হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বাংলা সংস্কৃতির এক অনন্য সম্পদ কবিগান, পালাগান। প্রায় বিলুপ্তির পথে আমাদের এই কবিগান-পালাগান। গ্রামেও এখন সচরাচর পালাগানের আসর বসে না। অনেকটা হারিয়ে যেতে বসা দেশীয় সংস্কৃতির এই অনন্য সম্পদকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের আয়োজনে বসল পালাগানের আসর। সঙ্গে কবির লড়াই। পালা কবি গানে অংশ নেন দেশের অন্যতম শিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি। তার প্রতিপক্ষ হিসেবে কবিগানের লড়াইয়ে ছিলেন তার পুত্র আবুল বাশার আব্বাসী।
আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বসেছিল এই আসর। এ পালার শিরোনাম ছিল ‘শিব বনাম নারদ’। সুর-ছন্দ আর যুক্তি-তর্কে তারা উপস্থাপন করেন হিন্দু পৌরাণিক এ কাহিনি।
জাতীয় জাদুঘরে বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া এই আয়োজনের শুরুতেই ছিল ‘বাংলাদেশের পালাগান রূপ ও বৈশিষ্ট্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। স্বাগত বক্তৃতা দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। তিনি বলেন, জাদুঘর এখন নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। পালাগান নিয়ে এই আয়োজন একটি নতুন ধারার সংযোজন। এভাবে ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করাই জাদুঘরের কাজ।
এরপরেই লেখক আহমদ মাযহারের সঞ্চালনায় দেশের পালাগানের তথ্যসমৃদ্ধ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতা দেন জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি এম. আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, সুফি সাধকেরা বিশ্বকে দেখেন, মানুষকে দেখেন, স্রষ্টাকে দেখেন। এই সাধকদের পালাগান-কবিগান আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী এই ধারাকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানের পরই ছিল হারিয়ে যেতে বসা পালা গানের এ আসরের ‘শিব বনাম নারদ’ শীর্ষক কবিগানের পাল্লা বা লড়াই-পালা গানের পরিবেশনা।
পালা শুরুর আগে সাইদুর রহমান বয়াতি বলেন, তিনি খুব দুর্বিষহ জীবন পেরিয়ে এসেছেন। এখানে পালা গাইতে এসে খুব আনন্দিত। এখানে এসে তিনি জারি-সারিসহ অন্যান্য ধারার গান গাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিলুপ্তপ্রায় পালাগানের ঐতিহ্যবাহী ধারাটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন।
এরপরেই সাইদুর রহমান বয়াতি বাংলাদেশের পালার রূপবৈচিত্র্য ও পরিবেশনার আঙ্গিক ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, কবিগানের পালা শুরু হয় একটি টপ্পা গান পরিবেশনের মাধ্যমে। টপ্পার ওপর নির্ভর করেই পুরো পালাটি পরিবেশিত হয়। টপ্পার পর থাকে গুরু বন্দনা, এরপর পাঁচালি। এভাবেই তিনি পালাগানের নিয়মকানুন জানিয়ে শুরু করেন পালার পরিবেশনা। ‘আমি কবি-কাব্যে সাজলাম নারদ, তুমি পঞ্চানন’ টপ্পা গান দিয়ে পালা শুরু করেন আবুল বাশার আব্বাসী। যুক্তি ও ছন্দের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলে মামা-ভাগ্নের ঘটনা অবলম্বনে রচিত রূপক এই পালা।
পালায় সাইদুর রহমান বয়াতির সঙ্গে অংশ নেন দলের আটজন সদস্য। পালায় প্রতিপক্ষের শিল্পী ছিলেন সাইদুর রহমান বয়াতির পুত্র আবুল বাশার আব্বাসী। তাদের সঙ্গে যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন মতিয়ার রহমান, আব্দুল আলিম, উকিল উদ্দিন, আব্দুল জলিল, আব্দুর রহমান ও নূরে আলম।