prothom–alo.info