সময়টা ২০১৬ সাল। রেভেন্যান্ট ছবির জন্য অভিনয়জীবনের প্রথম অস্কার জিতলেন হলিউড অভিনেতা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও। সেই জয়ের দারুণ প্রভাব পড়ল বাংলাদেশের অভিনেত্রী সাবিলা নূরের ওপর। রীতিমতো ওলট-পালট অবস্থা! কারণ, সাবিলা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুধু নিজের মত প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, এই ছবির জন্য লিওনার্দোর অস্কার না পেলেও হতো। ব্যস, বেধে গেল বিশাল গন্ডগোল। সাবিলাকে নিয়ে শুরু হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসি-ঠাট্টা, ট্রল আর উপহাস। সেই সময়ের কথা এখনো ভুলতে পারেননি সাবিলা নূর। কিন্তু এসব ঠাট্টা-উপহাস আর ভাবায় না তাঁকে। তাই তো সাহস করে আবার কথা বললেন সেই একই নায়ক নিয়ে, তাঁর অভিনীত ছবি ওয়ানস আপন আ টাইম ইন...হলিউড নিয়ে।
লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও আমার সবচেয়ে প্রিয় নায়ক। তাঁর নতুন ছবি আসবে আর আমি দেখব না, সেটা সম্ভব না। তাই ঢাকায় ওয়ানস আপন আ টাইম ইন...হলিউড আসার পরপরই আর তর সইতে পারলাম না। থ্রিলার, সিরিয়াল কিলিং আর ডার্ক সিনেমা আমার খুব পছন্দ। তাই দুর্ধর্ষ চার্লস ম্যাসনকে কুয়েন্টিন টারান্টিনো পর্দায় আনছেন শোনার পর থেকে আমি অধীর হয়েছিলাম। ভাবছিলাম, না জানি টারান্টিনো কীভাবে এই দুর্ধর্ষতা পর্দায় তুলে ধরেন! কিন্তু ছবির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্মাতা দর্শককে অপেক্ষাতেই রেখে গেছেন। আর এই অপেক্ষাই আমার কাছে ছবির সবচেয়ে বড় চমক মনে হয়েছে।
প্রত্যাশার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
কোনো একটা সিনেমা বা সিরিজ দেখার আগে সেটা নিয়ে পড়াশোনা করা আমার অভ্যাস। ওয়ানস আপন আ টাইম ইন...হলিউড–এর বেলাতেও তা–ই করেছি। কিন্তু আমার সব প্রস্তুতিই ছিল বৃথা। ছবিটা দর্শকের প্রত্যাশাকে একদম দুমড়েমুচড়ে রেখে দিয়েছে। তবে হতাশ করেনি একটুও।
লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর অভিনয়ের কথা কি আর বলব! মানুষ তো আবার নিশ্চয় এ নিয়ে হাসাহাসি করবে। কিন্তু লিওনার্দোর প্রতি ভালো লাগা ওই হাসাহাসির ভয়ে তো আর থেমে থাকবে না। আমি তাঁর প্রতিটি ছবি এক্কেবারে বুঁদ হয়ে দেখি। এই ছবি নিয়ে মাথায় অনেক কিছু চলছিল। ব্র্যাড পিটের সঙ্গে এক পর্দায় কতখানি ভারসাম্য রেখে অভিনয় করবে
ন লিও, এটা দেখার অপেক্ষা ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ছবির শেষ দৃশ্য পর্যন্ত আমার প্রত্যাশা অক্ষুণ্ন ছিল। ব্র্যাড পিট আর লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। দর্শকের জন্য বলব, এটা সবচেয়ে দারুণ ‘ট্রিট’ ছিল।
ব্র্যাড পিটে মুগ্ধ
খেয়াল করে দেখলাম, যে ছবিগুলোয় ব্র্যাড পিটকে আরেকজন শক্তিমান অভিনেতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করতে হয়, সে ছবিগুলোয় অসাধারণ কাজ করেন পিট। একেবারে জাদু দেখান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফাইট ক্লাব বা টুয়েলভ ইয়ার্স আ স্লেভ ছবিগুলোর কথা। এমন আরও ছবি আছে। এবার নতুন করে যোগ হলো ওয়ানস আপন আ টাইম ইন...হলিউড। ব্র্যাড পিটের অভিনয়ের রেশ ছবি দেখে সিনেমা হল থেকে বেরোনোর পরেও আমি কাটাতে পারিনি।
মেধার অপচয়
তবে এই ছবির সবচেয়ে বড় মেধার অপচয় হয়েছে দুই জায়গায়। এক, মারগোট রোবি; দুই, আল পাচিনো। এই দুই শিল্পীর চরিত্র যে ছবিতে এতটা স্বল্প ব্যাপ্তির হবে, ধারণাই করতে পারিনি। আমি তো ‘শ্যারন টেট মার্ডার’ নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেছিলাম। কারণ, অভিনেত্রী শ্যারন টেট আমার কাছে একটা আইকন। ভেবেছিলাম এই ছবিতে খুব কাছ থেকে শ্যারন টেটের জীবন দেখা যাবে। তার ওপর মারগোট তো খুবই দারুণ অভিনেত্রী। সুইসাইড স্কোয়াড থেকে তাঁর ভক্ত আমি। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটি পেয়েও তাঁর মুখে হাতে গোনা কয়েকটা সংলাপ শুনে বেশ খারাপ লেগেছে। ‘বেচারি’ মারগোট মনে হয় একটামাত্র দৃশ্যই পেয়েছিলেন, যেখানে তিনি অভিব্যক্তি দিয়ে একটু অভিনয়ের চেষ্টা করেছিলেন, সেটা ছিল সিনেমা হলে নিজের ছবি দেখতে যাওয়ার দৃশ্যটা। এর বাইরে মারগোট রোবির চরিত্রটি শুধু ‘নায়িকা’ হয়েই থেকে গেছে ছবিতে। আর আল পাচিনোর মতো অভিনেতাকে তো ছবিতে দেখা গেছে ধূমকেতুর মতো। এলেন আর আকাশের অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন; যেখানে কিনা ছবির প্রচারের সময় এই সব তারকার নাম শুনে অনেক আগ্রহ বেড়েছিল।
ওই দিন পড়লাম কুয়েন্টিন টারান্টিনো পরিচালিত এই ৯ নম্বর ছবিটি নাকি গার্ডিয়ান পত্রিকার ‘একবিংশ শতাব্দীর সেরা ১০০’ ছবির তালিকায় উঠেছে। একদম যোগ্য ছবিটাই উঠেছে। কারণ, ইতিহাসের একটা এমন দুর্ধর্ষ হত্যাকাণ্ডকে একটা ‘ডার্ক কমেডি’র ছাঁচে ফেলে নতুন কিছু সৃষ্টি সবাই করতে পারে না। এমন বিচিত্র ধারণাকে সিনেমায় ফুটিয়ে তোলা সত্যিই দারুণ ব্যাপার।
অনুলিখন